বিশাল প্রমোদতরী ‘গঙ্গা বিলাস’। এর আলোঝলমলে অন্দরমহল যেন পাঁচতারকা হোটেল। নানা আনন্দ আয়োজন রাখা হয়েছে এর ভেতরে। ভারতের উত্তরপ্রদেশের বারানসী থেকে যাত্রা শুরু করেছে এটি। বাংলাদেশের নদীপথ দিয়ে পৌঁছাবে আসামে। প্রমোদতরীটি বিশ্বের দীর্ঘতম নৌপথ তিন হাজার ২০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেবে। এ যাত্রায় সময় নেবে ৫১ দিন। এর মধ্যে বাংলাদেশে অবস্থান করবে ১৫ দিন। যাত্রাপথে পড়বে অন্তত ৫০টি ঐতিহাসিক ও স্থাপত্য তাৎপর্যময় স্থান। এগুলো ঘুরে দেখবেন এতে আরোহী পর্যটকরা।
‘গঙ্গা বিলাস’ নামকরণকে যথার্থই বলতে হবে। কারণ, এতে আরোহণ বিলাসই বটে। এ জাহাজে ভ্রমণে প্রতিদিন মাথা পিছু ভাড়া গুনতে হবে ২৫ থেকে ৫০ হাজার রুপি। ৫১ দিনের ভ্রমণে ন্যূনতম খরচ পড়বে ১২ লাখ ৫০ হাজার রুপি, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ১৬ লাখ টাকা।
গতকাল বারানসীতে ভিডিও কনফারেন্সে প্রমোদতরী এমভি গঙ্গা বিলাস উদ্বোধন করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ সময় ভারতের কেন্দ্রীয় নৌ-পরিবহন মন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ও আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধনী যাত্রায় প্রমোদতরীতে যাত্রী হিসেবে আছেন সুইজারল্যান্ডের ৩২ জন ও এক জার্মান পর্যটক। এ ছাড়া সাতজন ক্রু রয়েছেন।
গঙ্গা বিলাসের দৈর্ঘ্য ৬২ দশমিক ৫ মিটার; প্রস্থ ১২ দশমিক ৮ মিটার। এতে আছে এলইডি টেলিভিশন, স্মোক ডিটেক্টর লাইফ জ্যাকেট, ফ্রেঞ্চ ব্যালকনি, ৪০ আসন বিশিষ্ট রেস্তোরাঁ, স্পা, সানডেক ইত্যাদি। রয়েছে ময়লা পানি পরিশোধনের ব্যবস্থাও। এ পরিশোধন পল্গ্যান্ট নদী থেকে পানি তুলে তা পর্যটকদের জন্য গোসল ও অন্য কাজের উপযোগী করবে। ভ্রমণকালে বিনোদনের জন্য থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন। এ ছাড়া ফিটনেস ঠিক রাখতে জিমের ব্যবস্থাও রয়েছে।
প্রমোদতরীটি বারানসী থেকে বিহার-কলকাতা ছুঁয়ে বাংলাদেশ হয়ে আসামের ডিব্রুগড় পর্যন্ত যাবে। এর মধ্যে এটি বাংলাদেশের মধ্যে প্রায় ১ হাজার ১০০ কিলোমিটার নদীপথ অতিক্রম করবে। ভ্রমণকালে ২৭টি নদীর পানিতে ভাসবে গঙ্গা বিলাস। তবে সুন্দরবন ডেল্টা, গঙ্গা আরতি, আসমের মায়ংয়ের কালো জাদু এবং কাজিরাঙ্গা জাতীয় উদ্যানের মতো অন্তত ৫০টি স্থানে থামবে।
বারানসীর রামনগর বন্দরের সন্ত রামদাস ঘাট থেকে তরীটি যাত্রা শুরুর পর বিহারের গাজীপুর-বক্সার-ছাপরা-পাটনা-মুঙ্গের-বৌদ্ধগয়া-নালন্দা, ঝাড়খে র সাহিবগঞ্জ, পশ্চিমবঙ্গের ফারাক্কা-মুর্শিদাবাদ হয়ে কলকাতায় পৌঁছবে। এক দিন বিরতি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন অংশের নামখানা-সজনেখালী হয়ে তা সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে প্রবেশ করবে। পরে মোংলা বন্দর-বাগেরহাট-মোরেলগঞ্জ-বরিশাল-সোনারগাঁ হয়ে ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকায় পৌঁছবে। এর পর আরিচা-টাঙ্গাইল-সিরাজগঞ্জ-চিলমারী-আসামের ধুবরি-গোয়ালপাড়া হয়ে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে গৌহাটিতে পৌঁছবে। পরে ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে মাজুলী আইল্যান্ড পৌঁছবে। ১ মার্চ আসামের ডিব্রুগড়ে গিয়ে যাত্রা শেষ করবে। বিশ্বের এ দীর্ঘতম নৌরুটেই তরীটি যাতায়াত করবে।
প্রমোদতরীর পরিচালক রাজ সিং জানান, তিন তলা জাহাজটিকে সাজিয়ে তুলতে খরচ হয়েছে ৬৮ কোটি রুপি (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকার বেশি)।
গঙ্গা বিলাস নিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সর্বনন্দ সোনোয়াল বলেন, গঙ্গা বিলাসের যাত্রা বিদেশি পর্যটকদের কাছে ভারত ও বাংলাদেশের ইতিহাস-সংস্কৃতি, আধ্যাত্মিকতাকে বুঝতে সহায়তা করবে।