The news is by your side.

ব্যাংক অ্যাকাউন্ট  জব্দের আগেই টাকা সরিয়ে নিয়েছেন বেনজীর

0 57

 

জব্দের আগেই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা সরিয়ে নিয়েছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবার। দুদকের তথ্যের ভিত্তিতে গত ২৩ মে তাদের অ্যাকাউন্ট জব্দের আদেশ দেন আদালত। তবে এসব অ্যাকাউন্টে কী পরিমাণ টাকা ছিল, তা জানা যায়নি।

ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা সরানোর মতো করে জমি, ফ্ল্যাট বা অন্য কোনো সম্পদ বিক্রি বা স্থানান্তর করেছেন কিনা, সে তথ্যও পাওয়া যায়নি। তিনি দেশে আছেন কিনা, তা নিয়েও ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। একটি সূত্র জানিয়েছে, পরিবার নিয়ে বেনজীর দুবাইয়ে অবস্থান করছেন।

বেনজীর আহমেদের দুই মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের নামে বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল সিটিজেন টিভির মালিকানার তথ্য পাওয়া গেছে। ২০১৭ সালে এ টিভির অনুমোদনের সময় তারা দু’জনই ছিলেন শিক্ষার্থী। অন্যদিকে, দুদকের চিঠি আমলে নিয়ে তিন দেশে কোনো সম্পদ আছে কিনা জানতে চেয়ে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

বেনজীর আহমেদের সঙ্গে মোবাইল ফোন ও হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

বেনজীরের সম্পদের বিষয়ে যেসব সরকারি সংস্থা খোঁজ রাখছে, তাদের মধ্যে একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, গত সপ্তাহে তাঁর অ্যাকাউন্টগুলো ফাঁকা করা হয়েছে। তিনি বলেন, এর আগের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে, যখনই কেউ বুঝতে পারেন তাঁকে ধরার চেষ্টা চলছে, তখনই তিনি টাকা সরিয়ে ফেলেন। অবশ্য টাকা তুললেও নগদে রেখেছেন, নাকি অন্য কারও অ্যাকাউন্টে জমা করেছেন– তা বের করা সম্ভব।

বেসরকারি একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পুরো বিষয়টি আরও পরিষ্কার করে বলেন, ডকুমেন্টের ভিত্তিতে কাজ করে ব্যাংক। ফলে সুনির্দিষ্ট আদেশের কপি ছাড়া মৌখিক কোনো তথ্য কিংবা গণমাধ্যমের খবরের ভিত্তিতে কারও অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলতে বা স্থানান্তর না করতে দেওয়ার সুযোগ নেই। কেননা, আদালত কারও অ্যাকাউন্ট ফ্রিজের আদেশ দিলে পরে স্থগিতাদেশ দিতে পারেন। এ রকম ক্ষেত্রে কোনো ব্যাংক টাকা তুলতে না দিলে বিপদে পড়বে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম অর্থ পাচার, মানি লন্ডারিংসহ এ ধরনের অপরাধ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন। তিনি বলেন, দুর্নীতিবাজরা আগেই টাকা সরিয়ে ফেলে, এটাই স্বাভাবিক। বিদ্যমান ব্যাংকিং নিয়মে এটি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। তবে সরকার এখন মিডিয়ায় দেখাতে চাচ্ছে, তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। তিনি বলেন, বেনজীর আহমেদ এক দিনে বেনজীর হননি। তাঁকে পুলিশের আইজি, র‍্যাবের ডিজি এ সরকারই বানিয়েছে। হঠাৎ তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে বহির্বিশ্বে দেখানো হচ্ছে, সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর।

সিটিজেন টিভির মালিকানায় বেনজীরের দুই মেয়ে

সিটিজেন টিভি নামে একটি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেলে বেনজীর আহমেদের দুই মেয়ের মালিকানার তথ্য পাওয়া গেছে। সিটিজেন টিভির পরিচালক তাঁর বড় মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও ছোট মেয়ে তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীর। ২০১৭ সালে এই টিভি চ্যানেল অনুমোদনের সময় তারা দু’জনই শিক্ষার্থী ছিলেন। বেনজীর পরিবারের সম্পদ অনুসন্ধান করতে গিয়ে এ তথ্য জানতে পেরেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। এ তথ্য ইতোমধ্যে দুদকে পাঠানো হয়েছে।

সরকারি অনুমোদন পেয়েও এখনও সম্প্রচারে আসেনি সিটিজেন টিভি। তবে টেলিভিশন চ্যানেলটির নামে বেসরকারি এক্সিম ব্যাংকে ২০২১ সালে একটি শর্ট নোটিশ ডিপোজিট (এসএনডি) অ্যাকাউন্ট খোলা হয়, যা বর্তমানে সক্রিয়। অ্যাকাউন্ট খোলার ফরমে বেনজীরের দুই মেয়ের ঠিকানা উল্লেখ রয়েছে– ২২৮/৩, শেখপাড়া রোড, দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী।

২০১৭ সালে সিটিজেন টিভি অনুমোদনের সময় র‍্যাবের মহাপরিচালক ছিলেন বেনজীর আহমেদ। তখন তাঁর বড় মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। সিটিজেন টিভি অনুমোদনের অন্যতম শর্ত ছিল– এক বছরের মধ্যে সম্প্রচারে আসতে হবে। আর পূর্ণাঙ্গ সম্প্রচারে যাওয়ার আগে এবং পূর্ণাঙ্গ সম্প্রচারে যাওয়ার পর দুই বছর পার না হওয়া পর্যন্ত কোনো শেয়ার হস্তান্তর করা যাবে না।

দুদকে বেনজীরের বিরুদ্ধে অভিযোগ অনুসন্ধানের সঙ্গে যুক্ত একটি সূত্র জানায়, তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করার আগে কাছাকাছি সময়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করা হলে এ ক্ষেত্রে তাঁকে আইনের আওতায় আনা হবে। ওই টাকা কোথাও বিনিয়োগ করা হলে সেটি অপরাধলব্ধ অর্থ হিসেবে ধরা হবে। এবং এটি দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত মোট সম্পদের সঙ্গে যুক্ত হবে। আর উত্তোলনকৃত অর্থ কোনো খাতে বিনিয়োগ করা না হলে তাঁকে মানি লন্ডারিং অপরাধের আওতায় আনা হবে।

দুদক আরও জনায়, ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার পর সংশ্লিষ্ট অভিযুক্ত ব্যক্তি কোনোভাবেই ওই সব হিসাব থেকে টাকা উত্তোলন করতে পারবেন না। এ পর্যায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা তুলে নিলে এ ক্ষেত্রে ব্যাংকের দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষকে আইনের আওতায় আনা হবে।

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.