The news is by your side.

ব্যাংক খাত কিছু ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের কাছে জিম্মি: সিপিডি

0 690

 

বর্তমানে দেশের ব্যাংক খাত কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের হাতে জিম্মি হয়ে আছে, যা পুরো অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অর্থনীতির বাঁক ফেরাতে হলে ব্যাংক খাত পুনর্গঠন ও পুনর্বিন্যাস দরকার।

শনিবার ব্যাংক কমিশন গঠন নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে নিয়ে সিপিডি এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সেখানেই সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এসব কথা বলেন।

সরকারের ব্যাংকিং কমিশন গঠনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে দ্রুত কমিশনটি গঠনের আহ্বান জানিয়েছে সিপিডি। প্রস্তাবিত কমিশনের কার্যক্রম, কার্যপরিধি ও পদ্ধতি নিয়েও কিছু সুপারিশ করেছে তারা।

সিপিডি মনে করে, লোক দেখানো কমিশন গঠন করে লাভ হবে না। প্রস্তাবিত কমিশন হতে হবে সম্পূর্ণ স্বাধীন। স্বাধীনভাবে কাজ করার জন্য পরিবেশ, সুবিধা ও সুযোগ দিতে হবে। অর্থমন্ত্রীর প্রকাশ্য হস্তক্ষেপ ছাড়া সমর্থন থাকতে হবে। পাশাপাশি কমিশন যেসব সুপারিশ করবে সেগুলো বাস্তবায়নে আইনি ভিত্তি দরকার।

১৯ ফেব্রুয়ারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ব্যাংক কমিশন গঠন করা নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ করেন। ওইদিনই বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ অর্থমন্ত্রণালয়ে যান। এরপর খবর প্রকাশ হয়, ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদকে প্রধান করে ব্যাংকিং কমিশন গঠন করছে সরকার। সরকারের এই উদ্যোগের প্রতিক্রিয়া জানাতেই সিপিডি এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

উল্লেখ্য, সিপিডি দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংক খাত নিয়ে গবেষণা করে আসছে। ২০১২ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকে হলমার্ক কেলেংকারি প্রকাশের পর থেকে সংস্থাটি ব্যাংক খাতের সমস্যা সমাধানে একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ব্যাংকিং কমিশন গঠনের দাবি জানিয়ে আসছে। আট বছর পরে এসে সরকারের এ উদ্যোগে সংস্থাটি সন্তোষ প্রকাশ করেছে। দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, সরকারের উদ্যোগে সিপিডি খুশি ও কৃতজ্ঞ। পাশাপাশি কমিশনের সম্পূর্ণ সাফল্য কামনা করছে।

সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, নানান ধরনের সুযোগ সুবিধা দেওয়ার পরও ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমছে না, যা বড় উদ্বেগের বিষয়। সুযোগ-সুবিধার পরও খেলাপি ঋণ না কমার অর্থ হচ্ছে ইচ্ছেকৃত খেলাপি বেশি, যারা জনগণের অর্থ ফেরত দিতে চায় না। এতে ভালো গ্রাহকদের জন্য বৈষম্যও তৈরি হচ্ছে। যে কারণে ব্যাংকিং কমিশন জরুরি। সরকার এমন উদ্যোগ নেওয়ায় সিপিডি খুশি। কারণ গত আট বছর ধরে সিপিডির পক্ষ থেকে এ দাবি জানানো হচ্ছে। তবে যদি ব্যাংকিং কমিশন গঠন করা হয়, সেক্ষেত্রে সিপিডির কিছু প্রস্তাব আছে। এর অন্যতম হচ্ছে, এই কমিশন হতে হবে অস্থায়ী ও স্বল্পমেয়াদি অর্থাৎ ৩ থেকে ৪ মাস মেয়াদি; সুনির্দিষ্ট কর্ম পরিকল্পনা থাকতে হবে; ব্যাংক খাতের সমস্যার কারণ, কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কীভাবে দায়ী তা কমিশন স্পষ্ট করে জানাবে এবং সমাধানের সুপারিশ করবে।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বর্তমানে নাগরিক সমাজ অসহায় আতংক নিয়ে ভয়ংকর ও ভঙ্গুর পরিস্থিতির দিকে তাকিয়ে আছে। মন্দ ঋণ অব্যাহতভাবে বাড়ছে। ব্যাংকের পুঁজি, নিরাপত্তা সঞ্চিতি ও লাভে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। আমানত ও ঋণের সুদহার নিয়েও সমস্যা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালার প্রকাশ্য বরখেলাপ হচ্ছে। গুটি কয়েক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে জিম্মি হয়ে গেছে ব্যাংক খাত। এ রকম সময়ে ব্যাংকিং কমিশন গঠন সরকারের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, যা বিচক্ষণতারও পরিচায়ক।

তিনি বলেন, ব্যাংক কমিশনকে স্বচ্ছ, সম্যক ও তথ্য নির্ভর মাপকাঠিতে ব্যাংক খাতের অবস্থা বিচার করতে হবে। চলমান পদক্ষেপের মূল্যায়ন করতে হবে। স্বল্প ও মধ্য মেয়াদে চলমান, বাস্তবচিত ও টেকসই সমাধান দিতে হবে। এজন্য দ্রুত কমিশন গঠন করতে হবে, যাতে কমিশন আগামী বাজেটের আগে একটি অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন দিতে পারে।

সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ও জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.