বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুর সম্পদের অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এরই মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত আবাসিক এলাকায় তার নিজের নামে ও স্ত্রী- সন্তানদের নামে হাজার কোটি টাকার সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুদক। ইতোমধ্যে আদালতের মাধ্যমে বনানীর ডিওএইচএস, বসুন্ধরা ও ধানমন্ডির বেশকিছু সম্পদ জব্দের আদেশ পেয়েছে দুদক। এছাড়া এসব সম্পদ কোনও অবস্থাতেই যেন হস্তান্তর ও বিনিময় করা না হয়, সে জন্য নিবন্ধন অধিদফতরের মহাপরিদর্শক নিবন্ধককে (আইজিআর) নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
দুদক সূত্র জানায়, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাচ্চু, তার স্ত্রী ও সন্তানদের নামে হাজার কোটি টাকার বেশি সম্পদের সন্ধান পেয়েছে তারা। তাছাড়া পালিয়ে থেকে এসব সম্পদ বিক্রি করে দেশ ছেড়ে যাওয়ারও পরিকল্পনা করছেন বাচ্চু, এমন তথ্যও রয়েছে দুদকের কাছে। যদিও বাচ্চুর বিদেশ যাওয়ার ওপর আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। যে কারণে বাচ্চু ও তার পরিবারের নামে থাকা সম্পদ জব্দ করে নিজেদের জিম্মায় নিতে কাজ শুরু করেছে দুদক।
বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি দেশের আলোচিত ঋণ কেলেঙ্কারি ঘটনাগুলোর একটি। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বেরিয়ে এসেছে— ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বাচ্চু এবং ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ঋণের নামে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। এ ঋণ কেলেঙ্কারি ঘটনায় ২০১৫ সালে ৫৯টি মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন। এসব মামলায় প্রায় ১৫০ জনকে আসামি করা হলেও শেখ আবদুল হাই বাচ্চুর নাম কোনও এজাহারেই ছিল না। যদিও এসব কেলেঙ্কারির মূল কারিগর ছিলেন তিনি। এ নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনাও কম হয়নি। তবে দীর্ঘ আট বছর পর তদন্ত শেষে গত ১২ জুন দুদক এ মামলার চার্জশিট দাখিল করে দুদক। এতে ৫৯ মামলার মধ্যে ৫৮টির চার্জশিটেই আসামি হিসেবে বাচ্চুর নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়ার পর দুদক তার অনেকগুলো সম্পদের সন্ধান পেয়েছে। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুল হুদা আদালতে সেসব সম্পদ জব্দ ও রিসিভার নিয়োগের আবেদন করেন। ঢাকা মহানগর সিনিয়র জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান বুধবার এসব সম্পদ জব্দের আদেশ দেন।
দুদক কর্মকর্তারা জানান, বাচ্চুর যেসব সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে সেগুলোর দলিল মূল্য যা-ই থাকুক, বর্তমান বাজার মূল্যে সেগুলোর দাম হাজার কোটি টাকার ওপরে। যে কারণে তিনি আম মোক্তার নামার মাধ্যমে এসব সম্পত্তি হস্তান্তর ও বিক্রি করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বলে তাদের কাছে তথ্য রয়েছে।