বিশ্বব্যাংকের লজিস্টিকস পারফরম্যান্স সূচকে উন্নতি করেছে বাংলাদেশ। ২০২৩ সালের সূচকে বাংলাদেশ ১২ ধাপ এগিয়েছে, অবস্থান ১৩৯টি দেশের মধ্যে ৮৮তম। এর আগে ২০১৮ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১০০তম। সেবার তালিকায় ছিল ১৬০টি দেশ।
পয়েন্ট অর্জনের দিক থেকে বাংলাদেশের তেমন উন্নতি হয়নি। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ পেয়েছিল ৫-এর মধ্যে ২ দশমিক ৫৮, আর ২০২৩ সালে পেয়েছে ৫-এর মধ্যে ২ দশমিক ৬। তবে ২০২৩ সালে ২১টি দেশ তালিকা থেকে বাদ পড়েছে, সে কারণে এবার বাংলাদেশের পয়েন্ট তেমন একটা না বাড়লেও অবস্থানের উন্নতি হয়েছে।
ছয়টি মানদণ্ডের ভিত্তিতে এই মান নির্ণয় করা হয়েছে। প্রতিটি মানদণ্ডের জন্য পৃথকভাবে মান নির্ণয় করার পর গড় নির্ণয় করা হয়েছে। ১ থেকে ৫-এর মধ্যে মান নির্ণয় করা হয়েছে; ‘সবচেয়ে খারাপের’ জন্য ১ এবং ‘সবচেয়ে ভালোর’ জন্য ৫ নম্বর দেওয়া হয়েছে।
২০২৩ সালের এই সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার পাঁচটি দেশ স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। বাংলাদেশের আগে আছে ভারত (৩৮তম) ও শ্রীলঙ্কা (৭৩তম)।
পণ্য ও সেবা যেখানে উৎপন্ন হয়, সেখান থেকে শুরু করে সর্বশেষ ভোক্তার কাছে পৌঁছানো পর্যন্ত সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা বাণিজ্যের ক্ষেত্র ‘লজিস্টিকস’ নামে পরিচিত। অর্থাৎ, কারখানায় পণ্য তৈরির জন্য কাঁচামাল সংগ্রহ থেকে শুরু করে পণ্য ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেওয়া পর্যন্ত যে ব্যবস্থা, সেটাই লজিস্টিকস। সেবার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। এর সঙ্গে একটি দেশের ব্যবসায়িক সক্ষমতার প্রসঙ্গ জড়িত। অর্থাৎ, যাদের লজিস্টিকস ভালো, তাদের ব্যবসায়িক সক্ষমতা বেশি।
বিশ্বব্যাংক ২০০৭ সাল থেকে লজিস্টিকস পারফরম্যান্স ইনডেক্স (এলপিআই) প্রকাশ করে আসছে। এবার পাঁচ বছর পর এ সূচক প্রকাশ করল তারা। তবে এর মধ্যে বিশ্ববাণিজ্যে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটে গেছে। কোভিড মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ২০২২ সালে শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। সামগ্রিকভাবে ২০২০ সালের পর বিশ্বের সরবরাহ–ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটে গেছে।
যে ছয়টি মানদণ্ডের ভিত্তিতে সূচক প্রণয়ন করা হয়েছে, সেগুলো হলো শুল্ক, অবকাঠামো, আন্তর্জাতিক জাহাজীকরণ, লজিস্টিকস, সময়ানুবর্তিতা এবং জাহাজের অবস্থান নির্ণয়। তাতে বাংলাদেশ ৫-এর মধ্যে পেয়েছে যথাক্রমে ২ দশমিক ৩, ২ দশমিক ৩, ২ দশমিক ৬, ২ দশমিক ৭, ৩ এবং ২ দশমিক ৪।
২০১৮ সালের সূচকে এসব মানদণ্ডে বাংলাদেশের অর্জিত পয়েন্ট ছিল যথাক্রমে ২ দশমিক ৩, ২ দশমিক ৩৯, ২ দশমিক ৫৬, ২ দশমিক ৪৮, ২ দশমিক ৯২ এবং ২ দশমিক ৭৯।
মোট ছয়টি মানদণ্ডের মধ্যে বাংলাদেশ ২০১৮ সালের চেয়ে তিনটিতে এগিয়েছে, দুটিতে পিছিয়েছে এবং একটিতে অপরিবর্তিত রয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের ৬ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত দুই মাসব্যাপী পরিচালিত জরিপের ভিত্তিতে এই সূচক প্রণয়ন করা হয়েছে। বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক লজিস্টিক অপারেটর, অর্থাৎ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার ও এক্সপ্রেস ক্যারিয়ারদের অনলাইনে নির্দিষ্ট প্রশ্নমালা পাঠানো হয়। তারা যে উত্তর দিয়েছে, সেই আলোকে এই সূচক প্রণয়ন করা হয়েছে।