কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) একুশ শতকের বিজ্ঞান, প্রযুক্তির এক আশ্চর্য আবিষ্কার। মানুষ পরিশ্রম করে যে কাজ করতে পারে, অনায়াসেই তার অধিকাংশ করে ফেলছে এআই। এই প্রযুক্তি যেন জগতে নিয়ে এসেছে রক্তমাংসের মানুষের বিকল্প।
এআই আবিষ্কারের ফলে বিভিন্ন কাজ আগের চেয়ে অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে। আইটি সেক্টরে শুরু হয়েছে কর্মীছাঁটাই। যন্ত্রের মাধ্যমে যে কাজ সহজেই হয়ে যাচ্ছে ,তার জন্য পারিশ্রমিক দিয়ে কর্মচারী রাখতে চাইছেন না সংস্থার মালিকেরা। মানুষের কাজ কম সময়ে নিখুঁত ভাবে করে দিচ্ছে এআই।
এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে এ বার আস্ত এক মডেল বানিয়ে ফেলেছেন বিজ্ঞানীরা। আইতানা স্পেনের প্রথম এআই মডেল। সে যে রক্তমাংসের মানুষ নয়, ছবি দেখে বা তার সঙ্গে কথা বলে তা বোঝার উপায় নেই।
অপরূপ সুন্দরী স্পেনের এআই কন্যা আইতানা। তার মাথাভর্তি ঘন ঢেউখেলানো গোলাপি রঙের চুল। পিঠ পর্যন্ত এলিয়ে রাখা সেই চুল বার্বি পুতুলের কথা মনে করিয়ে দেয়।
আইতানার সাজপোশাক, ঝকঝকে ত্বক মানুষের মতোই। তাতে যন্ত্র বা প্রযুক্তির লেশমাত্র খুঁজে পাওয়া যায় না। হলিউডের তাবড় মডেলকেও হার মানাবে আইতানার দীপ্তি।
এ হেন এআই কন্যা ইন্টারনেটে দু’হাত ভরে রোজগার করছে। এখনই মাসে তার আয় ন’হাজার ইউরো। ভারতীয় মুদ্রায় যা ন’লক্ষ টাকার সমান। টাকা যাচ্ছে আইতানার স্রষ্টাদের ঝুলিতে।
ডিজ়াইনার এবং এআই বিশেষজ্ঞদের একটি দল বছরের পর বছর ধরে পরিশ্রম করে আইতানাকে গড়ে তুলেছেন। সে এখন ২৫ বছর বয়সি মডেল এবং নেটপ্রভাবী। সমাজমাধ্যমে তার ভক্তের সংখ্যা ১২ কোটির বেশি।
ফোটোশপেই তৈরি করা হয়েছে আইতানার নকশা। তার পর তার মধ্যে ব্যক্তিত্ব, উপস্থিতি এবং জীবনযাত্রার বৈশিষ্ট্য জুড়ে দেওয়া হয়েছে। বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে তার কাজ।
ইন্টারনেটে প্রভাবী হিসাবে মূলত তিনটি কাজ করে থাকে আইতানা। অর্থাৎ, তিনটি বিষয়ে উপদেশ দিয়ে থাকে। যা দেখে বহু মানুষ তার মতো সেই কাজই করেন।
মাদ্রিদে সপ্তাহান্তে ছুটি কাটানোর জন্য বিভিন্ন আকর্ষণীয় জায়গায় নিয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে আকর্ষণীয় গেমিং সেশনের খোঁজ দেওয়া আইতানার কাজের মধ্যে পড়ে। নিজের সমাজমাধ্যমের পাতায় পশ্চিম এবং প্রাচ্যের সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটায় সে।
আইতানার সাফল্য তার নির্মাতাদের এই কাজে উদ্বুদ্ধ করেছে। আরও একটি এআই মডেল তৈরি করার কাজে হাত দিয়েছেন তাঁরা। নতুন সেই মডেলের নাম দেওয়া হবে মাইয়া।
নির্মাতারা জানিয়েছেন, আইতানার সঙ্গে মাইয়ার চারিত্রিক কিছু তফাত থাকবে। সে হবে তুলনামূলক ভাবে বেশি লাজুক। তার কাজও আইতানার চেয়ে আলাদা হবে। মাইয়ার মাধ্যমে আরও বেশি অর্থ উপার্জনের আশা করছেন নির্মাতারা।
স্পেনের এআই কন্যাদের সাফল্য যত মাথাচাড়া দিচ্ছে, মার্কেটিং ইন্ডাস্ট্রিতে কর্মরতরা তত বেশি সঙ্কটের ছায়া দেখতে পাচ্ছেন। অনেকেই মনে করছেন, প্রযুক্তি এ ভাবেই যদি এগোতে থাকে, তবে অদূর ভবিষ্যতে কাজ করার জন্য মানুষের আর প্রয়োজন হবে না।
কর্মচারীদের নিয়ে যে কোনও সংস্থায় যে সমস্যাগুলি তৈরি হয়, এআই কর্মী নিয়োগ করলে তা আর থাকবে না। অর্থ সাশ্রয় হবে, বাঁচবে সময়। সে দিক থেকে পরিস্থিতি বিবেচনা করে অনেক সংস্থাই আগামী দিনে পুরোপুরি এআই নির্ভর হয়ে উঠবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের একাংশ আইতানার সমালোচনায় মুখর হয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, এ ভাবে এআই দিয়ে মডেল তৈরি করে অবাস্তব সৌন্দর্যের একটি মাপকাঠি তৈরি করা হচ্ছে। ডিজিটাল ব্যক্তিত্বকে অতিরিক্ত যৌনতার ছোঁয়ায় উপস্থাপিত করা হচ্ছে। যা মানব সভ্যতার পক্ষে ক্ষতিকর।
তবে আইতানার নির্মাতারা এই যুক্তি মানতে রাজি হননি। তাঁদের দাবি, তাঁরা কোনও সৌন্দর্য তৈরি করেননি। বর্তমানে যে সৌন্দর্য রয়েছে, সেই আসলেরই প্রতিফলন ঘটেছে তাঁদের সৃষ্টিতে।