বিয়ে সব কনেদের কাছেই একটা বিশেষ দিন। সকলেই চান ওই দিন সুন্দরভাবে সেজে উঠতে। এত আয়োজন, উৎসব, অনুষ্ঠান যে তাঁকে ঘিরেই। তাই বিয়ের দিনের সাজ নিয়ে বাড়তি উত্তেজনা, এক্সাইটমেন্ট থাকাটা স্বাভাবিক।
বিয়ের সাজ মানেই প্রচুর মেক-আপ এমন ধারণা এখন অবসোলিট। কনেরা চাইছেন ট্রেন্ডি লুক কিন্তু সাবেকিয়ানা বজায় রেখে। এই প্রসঙ্গে মেক-আপ আর্টিস্ট অনিরুদ্ধ চাকলাদার জানালেন, প্রত্যেকবছরই কনের লুক নিয়ে নতুন ধরনের সাজের জোয়ার আসে। যদিও ব্রাইডাল লুক নিয়ে খুব বেশি এক্সপেরিমেন্ট করার সুযোগ কম। নানা ধরনের সাজগোজ করার অনেক অবকাশ আসে। কিন্তু বিয়ের বিশেষ দিনটিতে দিনটা কিন্তু সাজগোজ নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করার মঞ্চ নয়। বরং সকলের চেয়ে আলাদা একটু অন্যরকমভাবে সেজে ওঠাই ভাল। তাই ট্র্যাডিশনাল লুক বজায় রেখেই তার মধ্যেই ছোটখাটো বদল এনে একটা ট্রেন্ডি ব্রাইডাল লুক দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।
আজকাল অনেক কনেরাই কাজল পরতে পছন্দ করেন না। তাঁরা চাইছেন ডার্ক আইজ়। এক্ষেত্রে আইলিডে থাকছে ভারী মেক-আপ। স্মোকি আইজ় সহজেই চোখকে খুব আকর্ষণীয় করে তোলে। কনের সাজে তা রীতিমতো ট্রেন্ডি। চন্দনের ক্ষেত্রে অনেকে আবার আবার একটু ট্র্যাডিশনাল সাজ পছন্দ করছেন। একে এককথায় নিও ট্র্যাডিশনাল লুক বলা যেতে পারে। বাঙালি বিয়ের কনের একটা আলাদা লুক আছে। সাজ যেমনই হোক না কেন, সেই ভাবটা সাজের মধ্যে মোট কথা, বিয়ের দিনে সাজ এমন হওয়া উচিত যাতে তাঁকে দেখে বিয়ের কনে বলে মনে হয়। এখানে বিয়ের সাজে কনে পরেছেন লাল বেনারসি। সঙ্গে আইলিডে কোল এবং ব্রাউন শেডের আইশ্যাডো দিয়ে ড্রামাটিক স্মোকি আইজ় করা হয়েছে। এক্সটেন্ডেড আইল্যাশের সঙ্গে ঘন মাসকারা। বেনারসির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ঠোঁটে রয়েছে গোলাপি ঘেঁষা লাল রঙের লিপস্টিক। কপালে লাল-সাদা চন্দনের ছোঁয়া। সঙ্গে ভারী সোনার গয়না।
নিউট্রাল মেক-আপের ক্ষেত্রে অনেকসময় উপর জোর দেওয়া কালার কো-অর্ডিনেটেড মেক-আপের উপর। মাথায় রাখতে হয় কনের পোশাক। এখানে রিশেপশনের সাজে কনে পরেছেন পেস্তা সবুজ লহেঙ্গা। মেক-আপেও সেই একই রঙের ব্যাবহার করা হয়েছে। এই বিশেষ লুকটার ক্ষেত্রে চোখে ব্যবহার করা হয়েছে শিমারি গোল্ডেন আইশ্যাডো।
