একাত্তর টেলিভিশনের কুমিল্লার নিজস্ব প্রতিবেদক কাজী এনামুল হক ফারুক ও ক্যামেরাপারসন সাইদুর রহমান সোহাগের ওপর হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় কুমিল্লা-৬ (সিটি করপোরেশন, আদর্শ সদর ও সেনানিবাস এলাকা) আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে আবারও কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি।
ওই আসনের নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান (যুগ্ম জেলা জজ) মো. সিরাজ উদ্দিন ইকবাল নৌকার প্রার্থী বাহাউদ্দিন বাহারকে এ নিয়ে পরপর তিনবার কারণ দর্শানোর নোটিশ দিলেন।
আগামীকাল রবিবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টায় অনুসন্ধান কমিটির অস্থায়ী কার্যালয় ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারকে অথবা তাঁর উপযুক্ত প্রতিনিধির মাধ্যমে ঘটনার ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।
সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় সব শেষ শুক্রবার কুমিল্লা-৬ সংসদীয় আসনের নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান এই কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন।
কারণ দর্শানোর নোটিশে বলা হয়, গত ২০ ডিসেম্বর আপনার নির্বাচনী প্রচারণা চলছিল। সকাল ১১টার সময় কুমিল্লা নগরীর শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামের ফটকে আপনার নির্দেশে আপনার নেতাকর্মীরা পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে একাত্তর টেলিভিশনের নিজস্ব প্রতিবেদক কাজী এনামুল হক ফারুক ও ক্যামেরাপারসন সাইদুর রহমান সোহাগের ওপর হামলা করে। এ সময় আপনার নেতাকর্মীরা সাংবাদিকদের মোবাইল ও লাইভ ডিভাইস ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
আপনার পিএস ক্যামেরাপারসন সোহাগকে এলোপাতাড়ি মারধর করেন। আপনি সাংবাদিকদের দেখে ‘কোনো টিভির সাংবাদিক আমার কাভারেজে আসবে না’ মর্মে তিক্ত মন্তব্য করেন। আপনি একাত্তর টিভির সাংবাদিকদের দেখে তেড়ে আসেন ও অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। আপনার পিএস ও আপনার নেতাকর্মীদের অনুরূপ কার্যকলাপ নির্বাচনী প্রচারণাকালে উচ্ছৃঙ্খল আচরণের শামিল, যা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশের পরিপন্থী।
এতে আপনি, আপনার পিএস ও আপনার নেতাকর্মীরা রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণবিধিমালা ২০০৮-এর ১১(ক) বিধির স্পষ্ট লঙ্ঘন করেছেন মর্মে প্রতীয়মান হয়। এমতাবস্থায় আপনিসহ আপনার পিএস ও বর্ণিত ঘটনার সঙ্গে জড়িত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কেন নির্বাচন কমিশনে সুপারিশসহ প্রতিবেদন পাঠানো হবে না মর্মে আগামী ২৪ ডিসেম্বর দুপুর ১২টায় নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি, কুমিল্লা-৬-এর অস্থায়ী কার্যালয় কুমিল্লা ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল স্বয়ং অথবা উপযুক্ত প্রতিনিধির মাধ্যমে হাজির হয়ে কারণ দর্শানোর জন্য আপনাকে নির্দেশ দেওয়া গেল।
প্রসঙ্গত গত ২০ ডিসেম্বর কুমিল্লায় লাইভ প্রস্তুতির সময় একাত্তর টিভির সাংবাদিক ও ক্যামেরাপারসনের ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে। গত বুধবার সকাল ১১টায় নগরীর শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামের ফটকে এ ঘটনা ঘটে। হামলার শিকার কুমিল্লা প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, কুমিল্লা টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি ও একাত্তর টেলিভিশনের নিজস্ব প্রতিবেদক কাজী এনামুল হক ফারুক ও ক্যামেরাপারসন সাইদুর রহমান সোহাগ।
লাইভ ডিভাইস ও মোবাইল ফোন আজ শনিবার পর্যন্ত ফেরত পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন এনামুল হক ফারুক।
এর আগেও গত মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) এমপি বাহারকে দুইটি শোকজ করেছেন কুমিল্লা-৬ সংসদীয় আসনে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান ও যুগ্ম জেলা জজ মো. সিরাজ উদ্দিন ইকবাল। সেগুলোও ২৪ ডিসেম্বর এমপি বাহার নিজে উপস্থিত হয়ে অথবা তাঁর উপযুক্ত প্রতিনিধির মাধ্যমে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি, কুমিল্লা-৬-এর অস্থায়ী কার্যালয়ে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
গত ১৮ ডিসেম্বর নগরীর ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কালিয়াজুরি পিটিআই স্কুল মাঠে উঠান বৈঠকে ‘যদি কোনো বিএনপি এবং জামায়াতের কোনো কর্মীকে কোনো প্রার্থীর পক্ষে পাওয়া যায় তার হাত-ঠ্যাং (পা) ভেঙে দেবেন। আমি আ ক ম বাহাউদ্দিন আপনাদের সঙ্গে আছি’ মর্মে উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান করায় এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ওই দুটি শোকজ করে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি। সর্বশেষ সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা নিয়ে হ্যাটট্রিক শোকজ খেলেন আওয়ামী লীগের এই প্রার্থী।
রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কুমিল্লা জেলা প্রশাসক খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান বলেন, সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় তাঁর (আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার) কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি।