কবি, গল্পকার ও রাজনীতিবিদ প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক আবু বকর সিদ্দিক আর নেই। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ৯১ বছর।
বৃহস্পতিবার ভোর পৌনে ছয়টার দিকে খুলনা নগরীর ৫ নম্বর মুন্সিপাড়ায় নিজের ছোট বোনের বাসভবনে প্রয়াত হন তিনি। এই কবির ছোট বোনের ছেলে মো. শরিফুল ইসলাম বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
পারিবারিক সূত্র জানায়, আজ বাদ জোহর খুলনার শহীদ হাদিস পার্কে কবির নামাজে জানাজা সম্পন্ন হবে। মৃত্যুকালে কবি ৫ মেয়ে ও ১ ছেলেসহ অসংখ্য শুভাকাঙ্ক্ষী-সুহৃদ ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
আবু বকর সিদ্দিক একাধারে ছিলেন কবি, কথাসাহিত্যিক, ছড়াকার, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার ও সমালোচক। ১৯৩৪ সালে ১৯ আগস্ট রোববার বাগেরহাটের গোটাপাড়া গ্রামে মাতুলালয়ে তার জন্ম। একই জেলার বৈটপুর গ্রামে তার পৈতৃক নিবাস। বাবা মতিয়র রহমান পাটোয়ারী ছিলেন একজন সরকারি চাকরিজীবী।
বাবার চাকরি সূত্রে ১৯৩৫ সাল থেকে হুগলি শহর ও ১৯৪৩ সাল থেকে বর্ধমানে বসবাস করেন তিনি। বাল্যকাল থেকেই পড়াশুনার প্রতি তার প্রবল ঝোঁক ছিল। ১৯৪৬ সালে পঞ্চম শ্রেণিতেই তার প্রথম কবিতা আবদুস সাত্তার সম্পাদিত ‘বর্ধমানের কথা’ পত্রিকায় ছাপা হয়।
বাগেরহাট মাধ্যমিক সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে তিনি ১৯৫২ সালে ম্যাট্রিকুলেশন, ১৯৫৪ সালে বাগেরহাট সরকারি পিসি কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট ও একই কলেজ থেকে ১৯৫৬ সালে স্নাতক সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বাংলা বিভাগে ভর্তি হন এবং ১৯৫৮ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন তিনি।
পেশাগত জীবনে শিক্ষকতাকেই পেশা হিসেবে বেছে নেন। পর্যায়ক্রমে চাখার ফজলুল হক কলেজ, দৌলতপুর বিএল কলেজ, কুষ্টিয়া কলেজ, বাগেরহাট পিসি কলেজ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন তিনি।
১৯৯৪ সালের ৭ জুলাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। এরপর কুইন্স ইউনিভার্সিটি ও ঢাকার নটর ডেম কলেজে অধ্যাপনা করেন।
কবিতা লিখতে বেশি ভালোবাসতেন তিনি। তার প্রকাশিত ‘ধবল দুধের স্বরগ্রাম’ (১৯৬৯), ‘বিনিদ্র কালের ভেলা’ (১৯৭৬), ‘হে লোকসভ্যতা’ (১৯৮৪), ‘মানুষ তোমার বিক্ষত দিন’সহ (১৯৮৬) ১৮ কাব্যগ্রন্থ আছে। আছে হট্টমালা (২০০১) নামে একটি ছড়াগ্রন্থও।
তার লেখা গল্পগ্রন্থের সংখ্যা ১০টি। ‘জলরাক্ষস’ (১৯৮৫), ‘খরাদাহ’, ‘একাত্তরের হৃদয়ভস্ম’, ‘বারুদপোড়া প্রহর’ (১৯৯৬) নামে উপন্যাসও লিখেছেন এই কথাসাহিত্যিক।