The news is by your side.

মধ্যরাতে বিস্ফোরণ হয়েছে ৩০টি মর্টার শেল, কাঁপল টেকনাফ

0 74

 

কক্সবাজারের টেকনাফের জিম্বংখালী সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে অন্তত ৩০টি মর্টার শেলের বিস্ফোরণ হয়েছে। রাত ১২টার পর থেমে থেমে বিস্ফোরণে টেকনাফের গোটা এলাকা কেঁপে ওঠে। লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়।

সূত্রের দাবি, জিম্বংখালী বিওপির বিপরীতে দেড় কিলোমিটার দূরে মিয়ানমারের জিবিং অং এবং চার থেকে পাঁচ কিলোমিটার ভেতরে হারিংগাচরের মারিক্কমপাড়া এলাকায় এসব বিস্ফোরণ হয়। সেখানে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সঙ্গে আরাকান আর্মির সদস্যদের তুমুল সংঘর্ষ হচ্ছে। এরই প্রভাবে যে কোনো সময় বিজিপি সদস্যদের বাংলাদেশে আবারও ঢুকে পড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

গতকাল রাত থেকে টেকনাফের হ্নীলার কাস্টমস ঘাট সীমান্তে থেমে থেমে গোলার শব্দ পাওয়া যায়। অন্তত চার দফায় মর্টার শেলের শব্দ পাওয়া যায়। টেকনাফ সীমান্তের ওপারে অনেক বিজিপি সদস্য বাংলাদেশে ঢোকার জন্য চেষ্টা করছে– এমন গুঞ্জন ছিল দিনভর। তবে রাত ১টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ওই সীমান্ত হয়ে কোনো বিজিপি সদস্য ঢোকেনি।

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্তের ওপার থেকে গতকাল গোলাগুলির তেমন শব্দ শোনা যায়নি। তবে উখিয়ার সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের অভ্যন্তর থেকে বুধবার রাতের পরও কয়েক দফায় বিকট গোলার শব্দ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া মর্টার শেলের শব্দেও কেঁপে ওঠে আশপাশের এলাকা। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে ঘুমধুম সীমান্তের নয়াপাড়া বিলে একটি অবিস্ফোরিত মর্টার শেল কুড়িয়ে পায় স্থানীয় শিশুরা। যেখানে মর্টার শেল পাওয়া যায়, সেখান থেকে মিয়ানমার সীমান্তের দূরত্ব মাত্র ১০০ মিটার।

বিদ্রোহী আরাকান আর্মির সঙ্গে সংঘাতে টিকতে না পেরে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ৩৩০ সদস্যের মধ্যে ১০০ জনকে তুমব্রু থেকে টেকনাফে স্থানান্তর করা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টার দিকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তাদের টেকনাফের হ্নীলা আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাখা হয়েছে। এখানে আশ্রয় নেওয়া সদস্যদের মধ্যে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি), সেনাবাহিনী ও শুল্ক বিভাগের সদস্য রয়েছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) বলছে, প্রশাসনিক সুবিধার কথা বিবেচনা করে তাদের স্থানান্তর করা হয়েছে।

ঘুমধুম ও তুমব্রুতে গোলাগুলি কিছুটা কমলেও সীমান্তের পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনও বন্ধ। তবে যারা গোলাগুলির কারণে দূর-দূরান্তে আত্মীয়স্বজনের বাসায় গিয়েছিলেন, তাদের অনেকেই ফিরতে শুরু করেছেন। একটি সূত্র বলছে, নয়াপাড়া বিলে অবিস্ফোরিত মর্টার শেলটি আরএল গোলা। এটি মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হতে পারে। ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, দুপুরে শিশুরা লাকড়ি কুড়াতে গিয়ে মর্টার শেলটি পায়। দ্রুত ঘটনাটি জানাজানি হয়। এলাকার লোকজন গিয়ে দেখেন, শেলটি অবিস্ফোরিত। পরে বিজিবি সেটি হেফাজতে নেয়। এর পর সেনাবাহিনীর বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দলকে খবর দেওয়া হয়। ছৈয়দ আকবর নামের এক বাসিন্দা জানান, মঙ্গলবার রাতে শেলটি পড়ে ছিল। বুধ ও বৃহস্পতিবার কোনো মর্টার শেলের শব্দ শোনা যায়নি।

হ্নীলা সীমান্তে থেমে থেমে গোলা ফাটছে

সীমান্তের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে হ্নীলার কাস্টমস ঘাট সীমান্তে চার দফায় মর্টার শেলের শব্দ পাওয়া গেছে। টেকনাফ-২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, এখন পর্যন্ত শতাধিক রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঠেকানো হয়েছে। একজন রোহিঙ্গাকেও ঢুকতে দেওয়া হবে না। বিজিবি সতর্ক রয়েছে।