আইব্রোর নীচে ব্যাবহার করা হয়েছে গোল্ড হাইলাইটার। চোখে সরু লাইনার এবং এক্সটেন্ডেড আইল্যাশে ঘন মাসকারা পরানো হয়েছে। এছাড়া আর কোনও কন্টুরিং করা হয়নি। ফাউন্ডেশন এবং ফিনিশিং স্প্রের মাধ্যমে গ্লোয়ি লুক আনা হয়েছে। গালে রয়েছে রোজ় ব্লাশার। যেহেতু পেস্তা গ্রিন লহেঙ্গার সঙ্গে পিঙ্ক ওড়না পরেছেন কনে, সেই টাচটাকে বজায় রাখতে ঠোঁটেও পিঙ্ক লিপস্টিক পারানো হয়েছে। অর্থাৎ মেক-আপে পোশাকের রঙেরই প্রতিফলন ঘটানো হয়েছে। কনেকে বড় মাংটিকা পরানো হয়েছে। তাই টিপ পরানো হয়নি। চিরাচরিত খোঁপা না বেঁধে চুল হালকা কার্ল খোলা চুলে তিনি হয়ে উঠেছেন অনন্যা।
বিয়ের সাজের নতুন ট্রেন্ডের প্রসঙ্গে মেক-আপ আর্টিস্ট অভিজিৎ চন্দের বক্তব্য, প্রত্যেক বছরই নানা ধরনের ট্রেন্ড আসে ঠিকই। কিন্তু একটা নির্দিষ্ট স্টাইল চলে আসছে বলেই তা ফলো করা ঠিক নয়। প্রথমত সবাই নতুন ট্রেন্ড ফলো ক্যারি করতে পারেন না। দ্বিতীয়ত প্রত্যেকের চেহারা এবং ব্যক্তিত্ব আলাদা। তাই কনের সাজ এমন হওয়া উচিত যাতে সেই সাজ তাঁর ব্যক্তিত্বকে ছাপিয়ে না যায়। তবে কন্টেম্পোরারি লুক অবশ্যই পাওয়া সম্ভব। সেক্ষেত্রে চলতি ট্রেন্ড থেকে কিছু বিষয় কাস্টোমাইজ়ড করে ব্যবহার করা যেতে পারে। সঙ্গে মাথায় রাখতে হয় কনের নিজস্ব পছন্দ এবং ইচ্ছে। কয়েকবছর ধরে কনের সাজে একটা স্টাইল চলে আসছে গাঢ় চোখ, ডার্ক লিপস্টিক, খব ফোলা চুলে খোঁপা। কিন্তু সাম্প্রতিক সেলেব্রিটিদের লাক্সারি ওয়েডিং সেই ট্রেন্ডটা অনেকটাই বদলে দিয়েছে। অনুষ্কা, দিপীকা বা প্রিয়ঙ্কা— এঁরা কেউই কিন্তু মেক-আপের ক্ষেত্রে ট্রেন্ড ফলো করেননি।
রিশেপশনে সকলেই চান বিয়ের দিনের চেয়ে একটু আলাদাভাবে সেজে উঠতে। অনেকেই ওই দিনের জন্য বেছে নিচ্ছেন লহেঙ্গা। তবে এক্ষেত্রে মাথায় রাখতে গয়না যেন মানানসই এবং একে অপরের পরুপূরক হয়। পাশাপাশি ‘গা ভরা গয়না’ পরতেই হবে এমন কনসেপ্টেও বিশ্বাসী নন আজকের কনেরা। এখানে রিশেপশনের সাজে কনে সেজেছেন উজ্জ্বল রঙের লহেঙ্গায়। সঙ্গে প্যাস্টেল শেডের ওড়না। ইউরোপিয়ান স্টাইলে ক্যাজুয়াল টাই আপ করা হয়েছে। পোশাকের সঙ্গে কনস্ট্রাস্ট আনতে চুলের সাইডে একগোছা লালা গোলাপ। সঙ্গে গলায় মক্তো বসানো অ্যান্টিক সোনার গয়না। কানে একই টোনের মুক্তো বসানো ঝুমকো। হাতে মোটা ব্যাঙ্গেলস। আইশ্যাডোতে ব্যবহার হয়েছে ব্রাউন, কোল এবং পার্পল টোন।