বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে লন্ডনে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সদস্যদের অংশগ্রহণে গোলটেবিল বৈঠক হয়েছে।
ব্রিটেনের পার্লামেন্টের ‘অল-পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ ফর ইন্টারন্যাশনাল ফ্রিডম অব রিলিজিয়ন অর বিলিফ’র পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশ স্টাডি সার্কেল লন্ডনের উদ্যোগে লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টারে পোর্টকালিস হাউসের থ্যাচার রুমে বুধবার এ আয়োজন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা, মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ ও সংসদ সদস্য অ্যারোমা দত্ত এতে বক্তব্য দেন।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক বিশেষ দূত ও ইন্দো-প্যাসিফিক ছায়ামন্ত্রী ও পার্লামেন্ট সদস্য ক্যাথেরিন ওয়েস্ট, কনজারভেটিভ দলীয় পার্লামেন্ট সদস্য সাকিব ভাট্টি, লেবার দলীয় পার্লামেন্ট সদস্য স্টিফেন টিমস, লর্ড মেনডেলসন ও স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির লিজা ক্যামেরন তাদের দলের পার্লামেন্ট সদস্যদের প্রতিনিধি হয়ে এতে উপস্থিত ছিলেন। যুক্তরাজ্য সরকারের ফরেন, কমনওয়েলথ ও ডেভেলপমেন্ট মন্ত্রণালয়, লন্ডনে বাংলাদেশ হাই কমিশন এবং চার্চ অব ইংল্যান্ডের প্রতিনিধিরাও এতে উপস্থিত ছিলেন।
সংসদ সদস্য অ্যারোমা দত্ত বলেন, ‘বিভিন্ন ধর্মের বৈচিত্রপূর্ণ মেলবন্ধন রয়েছে বাংলাদেশের। কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা (ধর্মীয় সংঘাতমূলক) রয়েছে। তবে সেগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, এবং রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের ঘটনা। ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলো সরকারের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান তৈরি করতে চায়। সংখ্যালঘু ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে তেমন কোনো সমস্যা নেই। আমরা বেশ হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে আছি।’
ড. গওহর রিজভী বলেন, ‘বাঙালি সংস্কৃতিতে ধর্মভিত্তিক বৈষম্যের কোনো অস্তিত্ব নেই। সাংস্কৃতিক ও ভাষিক বিবেচনায় আমরা সবাই একই উৎস থেকে এসেছি। ধর্মীয় স্বাধীনতায় আঘাত হানে এমন কোনো আইন নেই এবং ধর্মভিত্তিক সংখ্যালঘু নির্যাতনের চিহ্নমাত্র নেই বাংলাদেশে। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের প্রশ্নে আমরা সবাই এক।’
যুক্তরাজ্যের অল-পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপের পক্ষ থেকে গোলটেবিলে সভাপতিত্ব করেন ব্যারোনেস ভার্মা। তিনি বলেন, ‘আমি নির্বাচন পর্যবেক্ষক এবং সরকারের মন্ত্রী হিসেবে বাংলাদেশ সফর করেছি। বাংলাদেশের মূল সক্ষমতার যে জায়গাটি, তা নিয়ে এখনও তেমন আলাপ হয়নি। সরকারের স্বচ্ছতা, অর্থনৈতিক সক্ষমতা ও সবার জন্য অধিকার ও স্বাধীনতা নিশ্চিতের যে গল্প বাংলাদেশে রচিত হচ্ছে তা শোনাটা সত্যিই আনন্দদায়ক ছিল।’
গোলটেবিলে বক্তারা বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধর্মনিরপেক্ষ চিন্তা-ভাবনা এবং সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নানাবিধ উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন। যদিও কখনও কখনও কিছু ধর্মান্ধ গোষ্ঠী এ দেশের সম্প্রীতি বিনষ্টে তৎপর হয়েছিল বলেও উল্লেখ করেন বক্তরা।
বাংলাদেশ স্টাডি সার্কেল লন্ডনের চেয়ার সৈয়দ মোজাম্মেল আলী বলেন, ‘গোঁড়া ধর্মান্ধ চিন্তা যে অঞ্চলে সর্বত্র বিরাজমান, সেখানে বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির আলোকবর্তিকা আকারে দেখা দিয়েছে। আজকে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের সদস্যদের আমরা আনন্দচিত্তে এ বছরের শেষভাগে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানাতে চাই, তারা যাতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উদারহণ নিজ চোখে দেখে আসতে পারেন।’