ড. আতিউর রহমান
‘বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতির ফলে ইতিমধ্যে দারিদ্র্য ও ব্যাপক বেকারের নিষ্পেষণে পতিত দেশগুলি তাহাদের পাঁচ হইতে ছয় শতাংশ উৎপাদন বৃদ্ধির হারসংবলিত পরিমিত উন্নয়ন পরিকল্পনা ছাঁটাই করার ভয়ানক আশঙ্কার হুমকিতে পতিত হইয়াছে। এই মুদ্রাস্ফীতির ফলে কেবলমাত্র উন্নয়ন প্রকল্পের খরচই বহুগুণ বাড়িয়া যায় নাই, উপরন্তু তাহাদের নিজস্ব সম্পদ কাজে লাগাইবার জন্য তাহাদের সামর্থ্যও প্রতিকূলভাবে কমিয়া গিয়াছে।…যে অর্থনৈতিক উত্তেজনা সম্প্রতি সমগ্র বিশ্বকে নাড়া দিয়াছে, তাহা একটি ন্যায়সঙ্গত আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা গড়িয়া তুলিয়া জরুরিভাবে মোকাবিলা করিতে হইবে।’ আগে থেকে জানা না থাকলে এই লাইন কয়েকটি পড়ে পাঠকের মনে হতে পারে, যেন সাম্প্রতিককালে প্রথমে করোনা আর তার পরপরই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে সংকটময় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা থেকে ছোট-বড় সব অর্থনীতিকে সুরক্ষা দেওয়ার পথনকশা দিচ্ছেন কেউ। আদতে এই বাক্যগুলো উচ্চারণ করেছিলেন আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণে। দেশজ অর্থনীতির সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতার বিষয়ে এমন সংবেদনশীলতা ছিল তাঁর স্বভাবজাত।
আজ প্রায় পাঁচ দশক পরে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা আবারও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। সেকালে বাংলাদেশ ছিল সদ্যঃস্বাধীন। যুদ্ধবিধ্বস্ত। তখন সামনে ছিল ওই ছাইভস্মের অর্থনীতিকে টেনে তোলার পাহাড়সম চ্যালেঞ্জ। আজ আমরা বিশ্বে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের রোল মডেল। অচিরেই স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশ হতে যাচ্ছি। তবে আজও কিন্তু আমাদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। আয়বৈষম্য, কর্মসংস্থানের অভাব, সামাজিক অস্থিতিশীলতা, সুশাসনের ঘাটতি এবং সর্বোপরি জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ তো আগে থেকেই ছিল। হালে করোনাজনিত ক্ষতি থেকে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার আর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জগুলোও সামনে এসেছে। তা ছাড়া আগের চেয়ে এখনকার বাংলাদেশ আরো বেশি করে বিশ্বায়নের সঙ্গে যুক্ত। উন্নত দেশের আর্থিক সংকটের ঢেউ দ্রুতই আমাদের অর্থনীতির গায়ে আছড়ে পড়ে। দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগের ওপর বড় রকমের প্রভাব ফেলে। তবে আমাদের রয়েছে স্বদেশি উন্নয়নের শক্ত জমিন, যার ভিত্তি বঙ্গবন্ধুই তৈরি করে দিয়ে গেছেন। এ কারণেই বঙ্গবন্ধুর দর্শন ও চিন্তাগুলো এখনো একইভাবে বা আরো বেশি প্রাসঙ্গিক আমাদের জন্য। তবে এটি মানতেই হবে যে সৌভাগ্যবশত এখন দেশ পরিচালিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর দর্শন আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রেখেই। আর চ্যালেঞ্জমুখর ও সম্ভাবনাময় এই অভিযাত্রায় নেতৃত্বের পরম্পরা যথেষ্ট শক্তি জুগিয়ে চলেছে।
