ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ সময় পার করছে ভারতের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল কংগ্রেস। ২০১৪ সালের নির্বাচনে তাদের ভরাডুবি হয়। লোকসভার ৫৪৩ আসনের মধ্যে ২৮২টিতে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় যায় ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। সর্বশেষ ২০১৯ সালের নির্বাচন ছিল কংগ্রেসের জন্য আরও ভয়াবহ।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে কংগ্রেসের সভাপতি হন রাহুল গান্ধী। নির্বাচনে ভরাডুবির পর তিনি পদ ছাড়েন। তাঁর নেতৃত্বে নির্বাচনে হার দলে বড় ভাঙনের কারণ হয়। ২০২২ সালে পাঁচ মাসের মধ্যে এক ডজন হেভিওয়েট নেতা কংগ্রেস ছাড়েন।
মহাত্মা গান্ধী-জওহরলাল নেহরুর দল কংগ্রেসের করুণ অবস্থার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ বিজেপি নেতারা রাহুলকে নিয়ে ঠাট্টা-উপহাস করতে ছাড়েন না। তাঁকে ‘শাহজাদা’, ‘পাপ্পু’সহ নানা নামে ডাকা হয়। সেই রাহুলই এখন ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন। অনেকটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছেন বিজেপির জন্য। তাঁকে চাপে রাখতে নানা কৌশল নিতে বাধ্য হচ্ছেন ক্ষমতাসীনরা।
২০২১ সালের কৃষক আন্দোলন থেকে। মোদি সরকার তিনটি কৃষি বিল করেছিল, যা নিয়ে চরম অসন্তোষ ছিল কৃষকদের মধ্যে। তাঁদের দাবির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন রাহুল। বিজেপির দুই দফা শাসনে কৃষক আন্দোলন অন্যতম বড় ঘটনা। ওই আন্দোলনের বারুদে আগুন দিয়েছিলেন রাহুল।
‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ রাহুলকে প্রচারের আলোয় নিয়ে আসে। দল ও বিরোধীদের মধ্যে তাঁর গুরুত্ব বাড়ে। এ যাত্রায় রাহুল দলের নেতাকর্মীকে নিয়ে দক্ষিণের কন্যাকুমারী থেকে জম্মু-কাশ্মীরের শ্রীনগর পর্যন্ত ৪ হাজার কিলোমিটারের বেশি পথ হাঁটেন। ১৫০ দিনের এ যাত্রায় দলচ্যুত অনেকেই রাহুলের সঙ্গে হাঁটেন। অন্য দলগুলোর নেতারাও সংহতি জানান। ঊর্মিলা মাতন্ডকর, স্বরা ভাস্করের মতো বলিউড তারকারা যাত্রায় অংশ নিয়েছেন। ভারত জোড়ো যাত্রা জম্মু-কাশ্মীরে পৌঁছালে রাজ্যটির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আব্দুল্লাহ, ক্যাপ্টেন বানা সিংয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা অংশ নেন।
বছরের শুরুতে নিউইয়র্কভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিনডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদন প্রকাশের পর গুজরাটভিত্তিক ধনকুবের গৌতম আদানির সাম্রাজ্যে ধস নামে। এ নিয়ে মোদিকে আক্রমণ করেন রাহুল। তিনি দাবি করেন, মোদির সহযোগিতায় আদানির সাম্রাজ্য বিকশিত হয়েছে। তাঁর শাসনামলে ফুলে-ফেঁপে আদানি হয়েছেন বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের অন্যতম। ভারতের সংসদে দাঁড়িয়ে মোদির বিরুদ্ধে সরব হন রাহুল। বিষয়টি হালকাভাবে নিতে পারেনি বিজেপি।
রাহুলের বিরুদ্ধে বিদেশের মাটিতে দেশবিরোধী বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগ এনেছে বিজেপি। এ অভিযোগে দলটির পক্ষ থেকে তাঁর সংসদ সদস্য পদ বাতিলের চেষ্টা চলছে। লন্ডনে এক আলোচনায় রাহুল গান্ধী দাবি করেন, ভারতের গণতন্ত্রের ওপর আঘাত এসেছে। বিরোধীদের চুপ করিয়ে রাখা হচ্ছে।
শনিবার একটি পার্লামেন্টারি কমিটি রাহুলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। ওই কমিটি লন্ডনে দেওয়া তাঁর বক্তব্য সম্পর্কে জানতে চায়। রাহুল জানান, তিনি কেবল ভারতের গণতন্ত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এটাকে ‘দেশবিরোধী’ বলার কোনো যুক্তি নেই।
বিতর্ক ও চাপের মধ্যে সংসদে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না রাহুল গান্ধী। বিরোধীদের দাবি, রাহুলকে বিদেশে দেওয়া তাঁর বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে। অন্যদিকে, রাহুল ক্ষমা চাইবেন না বলে দৃঢ়ভাবে জানিয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে ক্ষমতায় যাওয়ার পর বিদেশে গিয়ে নরেন্দ্র মোদি বিভিন্ন যেসব মন্তব্য করেছেন, সেগুলোর ভিডিও যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করছে কংগ্রেস।
রোববার নয়াদিল্লিতে রাহুল গান্ধীর বাড়িতে যান শীর্ষ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা। তাঁদের অভিযোগ, ভারত জোড়ো যাত্রার সময়ে তিনি জম্মু-কাশ্মীরে গিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন। শ্রীনগরে রাহুল বলেছেন, ‘আমি শুনেছি, নারীরা এখনও যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন।’
পুলিশের এ তৎপরতাকে ‘লজ্জাজনক ঘটনা’ বলে বর্ণনা করেছে কংগ্রেস। দলটি বলছে, এতে এটাই প্রতীয়মান হয়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আদানি ইস্যু নিয়ে প্রশ্নের মুখে স্নায়ুবিক চাপে আছেন। কংগ্রেস নেতা পবন খেরার প্রশ্ন, ভারত জোড়ো যাত্রা শেষ হওয়ার দেড় মাস পার হয়ে গেছে। এখন কেন এ নিয়ে প্রশ্ন করছে পুলিশ?