বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে মানবতাবিরোধী অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর ভক্ত-সমর্থক জামায়াত নেতাকর্মী এবং আওয়ামী লীগের কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়েছে।
এ সময় পুলিশ সেখান থেকে কয়েকজনকে আটক করেছে বলে ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার হায়াতুল ইসলাম জানিয়েছেন।
সাঈদীর মৃত্যুতে মঙ্গলবার জোহরের নামাজের পর বায়তুল মোকাররমে গায়েবানা জানাজা করার দাবি তুলেছিল তার দল জামায়াতে ইসলামী। পুলিশ অনুমতি না দিলেও দুপুরে তারা মসজিদের বাইরে জড়ো হতে থাকে, তাতে উত্তেজনা তৈরি হয়।
এদিকে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সে সময় মসজিদে দোয়া ও মোনাজাত চলছিল। এর মধ্যে একদল জামায়াতকর্মী জোর করে গায়েবানা জানাজা শুরু করতে চাইলে মসজিদের ভেতরে আওয়ামী লীগ কর্মীদের সঙ্গে তাদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়।
উপ-কমিশনার হায়াতুল ইসলাম বলেন, ‘ভেতরে শোক দিবসের অনুষ্ঠান পালনকারীদের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার পর কিছু জামায়াত-শিবির কর্মী বায়তুল মোকাররমের উত্তর ফটকে এসে বিক্ষোভ শুরু করে। পুলিশ এলে তারা ভেতরে চলে যায়।তখন ভেতরে থাকা শোক দিবস পালনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে।’
পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনে, তবে পুলিশ মসজিদের ভেতরে ঢোকেনি বলে জানান হায়াতুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘পুলিশ বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে। যাচাই বাছাই করে তাদের বিষয়ে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।’
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা সাঈদী সোমবার রাতে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে হার্ট অ্যাটাকে মারা যান।
মৃত্যুর পর তার মরদেহ হস্তান্তরকে কেন্দ্র করেও জামায়াত-শিবির কর্মীরা রাতে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল এলাকায় তাণ্ডব চালায় বলে ঢাকার পুলিশ কমিশনার খন্দকার ফারুক আহমেদ জানান।
মঙ্গলবার সকালে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘যখন মরদেহ গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া শুরু হয়, তখন হাজার হাজার জামায়াত-শিবির লাশবাহী গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েন। তারা কোনো মতে এই মরদেহ পিরোজপুরে নিয়ে যেতে দেবে না। এসময় লাশবাহী গাড়ির সঙ্গে থাকা পুলিশ অফিসার ও পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা করে জামায়াত-শিবির। সঙ্গে তারা গাড়ি ভাঙচুর শুরু করে।’
একাত্তরে ‘দেইল্লা রাজাকার’ হিসেবে পরিচিত সাঈদী পরে ইসলাম ধর্মীয় বক্তা হিসেবে পরিচিতি কুড়ান। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে জামায়াতের মনোনয়নে পিরোজপুর-১ আসন থেকে সংসদ সদস্যও হয়েছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, নির্যাতন ও ধর্মান্তরে বাধ্য করার মত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জামায়াতের তখনকার নায়েবে আমির সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। পরে ২০১৪ সালে সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয় আপিল বিভাগ।