আর্টেমিস মিশন শুরু করেছে আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। এই প্রকল্পে হাত মিলিয়েছে নয়াদিল্লি। ইসরো সম্প্রতি নাসার আর্টেমিস চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে।
চাঁদে প্রথম মহাকাশচারী পাঠিয়েছিল নাসা-ই। ১৯৬১ সালের অ্যাপোলো মিশনের ৫০ বছর পর নতুন করে চাঁদে মানুষ পাঠানোর বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছে তারা। সেই উদ্দেশ্যেই শুরু হয়েছে মিশন আর্টেমিস।
এই আর্টেমিস মিশনের তিনটি ধাপ রয়েছে। প্রথম ধাপে (আর্টেমিস-১) ইতিমধ্যেই চাঁদে পাড়ি দিয়েছে যাত্রীবিহীন মহাকাশযান ‘ওরিয়ন’। এই অভিযানের মূল লক্ষ্য, চাঁদের মাটিতে নামার জন্য সম্ভাব্য ‘ল্যান্ডিং সাইট’গুলি চিহ্নিত করা।
দ্বিতীয় ধাপে অর্থাৎ ‘আর্টেমিস-২’তেও একই ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা চলবে। তা সফল হলে তৃতীয় ধাপে চাঁদের উদ্দেশে পাড়ি দেবেন মহাকাশচারীরা। কারা সেই অভিযানে শামিল হবেন, তা-ও ঠিক করা হয়ে গিয়েছে।
নাসার আর্টেমিস চুক্তিতে ভারতের স্বাক্ষর আলাদা তাৎপর্য বহন করছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো এই চুক্তির ফলে আগামী দিনে আর্টেমিস মিশনের অংশীদার হতে পারে।
নাসার সঙ্গে কয়েক বছর আগেই ইসরো ‘আর্থ অবজ়ারভেশন’ উপগ্রহ ‘নিসার’ বানানোর উদ্যোগে হাত মিলিয়েছিল। এ বার আর্টেমিসের হাত ধরে চাঁদে অভিযানে ইসরোকেও দেখা যেতে পারে।
শুধু চাঁদ নয়, আগামী দিনে নাসার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ইসরো মঙ্গল অভিযানেও শামিল হতে পারে। ভারতের মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে যা যুগান্তকারী অগ্রগতি নিয়ে আসবে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমেরিকা সফরের সময়েই আর্টেমিস চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে ইসরো। এই চুক্তিতে ভারত ছাড়া আরও সাতটি দেশ স্বাক্ষর করেছে। আর্টেমিসের হাত ধরে ২০২৪ সালে চাঁদে মানুষ পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে নাসা।
নাসার আর্টেমিস চুক্তি এবং তাতে একের পর এক দেশের স্বাক্ষরকে ভাল চোখে দেখছে না চিন। তাদের কাছে আর্টেমিস চুক্তি হল মহাকাশে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য আমেরিকার একটি চাল। ভারতও যাতে শামিল হয়েছে।
চিনের দাবি, আর্টেমিসের মাধ্যমে আমেরিকা তাদের বাণিজ্যিক স্বার্থ চরিতার্থ করার চেষ্টা করছে। সম্ভাব্য বিপদের কথা ভাবছে না। ভারত আমেরিকার এই প্রয়াসে হাত মিলিয়ে বিশ্বের ক্ষতিসাধন করতে চলেছে।
আর্টেমিস চুক্তি বেজিংয়ের সঙ্গে নয়াদিল্লির সম্পর্কে নতুন করে তিক্ততা যোগ করতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। এমনিতেই দুই দেশের সীমান্ত পরিস্থিতি উত্তপ্ত। মহাকাশের ‘দখল’ নিয়ে আমেরিকার সঙ্গ দেওয়ায় ভারত চিনের বিরাগভাজন হতে পারে বলেও মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
আর্টেমিস নিয়ে খুশি নয় রাশিয়াও। এই চুক্তিকে প্রথম থেকেই আমেরিকাকেন্দ্রিক বলে দাবি করে এসেছে রাশিয়া। অন্য স্বাক্ষরকারী দেশগুলি এতে পর্যাপ্ত গুরুত্ব পাবে না বলে দাবি মস্কোর।
আর্টেমিস চুক্তিতে মহাকাশের শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। সেখানেই আমেরিকা জোর খাটাতে পারে বলে মনে করছে রাশিয়া। ২০২১ সালেই তারা এই চুক্তিতে স্বাক্ষর না করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছিল।
রাশিয়া জানিয়েছে, চাঁদে গবেষণা এবং অভিযান নিয়ে অন্য দেশের সহায়তা করতে তারা রাজি। কিন্তু এ বিষয়ে নিজের মতো করে তারা পদক্ষেপ করতে চায়। সুতরাং, আর্টেমিস চুক্তিতে ভারতের স্বাক্ষরের বিরোধিতা করতে পারে মস্কো।
রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক কখনওই তেমন তিক্ত হয়নি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে আমেরিকা-সহ পশ্চিমের দেশগুলি যখন মস্কোর বিরুদ্ধে একাধিক পদক্ষেপ করেছিল, তখনও নয়াদিল্লি রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ করেনি।
অনেকে মনে করছেন, আর্টেমিস চুক্তিকে কেন্দ্র করে ভারতের সঙ্গে মহাকাশ সংক্রান্ত যাবতীয় উদ্যোগ থেকে পিছিয়ে আসতে পারে রাশিয়া। পুতিন চটলে সে ক্ষেত্রে দিল্লিকে প্রমাদ গুনতে হতে পারে।