The news is by your side.

বিশ্ব বাণিজ্যে  ডলারেই আস্থা রাখছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো

0 135

 

বিশ্ব বাণিজ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ডলারের আধিপত্য কয়েক দশকের। সাম্প্রতিককালে চীনের উত্থান ও ভূরাজনৈতিক কৌশল ওয়াশিংটনের একক আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। এর প্রভাবে কয়েক বছর ধরে গ্রিনব্যাক নামে পরিচিত মার্কিন মুদ্রায় রিজার্ভ কমিয়ে দিচ্ছিল বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একই সময়ে ডলারের বিপরীতে চীনা মুদ্রা ইউয়ান শক্তিশালী হচ্ছিল। কিন্তু সে অবস্থা ভিন্নতর গতি লাভ করেছে চলতি বছর।

সম্প্রতি মার্কিন ডলারে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখতে চাওয়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংখ্যা বেড়েছে। একই সময়ে কয়েক বছর ধরে ঊর্ধ্বমুখী থাকা ইউয়ান বা রেনমিনবির চাহিদা স্থবির হয়ে এসেছে।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা সংস্থা অফিশিয়াল মনিটারি অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশনস ফোরাম (ওএমএফআইএফ) জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে সুদহার বৃদ্ধির কারণে নিট ১৮ শতাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক-দুই বছরের মধ্যে ডলারের মজুদ বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে, যা গত বছর ছিল ৬ শতাংশ।

মোট ৫ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলারের আন্তর্জাতিক রিজার্ভ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত ৭৩টি প্রতিষ্ঠানের ওপর জরিপ করে এ তথ্য দিয়েছে ওএমএফআইএফ।

ডলারের রিজার্ভ কমার বিষয়ে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে। ২০২২ সালে রুশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৩০ হাজার কোটি ডলারেরও বেশি জব্দ করে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে বাণিজ্য জটিলতার আশঙ্কায় উদীয়মান অর্থনীতির বেশ কয়েকটি দেশ ওই সময় ডলারে লেনদেন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। তবে বর্তমান পরিসংখ্যান ডলারে আস্থা ফিরে আসার বিষয়টি নির্দেশ করছে বলে মন্তব্য ওএমএফআইএফের ম্যানেজিং ডিরেক্টর নিখিল সংঘানির।

তিনি বলেন, ‘স্বল্পমেয়াদে ডলারই সবচেয়ে শক্তিশালী মুদ্রা। এর বিপরীতে রেনমিনবি ততটা প্রভাবশালী নয়। এশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোয় আগের বছরের তুলনায় চলতি বছরে ডলারের উচ্চ চাহিদা দেখা যাচ্ছে। একই সঙ্গে ব্যাংকগুলোর রেনমিনবি রিজার্ভ কমেছে। একই পন্থা অবলম্বন করেছে লাতিন আমেরিকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোও।’

এক দশকের বেশি সময় ধরে ব্রাজিল, রাশিয়া, চীন, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিয়ে গঠিত জোট ব্রিকস যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে। গত বছর মিসর, ইথিওপিয়া, ইরান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ব্রিকসে যুক্ত হয়েছে। ব্রিকস নেতারা জোটভুক্ত দেশের অর্থনীতিতে ডলারের আধিপত্য কমানোর ওপর জোর দিয়েছেন। এ লক্ষ্যে দেশগুলোর অর্থ মন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোকে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। সর্বশেষ সম্মেলনে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাপোসা বলেছিলেন, ‘নিজস্ব মুদ্রা, বিকল্প অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও পেমেন্ট সিস্টেম ব্যবহার করার এটাই সর্বোত্তম সময়।’

গবেষণাগুলো অবশ্য ভিন্ন কথা বলছে। ওএমএফআইএফের প্রতিবেদন অনুসারে, স্বল্পমেয়াদি কিছু কারণে ডলারের আধিপত্য অক্ষুণ্ন থাকবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো মনে করে, শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রে ডলারে বিনিয়োগ করলে রিটার্ন বেশি পাওয়া যাবে। দেশটিতে খুব কম সময়ই বিনিয়োগের প্রতিকূল পরিবেশ বিরাজ করে। এছাড়া দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ সুদহার অপরিবর্তিত রেখেছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সহসাই এ সুদহার চীনের তুলনায় নিম্নগামী হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। ফলে রিজার্ভ কারেন্সি হিসেবে ডলারের চাহিদা অব্যাহত থাকবে।

ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পোল্যান্ড, রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউজিল্যান্ড ও সাউথ আফ্রিকান রিজার্ভ ব্যাংকের মতো কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ থেকে সর্বোচ্চ রিটার্নকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এ অনুসারে মার্কিন মুদ্রায় রিজার্ভ বাড়ানোর তাদের লক্ষ্যের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।

এক দশকের প্রবণতা বিশ্লেষণ করে ওএমএফআইএফের ম্যানেজিং ডিরেক্টর নিখিল সংঘানি বলেন, ‘রিজার্ভ রক্ষণাবেক্ষণে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো মনে করে বৈশ্বিক রিজার্ভে ডলারের অংশ খুব সামান্যই কমবে। আগামী দশ বছর পরও বিশ্বব্যাপী ৫৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই ডলার রিজার্ভ কারেন্সি হিসেবে থেকে যাবে। অন্যদিকে রেনমিনবির ক্ষেত্রে এ পরিমাণ হতে পারে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ।’

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) তথ্যানুযায়ী, গত শতাব্দীতে বিশ্বে ডলারে রিজার্ভ ছিল ৭০ শতাংশ। বর্তমানে তা ৫৮ শতাংশে নেমে এসেছে। অন্যদিকে রেনমিনবির রিজার্ভের পরিমাণ ২ দশমিক ৩ শতাংশ।

অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক মেরুকরণের মাঝে স্বর্ণের রিজার্ভ বেড়েছে। ওএমএফআইএফের তথ্যানুসারে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর স্বর্ণের রিজার্ভ ধরে রাখার গড় অনুপাত ১১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। গত বছর এ পরিমাণ ছিল ৯ শতাংশ। ১৫ শতাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বর্ণের পরিমাণ আরো বাড়াতে চায়। সাম্প্রতিক প্রবণতা বজায় থাকলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো এক-দুই বছরের মধ্যে আরো ৬০ হাজার কোটি ডলার মূল্যের স্বর্ণ কিনবে।

 

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.