নব্বইয়ের দশক। এখনের মতো তখনও কান পাতলেই শোনা যেত বলিউডের অন্দরের মুচমুচে প্রেমকাহিনি। সমাজমাধ্যমের অস্তিত্ব না থাকায় অভিনেতা-অভিনেত্রীদের রসায়নের খবর পেতে সিনেমা পত্রিকা এবং কানাঘুষোর উপরই ভরসা রাখতেন সিনেপ্রেমীরা। সেই সময় যে কয়েক জন অভিনেতা-অভিনেত্রীর সম্পর্কের গুঞ্জন বলিমহলে হাওয়া পেয়েছিল, তার মধ্যে অন্যতম ছিল নানা পাটেকর এবং মনীষা কৈরালার প্রেমকাহিনি।
নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি বয়সে ২০ বছরের বড় নানার প্রেমে পড়েন মনীষা। অনেক দিন চুটিয়ে প্রেম করেন। কিন্তু সেই সম্পর্ক বিয়ে অবধি গড়ায়নি। বিয়ের ঠিক আগে ভেঙে যায় সম্পর্ক।
গুঞ্জন ছিল, নানা-মনীষার প্রেম পূর্ণতা না পাওয়ার নেপথ্যে ছিলেন সে সময়ের অন্য এক জনপ্রিয় বলি অভিনেত্রী। নানার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর মনীষা সেই অভিনেত্রীকে পরোক্ষে কুকথা শুনিয়েছিলেন বলেও শোনা যায়। কিন্তু কে ছিলেন সেই অভিনেত্রী? কেনই বা তাঁর জন্য নানা এবং মনীষার প্রেম ভাঙে?
১৯৯৬ সালে পরিচালক পার্থ ঘোষের ছবি ‘অগ্নিসাক্ষী’তে একসঙ্গে অভিনয় করছিলেন নানা এবং মনীষা। সেই ছবিই ছিল তাঁদের একসঙ্গে করা প্রথম ছবি।
সেই সময় অভিনেতা বিবেক মুশরানের সঙ্গে সদ্য সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন মনীষা। শোনা যায়, ‘অগ্নিসাক্ষী’র শুটিং চলাকালীন নানার ব্যক্তিত্ব এবং অভিনয় করার ক্ষমতার প্রতি আকৃষ্ট হন মনীষা। অভিনেত্রীর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হন নানাও। লুকিয়ে দেখা করতে শুরু করেন তাঁরা।
‘অগ্নিসাক্ষী’ মুক্তির পর সঞ্জয় লীলা ভনসালির ‘খামোশি’ ছবিতেও একসঙ্গে অভিনয় করেন নানা এবং মনীষা। সেই ছবিটিও মুক্তি পেয়েছিল ১৯৯৬ সালে। তত দিনে তাঁদের প্রেম আরও এক ধাপ এগিয়ে গিয়েছিল।
‘খামোশি’ ছবির মুক্তির পর নানা এবং মনীষার সম্পর্কের গুঞ্জনে ভরে যেতে থাকে সিনেমা পত্রিকাগুলির পাতা।
মনীষার প্রতিবেশীরা এমনও দাবি করেছিলেন, নানাকে অনেক বার ভোরের আলো ফোটার আগে অভিনেত্রীর বাড়ি থেকে বেরোতে দেখা গিয়েছে।
এমনটাও শোনা যায়, নানাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন মনীষা। কিন্তু নানা আগে থেকেই বিবাহিত ছিলেন। তাঁর স্ত্রী নীলকান্তি পটেকরও বিচ্ছেদে রাজি ছিলেন না।
এর পর নানাকে বার বার বিবাহবিচ্ছেদের জন্য চাপ দিতে থাকেন মনীষা। কিন্তু ‘আজ করব, কাল করব’ বলে কাটিয়ে দিচ্ছিলেন নানা।
এর মধ্যেই নানার সঙ্গে অন্য এক অভিনেত্রীর সম্পর্কের কথা কানে আসে মনীষার। সেই অভিনেত্রী ছিলেন আয়েশা জুলকা। যদিও মনীষার কাছে বিষয়টিকে গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন নানা।
নানা আশ্বস্ত করার পরও নাকি আয়েশাকে নিয়ে সন্দীহান ছিলেন মনীষা। কোনও ভাবেই নাকি তাঁর মন থেকে সন্দেহ দূর হচ্ছিল না।
এই সময় এক দিন মুম্বইয়ের একটি স্টুডিয়োয় শুটিং করছিলেন নানা। একই স্টুডিয়োতে অন্য একটি ছবির জন্য অভিনয় করছিলেন আয়েশাও। খবর পেয়ে আচকমা শুটিং ফ্লোরে পৌঁছে যান মনীষা। সেখানে পৌঁছে নাকি ‘সর্ষের মধ্যে ভূত’ খুঁজে পান মনীষা।
শোনা যায়, ওই শুটিং ফ্লোরের একটি ঘরে আয়েশা এবং নানাকে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় ধরে ফেলেন মনীষা। কাঁদতে কাঁদতে তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে যান। এর পরই সাংবাদিকদদের কাছে গিয়ে আয়েশার নাম না করে বিষোদ্গার করেন মনীষা। মনীষা বলেন, ‘‘ওই কুকুরটার উচিত ছিল আমার প্রেমিকের থেকে দূরে থাকা।’’
নানা এবং মনীষার মধ্যেও দূরত্ব বাড়তে থাকে। তাঁদের সম্পর্ক আর কখনও জোড়া লাগেনি।
সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার অনেক বছর পরও এক সাক্ষাৎকারে মনীষার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হতে দেখা গিয়েছিল নানাকে। নানা বলেছিলেন, ‘‘মনীষা তাঁর দেখা সবচেয়ে সংবেদনশীল অভিনেত্রী।’’ মনীষাকে কস্তুরীমৃগের সঙ্গেও তুলনা করেছিলেন তিনি।