বঙ্গবন্ধু বৈশ্বিক শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য বিশ্বভ্রাতৃত্ব আর পারস্পরিক সহযোগিতাকেই সঠিক পথ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন সব সময়। একই সঙ্গে জাতির নিজস্ব শক্তির ওপর ভর করে এগোনোর ওপরও জোর দিয়েছেন। শুরুতে যে ভাষণের কথা বলেছি, সেখানেও তিনি বলেছিলেন, ‘নতুন বিশ্বের অভ্যুদয় ঘটিতেছে। আমাদের নিজেদের শক্তির উপর আমাদের বিশ্বাস রাখিতে হইবে। আর লক্ষ্য পূরণ এবং সুন্দর ভাবীকালের জন্য আমাদের নিজেদেরকে গড়িয়া তুলিবার জন্য জনগণের ঐক্যবদ্ধ ও সমন্বিত প্রয়াসের মাধ্যমেই আমরা আগাইয়া যাইব।’ বঙ্গবন্ধু তাঁর সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে তাই বহিস্থ বন্ধুদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে দেশের ‘আত্মশক্তি’র ওপর ভর করে নিজস্ব ঢংয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি বিদেশি উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতার এক গ্রহণযোগ্য নীতিকৌশল গ্রহণ করেছিলেন। তাই অর্থনীতি পুনর্গঠনের সেই সংকটকালে যথেষ্ট বিদেশি সহায়তাও তাঁর সরকার নিশ্চিত করতে পেরেছিল। এই যে খোলা অর্থনৈতিক কূটনীতি পরিচালনার ঐতিহাসিক ভিত্তি তিনি তৈরি করেছিলেন, তার সুফল বাংলাদেশ পেতে শুরু করেছিল। পারস্পরিক সম্মানের সঙ্গে বিদেশি নীতি ও বিদেশি অর্থনৈতিক সহযোগিতার যে পথনকশা তিনি তৈরি করে দিয়েছিলেন, তা হঠাৎ করে থমকে দাঁড়াল ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট। এরপর অর্থনৈতিক দর্শন ও ব্যবস্থাপনায় আসে ব্যাপক পরিবর্তন। উন্নয়ন নীতিমালায় পরিকল্পিত কৌশল বাদ পড়ে। স্বল্পমেয়াদি অপরিকল্পিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনাই মুখ্য বিবেচনায় চলে আসে। দেশে প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও বৈষম্য বাড়তে শুরু করে। দারিদ্র্যও বাড়তে থাকে। এর প্রভাব পড়ে সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর। দেশ চলে যায় স্বৈরশাসনের দিকে। বাড়তে থাকে সব ধরনের বিভাজন, অসাম্য।
পরবর্তী সময়ে গণতান্ত্রিক শাসনের পক্ষে ব্যাপক গণ-আন্দোলন দানা বাঁধে। নব্বইয়ে গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতার পালাবদল ঘটে। সংসদীয় গণতন্ত্র ফিরে আসে। কিন্তু স্থানীয় ও জাতীয় সরকারের বিভিন্ন স্তরে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কার্যকর নেতৃত্ব কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে স্থাপন করা যায়নি। এরপর ফের প্রচ্ছন্ন সামরিক শাসনে দেশ চলে কিছুদিন। রাজনৈতিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। ২০০৮ সালের শেষ দিকে নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় আসে। ২০০৮-০৯-এর বিশ্ব আর্থিক সংকট কাটিয়ে বাংলাদেশ উঁচু হারে প্রবৃদ্ধি ও দারিদ্র্য নিরসন হার বজায় রেখে ভালোভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু এরই মধ্যে চলে আসে কভিড-১৯ মহাদুর্যোগ এবং তারপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। সারা বিশ্বেই দেখা দেয় সরবরাহ চেইনে বিশৃঙ্খলা। ফলে জ্বালানি তেল ও খাদ্য মূল্য বাড়তে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমের দেশগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করে। পাশাপাশি তারা তাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে মুদ্রানীতিকে সংকোচনমূলক করে ফেলে। তারা তাদের নীতি সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি বাগে আনতে গিয়ে উন্নয়নশীল ও বিকাশমান দেশের মুদ্রার মানে বড় আঘাত হানে। ডলারের দাম বাড়তে থাকে। এর প্রভাবে আমাদের মতো দেশের আমদানি মূল্য বিরাট হারে বেড়ে যায়। আমাদের টাকা তার মূল্য হারায় ২৫ শতাংশের বেশি। আমরা যে পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা আয় করছি তার চেয়ে ঢের বেশি মুদ্রা আমদানি খরচ মেটাতে এবং বিদেশি ঋণের কিস্তি ও সুদ শোধ করতেই চলে যাচ্ছে। বিনিময় হারে অস্থিতিশীলতা কমানো মুশকিল হয়ে গেছে। তবে আশার কথা হলো, ধীরে হলেও বাজারভিত্তিক বিনিময় হারের দিকেই হাঁটছে বাংলাদেশ। অবশ্য ধীরে চলার কারণে বিদেশি মুদ্রাবাজারে ‘স্পেকুলেটিভ’ আক্রমণও বেড়েছে। প্রবাসীরাও আশায় আছেন ভবিষ্যতে ডলারের দাম আরো বাড়বে। তাই তাঁরাও এক্ষুনি পুরো বৈদেশিক আয় আনুষ্ঠানিক পথে পাঠাচ্ছেন না। এর প্রভাবে প্রবাস আয় দ্রুত হারে বাড়ছে না।
