ভারতীয় মুদ্রার রেকর্ড পতন হলো। এই প্রথমবার এক ডলারের দাম হলো ৮০ টাকারও বেশি। চলতি আর্থিক বছরে টাকার দাম সাত শতাংশ কমলো।
টাকার দাম কিছুদিন হলো পড়ছিল। মঙ্গলবার সকালে তার রেকর্ড পতন হয়। এক মার্কিন ডলারের মূল্য গিয়ে দাঁড়ায় ৮০ দশমিক শূন্য এক পয়সা। চলতি বছরের শুরুতে এক মার্কিন ডলারের মূল্য ছিল ৭৪ টাকা। তারপর থেকে টাকার দাম পড়তে পড়তে এখন ৮০ টাকায় এক ডলার হলো।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের মতে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, তেলের দাম বেড়ে যাওয়া, বিদেশি সংস্থাগুলো নিজেদের পুঁজি তুলে নেওয়ার ফলে টাকার দাম কমছে।
শুধু টাকার দাম কমছে, তাই নয়, গত কয়েক মাসে ইউরোর মতো অত্যন্ত শক্তিশালী মুদ্রার দামও অনেকটাই কমেছে। এখন ইউরো ও মার্কিন ডলারের মূল্য প্রায় সমান হয়ে গেছে। এছাড়া প্রায় সব দেশের মুদ্রাই কমবেশি পড়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে এই বিষয়ের ওপর কাজ করছেন সুগত হাজরা। তিনি জানিয়েছেন, আমেরিকায় এখন মুদ্রাস্ফীতির পরিমাণ নয় শতাংশের বেশি। আমেরিকার অর্থনীতি বিশ্বের বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে তার বড় প্রভাব বিশ্বের ওপর পড়ছে। এর ফলে ভারতের শেয়ার বাজার থেকে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলো তাদের অর্থ বের করে নিচ্ছে। ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব গোটা বিশ্বের অর্থনীতির ওপর পড়ছে। ফলে টাকার দামও কমছে।
অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা, টাকার দাম আরও পরতে পারে। আমেরিকায় যদি আর্থিক মন্দা দেখা দেয়, তাহলে বিশ্বজুড়ে তার ভয়ংকর প্রভাব পড়তে বাধ্য।
ভারতীয় অর্থনীতি করোনার ধাক্কা সামলে যখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, তখনই এলো ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কা। তার প্রভাব ভারতের ওপর পড়বেই বলে মনে করছেন পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক আমলা অমিতাভ রায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এক ডলার সমান ৮০ টাকা, এটা একটা মনস্তাত্ত্বিক ধাক্কা। তবে ভারতের সবচেয়ে বড় অসুবিধা হবে অশোধিত তেল আমদানির ক্ষেত্রে। ভারতে যতটা অশোধিত তেল প্রয়োজন, তার ৮০ ভাগই বিদেশ থেকে আসে। যেহেতু টাকার দাম পড়ে গেছে, তাই এই তেল কিনতে ভারতের বেশি টাকা লাগবে। ভারতকে ভোজ্য তেলের একটা অংশ আমদানি করতে হয়। তাতেও টাকা বেশি লাগবে। বস্তুত, সব ক্ষেত্রে আমদানির খরচ বেড়ে যাবে। সুবিধা হবে রপ্তানির ক্ষেত্রে।
অমিতাভ রায়ের বক্তব্য, ভারত এখন রাশিয়া থেকে প্রচুর পরিমাণে অশোধিত তেল কিনছে। সেখানে তারা তেল পাচ্ছে বাজারের তুলনায় প্রায় এক তৃতীয়াংশ দামে। তবে তার দাবি, রাষ্ট্রায়ত্ত্ব তেল সংস্থাগুলো যতটা রাশিয়ার তেল কিনছে, বেসরকারি সংস্থাগুলো কিনছে তার থেকে অনেক বেশি।
সুগত মনে করেন, এর ফলে শেয়ার বাজার আরও পরতে পারে। মিউচুয়াল ফান্ডও পরবে। তবে ভারতের ক্ষেত্রে আশার কথা হলো, এই মুহূর্তে বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয় যথেষ্ট ভালো। আর রিজার্ভ ব্যাংক এবার টাকার পতন রুখতে ডলার বিক্রি করছে না। তারা বরং কাঠামোগত পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
অর্থনীতিবিদদের একাংশ মনে করছেন, বিদেশি লগ্নিকারি সংস্থাগুলো যে অর্থ তুলে নিয়ে চলে যাচ্ছে, এই ডিসেম্বরের মধ্যে তারা আবার ফিরে আসতে বাধ্য হবে। কারণ, আমেরিকাও ডলারের মূল্য স্থিতিশীল রাখার জন্য পদক্ষেপ নিতে বাধ্য। আর ভারতের মতো বাজার লগ্নিকারী সংস্থাগুলো অন্য জায়গায় পাবে না। ফলে ডলারের দাম ৮০ টাকা ছুঁলেও এখনই গেল গেল রব তোলার দরকার নেই বলে তারা মনে করছেন।