The news is by your side.

বিশ্ববাজারের অস্থিতিশীলতায় চাপে পড়েছে আমদানিনির্ভর জ্বালানি খাত

0 175

বিশ্ববাজারের অস্থিতিশীলতায় চাপে পড়েছে আমদানিনির্ভর জ্বালানি খাত। সংকটকে আরো গভীর করে তুলেছে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন। শিল্প খাতের কাঁচামাল ও জ্বালানি আমদানিতে ব্যয় এখন অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। উৎপাদন ও ভোক্তা মূল্যস্ফীতি—দুইয়ের গ্রাফই এখন ঊর্ধ্বমুখী। চাপ পড়ছে রিজার্ভেও।

আশঙ্কাকে আরো বাড়িয়ে তুলছে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার উপস্থিতি। প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গার উপস্থিতিতে এ মুহূর্তে বহিরাগত উদ্বাস্তুদের সবচেয়ে বড় আশ্রয়দাতা দেশ হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। আবার এ উদ্বাস্তুদের সহায়তায় আন্তর্জাতিক দাতাদের সহযোগিতাও এখন দিন দিন কমছে। একই সঙ্গে বাড়তি অর্থনৈতিক চাপে পড়ছে বাংলাদেশ।

জ্বালানি সমস্যা, রিজার্ভ দ্রুত কমে আসা ও রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু সংকটকে এ মুহূর্তে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় বিপদ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মাসেই দেশে রিজার্ভের পরিমাণ নেমে এসেছে ৩৭ বিলিয়ন ডলারের নিচে। যেখানে আগস্টের শেষেও এর পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৮৯৪ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। এর আগে জুলাইয়ের শেষে তা দাঁড়িয়েছিল ৩ হাজার ৯৫৯ কোটি ৯৯ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের (২০২১-২২) আগস্টের শেষে দেশে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৮০৬ কোটি ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরের জুলাইয়ে দেশে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১৩৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার। চলতি অর্থবছরের জুলাই শেষে তা ১৯৮ কোটি ১০ লাখ ডলারে দাঁড়াতে পারে বলে প্রক্ষেপণ রয়েছে। গত অর্থবছরের বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে রেকর্ড ৩৩ বিলিয়ন ডলারেরও বেশিতে। বাণিজ্য ঘাটতি বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে সরকারের চলতি হিসাবের ঘাটতির পরিমাণও।

আন্তর্জাতিক পণ্য ও জ্বালানি বাজারে দর বৃদ্ধি, ডলারের বিপরীতে টাকার ব্যাপক অবমূল্যায়নের কারণে দেশে মূল্যস্ফীতি এখন মারাত্মক আকার নিয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনায় দক্ষতার কারণে স্থিতিশীল ও উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর জনগণকে চলমান বৈশ্বিক সংকটের সময়েও চড়া মূল্য দিতে হয়নি।

উন্নয়ন অন্বেষণের চেয়ারপারসন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, জ্বালানি ও খাদ্যনিরাপত্তা চাপের মুখে আছে। রিজার্ভও দিন দিন কমে আসছে। আবার পুঁজি পাচারের বিষয়টিকেও যথাযথভাবে অ্যাড্রেস করা হয়নি। বাণিজ্যের ঘাটতি বা পুঁজি পাচারের কারণে আগে চলতি হিসাবের যে ঘাটতি দেখা যেত, তা অনেকটাই রেমিট্যান্স দিয়ে পুষিয়ে নেয়া যেত। এখন রেমিট্যান্স আহরণও কমছে। আবার পুঁজি পাচারও চলমান রয়েছে। বাণিজ্যে ওভার ইনভয়েসিং বা আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মতো ব্যাপারগুলো ঘটছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যে গরমিল দেখা যায়। আবার এ গরমিলের কারণ নিয়েও অনুসন্ধান হচ্ছে না। দেশে জ্বালানি নিরাপত্তাকে বড় চাপে ফেলেছে ভুল নীতির অনুসরণ। আন্তর্জাতিক বাজারে পেঁয়াজ বা চালের দাম বাড়লে খাদ্যনিরাপত্তাও চাপে পড়ে যায়। যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে এখন জ্বালানি ও খাদ্যের দাম বাড়ছে।

এখন পর্যন্ত চলতি বছরের প্রায় পুরোটা সময়ই বড় ধরনের জ্বালানি সংকটের মধ্য দিয়ে পার করেছে বাংলাদেশ। ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধির কারণে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি সংগ্রহ এখন বন্ধ। স্থানীয় পর্যায়ে উত্তোলনও পর্যাপ্ত মাত্রায় বাড়ানো সম্ভব হয়নি। বর্তমানে স্থানীয় উত্তোলন, দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় সংগৃহীত এলএনজি যুক্ত করার পরও জাতীয় গ্রিডে দৈনিক গ্যাস সরবরাহে চাহিদার তুলনায় ঘাটতি থেকে যাচ্ছে প্রায় ১৪০ কোটি ঘনফুট। গ্যাসের এ সংকট এখন শিল্প ও বিদ্যুৎ খাতকে বড় সমস্যার দিকে ঠেলে দিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, জ্বালানি-রিজার্ভ-রোহিঙ্গা বাংলাদেশের জন্য বড় সমস্যা। এর মধ্যে এক্সটারনাল বা বহিস্থ সমস্যাগুলোর ওপরে আমাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এ তিন সমস্যার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ আরো কিছু সমস্যা আছে, যেগুলোও কম না। যেমন আর্থিক খাতের সমস্যা। নানা রকম অনিয়ম, আইনের ব্যত্যয় হচ্ছে এ খাতে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক বলেন, চ্যালেঞ্জগুলো স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সমাধান হবে। পৃথিবীর সব দেশই কম-বেশি চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করছে, আমরাও করছি। উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই।

Leave A Reply

Your email address will not be published.