তসলিমা নাসরিন
বাংলাদেশের বিখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী ফিরোজ সাঁই ১৯৯৫ সালে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে ”এক সেকেন্ডের নাই ভরসা” গানটি গাইতে গাইতে মঞ্চের ওপর ঢলে পড়েন। কী হয়েছিল? স্ট্রোক। স্ট্রোক থেকে মৃত্যু। সত্যিই তো, এক সেকেণ্ডের নাই ভরসা। কলকাতার নজরুল মঞ্চে গান গাইতে গাইতে ঠিক নয়, তবে গানের অনুষ্ঠান থেকে হোটেলে পৌঁছেই সঙ্গীতশিল্পী কেকে’র মৃত্যু হলো। মালায়ালি শিল্পী এদাভা বশিরও তিন দিন আগে গান গাইতে গাইতে মঞ্চের ওপরই মৃত্যুবরণ করেন।
পৃথিবীর প্রচুর অভিনেতা, শিল্পী, বাদক মঞ্চে পারফর্ম করতে করতে মারা গেছেন। আসল সত্যটা হলো, এক সেকেণ্ডের নাই ভরসা।
কেকে’র বয়স এমন কিছু নয়, দেখলে মনে হয় রেগুলার ওয়ার্কআউট করা শরীর, স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন, হলে কী হবে, ওই যে ফিরোজ সাঁই গেয়েছিলেন, এক সেকেণ্ডের নাই ভরসা।
কেউ চমৎকার লাইফ স্টাইল মেইন্টেইন করেও হুট করে চলে যান, কেউ আবার কিছুই না করে ৯৯ বছর বেঁচে থাকেন।
জিনে রোগ শোক থাকে, ওটির আরেক নাম হয়তো নিয়তি। ওটিকে খুব একটা তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা যায় না। আমার মনে হয় দীর্ঘদিন শারীরিক কষ্ট যন্ত্রণায় ভুগে মরার চেয়ে এমন হঠাৎ করে মরে যাওয়া অনেক ভালো।
কেকের অনুষ্ঠানে প্রচুর শ্রোতা এসেছিল, প্রচুর সমর্থন তিনি পেয়েছেন, প্রচুর ভালোবাসা পেয়েছেন। মন তখন নিশ্চয়ই তাঁর ভালো লাগায় ভরে ছিল। আনন্দে নেচেছিল হৃদয়। এই সুখানুভূতি নিয়ে যদি মৃত্যু হয়, তবে সেই মৃত্যু সওয়া যায়।
কেউ ভালোবাসে না, কেউ কাছে আসে না, কেউ নেই কোথাও, শুধু দুঃখ, শুধু বেদনা, শুধু হতাশা —-এমন সময় মৃত্যু এলে সেই মৃত্যু সওয়া যায় না।