সুজন হালদার
দেশের অন্যান্য জনপদের মত বানারীপাড়ায়ও করোনা সংক্রমণ দিন দিন বাড়ছে। বিশেষ করে, পৌর এলাকায় জনঘনত্ব বেশি হওয়ায় প্রতিটি ওয়ার্ডে সংক্রমিত রোগী রয়েছে। বিপরীতে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা এবং চিকিৎসা সুবিধা নেই বললেই চলে।
বাস্তবতা যখন এমন- তখন পৌর এলাকায় ওয়ার্ড ভিত্তিক লকডাউন,র কি বিকল্প থাকতে পারে?
প্রশ্ন উঠতে পারে- লকডাউন হলেই কি বানারীপাড়া করনা মুক্ত হবে! উত্তর- হ্যাঁ । তবে শুধু লক ডাউন ঘোষণা করলেই পুলিশের ভয়ে কিংবা পৌর কর্তৃপক্ষের ভয় করোনা পালাবে না। লকডাউন কার্যকর করতে হবে শতভাগ।
ফের প্রশ্ন উঠতে পারে- কিভাবে ? বানারীপাড়া পৌরসভার আয়তন কিংবা পরিধি খুবই ছোট। অবশ্য জনঘনত্ব অনেকটা বেশি। এর ওপর কর্মহীন মানুষের সংখ্যাও কম নয়। মানুষের ভোগান্তি যাতে কম হয় কিংবা নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করে লকডাউন বাস্তবায়ন করতে হবে।
নিয়ম অনুযায়ী , পৌরসভা কর্তৃপক্ষ লকডাউন বাস্তবায়ন করবে। অবশ্য এর আগে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে বানারীপাড়া পৌর এলাকাকে রেড কিংবা ইউলো জোন ঘোষণা করতে হবে।
পৌরসভা কর্তৃপক্ষ কিভাবে লকডাউন বাস্তবায়ন করবে? পৌর মেয়র একা এটি বাস্তবায়ন করতে পারবেন না। কারণ -এখানে আরো অনেক বিষয় জড়িত রয়েছে।
পৌরসভার সবগুলি ওয়ার্ডে সংক্রমিত রোগীদের চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করা, যাদের উপসর্গ রয়েছে তাদের নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করা,তাদের বাসায় খাবার সহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পৌঁছে দেয়া, যারা সংক্রমিত না তাদেরও প্রয়োজনীয় সবকিছু বাসায় পৌঁছে দেয়া কিংবা নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে যাতে সংগ্রহ করতে পারে সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
এক্ষেত্রে পৌর মেয়র কভিড নাইনটিন নিয়ন্ত্রণে একটি কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করবেন সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরের লোকজনের সমন্বয় করে। একইসঙ্গে প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ড কাউন্সিলরগনকে প্রধান করে পৃথক ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করবেন। স্থানীয় প্রশাসন ,স্বাস্থ্য বিভাগ, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ লকডাউন বাস্তবায়নে সম্পৃক্ত থাকবেন।
বানারীপাড়া পৌরসভার বিদ্যমান বাস্তবতায় কাজটি খুব কঠিন নয়। বানারীপাড়া পৌরসভার মেয়র সুভাষ চন্দ্র শীল বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক, এর আগে তিনি বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন। সঙ্গত কারণেই স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের শতভাগ সমর্থন ও সহযোগিতা তিনি পাবেন। বানারীপাড়া পৌর মেয়রের জন্য বাড়তি সুবিধা – স্থানীয় সংসদ সদস্য মোঃ শাহে আলম তার দীর্ঘদিনের বন্ধু এবং তাদের মধ্যে সম্পর্ক সৌহার্দ্যপূর্ণ। স্থানীয় সংসদ সদস্য সেক্ষেত্রে পৌর মেয়রকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান করবেন।
মূলত পৌর মেয়রের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে-স্বাস্থ্যবিভাগের সহায়তা পাওয়া। একইসঙ্গে কর্মহীন অসহায় মানুষদের খাদ্য সহায়তাসহ অন্যান্য নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা।
২১ দিনের জন্য এই কাজটি করা খুব সহজ নয়। তবে শতভাগ নাগরিক সম্পৃক্ততা ও সহায়তা নিশ্চিত করতে পারলে কাজটি খুবই সহজ। আরো সহজ করে বললে, সমন্বিতভাবে লকডাউন বাস্তবায়ন করা।
পৌরসভার কেন্দ্রীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান হিসেবে পৌর মেয়রকে সমন্বয়ের দায়িত্ব নিতে হবে। আমি মনে করি, আর সময়ক্ষেপণ করা উচিত হবে না। স্থানীয় প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ সহায়তা না করলে কিংবা আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কথা বললে তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ এর কোন বিকল্প নেই। সব দিক বিবেচনায় রেখেই বানারিপাড়া পৌর মেয়রকে অনুরোধ জানাবো, আগামী ২/৩ দিনের মধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে বানারীপাড়া পৌর এলাকা শতভাগ লোকজনের আওতায় নিয়ে আসুন। অন্যথায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। তখন আর কিছুই করার থাকবেনা। তিন সপ্তাহের লকডাউন এ আর্থিক ক্ষতি হবে একথা সত্য, তবে এর চেয়েও অধিক সত্য, মানুষের জীবন বাঁচবে।