এমন পরিস্থিতিতেই বাংলাদেশ আইএমএফের কাছ থেকে ৪.৭ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ঋণ কর্মসূচি সই করেছে। এর প্রথম কিস্তি চলেও এসেছে। আইএমএফ কর্মসূচি চালু হওয়ার কারণে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় বেশ কিছু শৃঙ্খলা ফিরে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সে কারণে বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও জাইকা বাংলাদেশে বেশি করে ঋণ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। তবে আইএমএফ বলেছে, তাদের ঋণ পেতে হলে বেশ কিছু শর্ত মানতে হবে। যেমন—আগামী বাজেটে ৬৫ হাজার কোটি টাকার বাড়তি রাজস্ব আদায়ের অঙ্গীকার করতে হবে। রাজস্ব ব্যবস্থায় ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। বাজেট ঘাটতি কমাতে হবে। সে জন্য বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলে ভর্তুকি কমাতে হবে। এরই মধ্যে এসবের দাম বাড়ানো হয়েছে। আরো বাড়ানো হবে। আর্থিক খাতেও সুশাসন ও বাজার নির্ভর লেনদেন ও সুদের হার নির্ধারণের পথে বাংলাদেশ ব্যাংককে হাঁটতে হবে। হালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুটি ব্যাংক যেভাবে পড়ে গেল, তাতে আমাদের দেশে গুজবের কারখানা চাঙ্গা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ গুজব অঙ্কুরেই বিনষ্ট করে দেওয়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংককে সুদৃঢ় অবস্থান নিতে হবে। গুজবকারীদের শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সমাজ ও সরকারকে খুবই সচেতন ও সক্রিয় থাকতে হবে। সাধারণ মানুষের জন্য সামাজিক সুরক্ষার পরিমাণ বাড়াতে হবে। এসবই ইতিবাচক নীতি পরামর্শ। দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদরা এসব নীতি সংস্কারের কথা বলে আসছিলেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, বাংলাদেশের অর্থনীতির নানা বিভাগে আলাদা করে এসব সংস্কারের আলাপ হচ্ছে। বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে। কিন্তু সবচেয়ে ভালো হতো যদি অর্থনীতির সব বিভাগকে সুসংগঠিত করে কেন্দ্রীয়ভাবে নীতি সমন্বয় করা যেত। আসন্ন বাজেট বক্তৃতায় সমন্বয়ের এই ঘাটতি কিভাবে পূরণ করা হবে তার একটি পথনকশা মাননীয় অর্থমন্ত্রী নিশ্চয়ই দিতে পারেন।
এই প্রেক্ষাপটে আমাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার চ্যালেঞ্জগুলো বিষয়ে আরো নীতি-সংবেদনশীলতা দেখানো দরকার বলে মনে করি। নিঃসন্দেহে মূল্যস্ফীতি বাগে আনাই এই মুহূর্তে অর্থনীতির অংশীজনদের, বিশেষ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পয়লা নম্বর অগ্রাধিকার হওয়ার কথা। উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশের বেশির ভাগ কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ কাজেই ব্যস্ত। এমনকি আমাদের পাশের দেশ ভারতও সার্বিক চাহিদা ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দিয়ে গত ১১ মাসে মূল্যস্ফীতি ১৮ শতাংশ কমাতে সক্ষম হয়েছে। মূলত সুদের হার বাড়িয়েই তারা এটি করতে পেরেছে। এর