হ্নীলার আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ব্যাপক নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ১০০ বিজিপি ও সেনাসদস্যকে সেখানে রাখা হয়। স্কুল প্রাঙ্গণে বিজিবির কড়া পাহারা। উৎসুক জনতা বিদ্যালয়ের সামনে জড়ো হয়েছেন। মিয়ানমার থেকে যারা এসেছে, তাদের বায়োমেট্রিক প্রোফাইল তৈরির কাজ চলছে। কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম বলেন, পরিস্থিতির ওপর বিজিবির পাশাপাশি পুলিশ তার যে দায়িত্ব, সেটি পালন করছে। চলমান ঘটনায় এখনও কোনো মামলা হয়নি।

পরিস্থিতির বর্ণনা দিল বিজিপি সদস্যরা

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য ও তাদের সীমান্তের ভেতরের ভীতিকর পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়েছে পালিয়ে আসা বিজিপি সদস্যরা। প্রাণ বাঁচাতে অনেকে সরকারি অস্ত্র ফেলে এসেছে। কেউ কেউ আবার অস্ত্র নিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে। এরপর তাদের নিরস্ত্রীকরণ করে বিজিবি।

বর্মি ও আরাকানি ভাষার কথা বলতে পারদর্শী টেকনাফের হোয়াইংক্যয়ের বাসিন্দা সাইফুল আলম। পালিয়ে আসা বিজিপি সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাইফুল সমকালকে জানান, আরাকান আর্মির সদস্যরা যখন তাদের ক্যাম্পে হামলা করে, তখন তারা প্রতিরোধের চেষ্টা করে। তবে শেষ পর্যন্ত কুলাতে না পেরে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। অধিকাংশ বিজিপি সদস্য নদী সাঁতরে পার হয়ে এসেছে। আরাকান আর্মির সদস্যরা ধাওয়া করলে তারা নদীতে ঝাঁপ দেয়। নদী সাঁতরে কূলে ফিরতে হয়েছে। কেউ কেউ অস্ত্র নিয়ে আসতে পারেনি। অনেকে আবার অস্ত্র এনেছে। বিজিপি সদস্যদের সহযোগিতা করতে মিয়ানমার সরকার বিমান ও হেলিকপ্টারও পাঠিয়েছিল। তবে আরাকান আর্মির সশস্ত্র যোদ্ধাদের পিছু হটানো যায়নি। বিজিপি বলেছে, ‘প্রাণভয়ে জীবন বাঁচাতে পালিয়ে এসেছি।’ তাদের অনেক সদস্য মারাও গেছে। সাইফুল বলেন, বুধবার সীমান্তে একে একে ৬৪ বিজিপি সদস্যকে পেয়েছি। বিজিপি বলছে, ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের তমবাজার, তুমব্রু, গাইবনে বিজিপির তিনটি ক্যাম্প আরাকান আর্মি পুরোপুরি দখলে নিয়েছে। ক্যাম্পের সবকিছু জব্দ করে নিয়েছে আরাকান আর্মি। মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার ব্যাপারে বিজিপি সদস্যরা বলেছেন, তারা দ্রুত নিজ দেশে ফেরত যেতে চান।

এদিকে কয়েক দফায় বাংলাদেশে ৩৩০ বিজিপি ও সেনাসদস্য পালিয়ে এসেছে। কক্সবাজারে যেখানে তারা আশ্রয় নিয়েছে, সেখানেই বিভিন্ন ক্যাম্পে অনেক বছর ধরে অবস্থান করছে মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গারা। ভাগ্যের কী পরিহাস, যাদের নির্যাতনের শিকার হয়ে নিজ দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে আসতে বাধ্য হয়, তারাই এখন নিজেদের জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

কুতুপালং ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা সৈয়দ উল্লাহ বলেন, বিজিপি ও সেনাসদস্যদের ফিরিয়ে নেবে দেশটি। আমরাও মিয়ানমারের নাগরিক। আমরাও দ্রুত ফেরত যেতে চাই। জান্তা সরকারের সেনাবাহিনী ও বিজিপি যেভাবে নির্যাতন করে রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে দিয়েছে, এটা ইতিহাসে বিরল। বিদ্রোহী সশস্ত্র বাহিনীর সামনে দাঁড়াতে না পেরে এখন তারাই বিতাড়িত। বিজিপি সদস্যদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ আবারও মানবিকতার নতুন উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। বালুখালি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, একসময় যারা আমাদের বিতাড়িত করেছে, তারা আজ আমাদের পাশে আশ্রয় নিচ্ছে। আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যখন রোহিঙ্গাদের পূর্ণ অধিকার নিশ্চিত করে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে, তখনই সেখানে সংঘর্ষ বেধে গেল। এতে প্রত্যাবাসন দীর্ঘায়িত হতে পারে। নিজ দেশে সংঘাতের সুযোগ নিয়ে জান্তা সরকার যাতে প্রত্যাবাসন বাধাগ্রস্ত করতে না পারে, সেদিকে নজর দেওয়া জরুরি।

Leave A Reply

Your email address will not be published.