সমতল পেরিয়ে এবার পাহাড়ি জেলা বান্দরবানেও পাওয়া গেছে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদের বিপুল সম্পত্তির হদিস। জেলার সুয়ালক ইউনিয়নে ও লামার সরই ইউনিয়নে স্ত্রী, কন্যা ও নিজের নামে কিনেছেন শত একরের বেশি ভূমি।
ক্ষমতায় থাকাকালীন প্রভাব খাটিয়ে ক্রয় করা সম্পত্তির পাশাপাশি দখল করে নিয়েছেন অনেক দরিদ্র পরিবারের জমিও। এসব জমিতে গড়ে তুলেছেন বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষের বাগান, মাছের ঘের, গরুর খামারসহ আলিশান বাগান বাড়ি। দুদকের অভিযানের পর বেরিয়ে এসেছে এসব তথ্য।
সদর উপজেলার সুয়ালক ইউনিয়নের মাঝের পাড়া এলাকায় স্ত্রী জীশান মির্জা, মেয়ে ফারহিন রিশতা ও নিজ নামে বেনজীর কিনেছেন ২৫ একর জমি। সে জমির ওপর গড়ে তুলেছেন মৎস্য ঘের, গরুর খামারসহ আলিশান বাগান বাড়ি। যাতায়াতের জন্য করা হয়েছে রাস্তা। আশপাশে কোনো জনবসতি না থাকলেও বেনজীরের জায়গায় দেখা যায় বিদ্যুতের সংযোগ। আর অবকাশ যাপনের জন্য করা হয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত দোতলা বাড়ি। শুধু তাই নয়, জেলার লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের ডলুছড়ি মৌজায় বেনজীর কিনেছেন ২৫ একরের ৪টি লিজ করা পাহাড়ি প্লট।
স্থায়ী বাসিন্দা ছাড়া পার্বত্য এলাকায় অন্য কারও জমি কেনার বিধান না থাকায় শুধুমাত্র নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে নামমাত্র মূল্যে ক্রয় করেছেন এসব জায়গা। রেজিস্ট্রি না করায় প্রশাসনের কাছে নেই সেসব জায়গার কোনো দলিল। আর নিজে দেখাশোনা করতে না পারায় জমি ক্রয় করার পর মংওয়াইচিং নামে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতাকে লিখিতভাবে দায়িত্ব দেয়া হয় এসব জায়গা দেখাশোনা করার জন্য। তার মাধ্যমে সেখানে গড়ে তুলেছেন বিভিন্ন প্রজাতির বাগান। স্থানীয়দের অভিযোগ, নামমাত্র মূল্যে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে বেনজীর দখলে নিয়েছেন এসব জায়গা।
সরই ইউনিয়নের ডলুছড়ি টংগাঝিরি এলাকার বাসিন্দা অজিত ত্রিপুরা বলেন, ‘আমরা ছোট ছিলাম। অভাবের কারণে বাবা আমাদের ৫ একর জায়গা বেনজীর নামে এক পুলিশ অফিসারের কাছে বিক্রি করে দেয়। শুধু আমাদের পরিবার না, অনেক পরিবারের জায়গা পুলিশ অফিসার নামমাত্র কিছু টাকা দিয়ে নিয়ে নেয়। আবার অনেকেই বাধ্য হয়েছে জায়গা বিক্রি করে দিতে।’
টংগঝিরি এলাকার আরেক বাসিন্দা বলেন, এখানে প্রায় ৬৫-৭০টির মতো ত্রিপুরা পরিবার ছিল। এখন ২৫-৩০ পরিবার আছে। বেনজীর নামে এক পুলিশ কর্মকর্তা বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে জোর করে জায়গা দখল করে বাগান করেছেন।
সরই ডলুছড়ি মৌজায় বেনজীরের জায়গা দেখাশোনার কাজে নিয়োজিত ইব্রাহিম বলেন, ‘এক পুলিশ অফিসারের জায়গা শুনেছি, কিন্তু ওনার সঙ্গে আমার কখনও দেখা বা যোগাযোগ হয় নাই। আমাকে বান্দরবানের স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মংওয়াইচিং নিয়োগ দিয়েছেন। উনি আমাকে মাসে মাসে এসে বেতন দিয়ে যান। তিনি আরও বলেন, কাগজপত্রে ৫৫ একর জায়গা থাকলেও আমি দেখাশোনা করি ২৫ একর।’
এ বিষয়ে সুয়ালক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান উক্যনু মার্মা বলেন, বান্দরবানে বিভিন্ন এলাকায় বেনজীরের নামে অনেক সম্পত্তি আছে। আমার ইউনিয়নেও বেনজীরের সম্পত্তি আছে। যার মূল্য কয়েক কোটি টাকা হবে বলে জানান চেয়ারম্যান।
২০১৬ সালে র্যাবের মহাপরিচালক থাকা অবস্থায় ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে নামে-বেনামে বান্দরবানে জায়গা কিনেছেন বেনজীর আহমেদ।