বিপরীতে আমরা মাত্র ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি এই সময়টায় কমাতে পেরেছি। সর্বশেষ মূল্যস্ফীতি আবার ঊর্ধ্বমুখী। তাই পাশের দেশের মুদ্রানীতি থেকে আমাদের যথেষ্ট শেখার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক মনে হয় সে কারণেই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আরবিআই পরিদর্শনে পাঠাতে উদ্যোগী হয়েছে। অন্যদিকে ফিসক্যাল ডেফিসিট তথা রাজস্ব ঘাটতিও ধীরে ধীরে বাড়ছে। এই বাস্তবতায় অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারকদের সারা বিশ্বের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের সাম্প্রতিক ‘সাকসেস স্টোরি’গুলো ভালো করে অনুধাবন করে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
শুধু টাকার অবমূল্যায়নের কারণে সব উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ২৫ থেকে ২৭ শতাংশ বেড়ে গেছে। আর প্রতিটি টাকা খরচের মাঝে অন্তত ১৫ থেকে ২০ শতাংশ আমদানি পরিশোধ তথা ডলার খরচের দায় আছে। তাই ভোগ ও আমদানি নির্ভর এই প্রবৃদ্ধির গতি আগের মতো সচল রাখা বেশ মুশকিলই হচ্ছে। অবকাঠামোসহ সব উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণে তাই সাবধান থাকতে হবে। কার্যকর সম্ভাব্যতা যাচাই করেই যেন খুব সাবধানে প্রকল্প গ্রহণ করা হয় সেদিকে খেয়াল রাখা খুব জরুরি হয়ে পড়েছে।
সর্বত্রই এখন নিয়ন্ত্রণের সংস্কৃতির পোয়াবারো। মার্কেটের সিগন্যাল নিয়ে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপকদের যথেষ্ট অস্বস্তি আছে। চাহিদা ও সরবরাহের গরমিলে যেসব পণ্য বা সার্ভিসের দাম বাড়ে বা কমে, এ কথাটি তাঁরা বুঝতেই রাজি নন। গায়ের জোরে দাম ঠিক করে দিলে যে পণ্য বা সার্ভিস সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিতে পারে, তা তাঁরা স্বীকার করতে চান না। আর্থিক বাজারেও এই নিয়ন্ত্রণের ঝোঁক বেশ প্রবল। এর ফলে তারল্য সংকট, আমানত সংগ্রহ, ঋণ বিতরণ, টাকা-ডলার লেনদেন ব্যবস্থা, হুন্ডির দৌরাত্ম্য, বাজারদরে সিন্ডিকেটের প্রাধান্যের কথাবার্তাসহ নানা বিষয় আমাদের কানে আসে। ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ডলার পেতে যে ভোগান্তি, প্রবাস থেকে ডলার পাঠাতে গিয়ে স্পেকুলেশন, ডলার মজুদ করার প্রবণতা, টাকা পাচারের শোরগোল—এসবেরই উৎপত্তি বাজারনির্ভর অর্থনীতির সচলতার অভাব থেকে। তাই বিনিময় হার ও সুদের হার যত তাড়াতাড়ি বাজারভিত্তিক করা যাবে, ততই মঙ্গল।
এই চ্যালেঞ্জগুলো যদি আমরা স্বীকার করি, তাহলেই এসব থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে পাব। এখনো সময় আছে, আমরা যেন বদলে যাওয়া এই বিশ্বে টিকে থাকার জন্য জ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর অর্থনৈতিক নীতি প্রণয়ন ও ব্যবস্থাপনার দিকে আরো বেশি মনোযোগী হই। এ ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা—দুই-ই আছে, থাকবে। জ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানবসমাজের ভালো বা মন্দ দুই-ই সাধন করা যায়। এ ক্ষেত্রে মূল নিয়ামক হলো রাজনৈতিক সদিচ্ছা। আশার কথা এই যে আমাদের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে সেই সদিচ্ছার অভাব নেই। সেখান থেকে যে পথনকশা আমাদের সামনে হাজির করা হয়েছে, তা বাস্তবায়নে যার যার জায়গা থেকে নিষ্ঠার সঙ্গে এবং ঐক্যবদ্ধভাবে প্রচেষ্টা চালালে চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করে সম্ভাবনাগুলোকে বাস্তবে রূপ দেওয়া খুবই সম্ভব।
লেখক : অর্থনীতিবিদ
সূত্র: কালের কণ্ঠ