The news is by your side.

বাংলাদেশ থেকে বিদেশে সম্পদ নিইনি: সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী

নির্বাচনী হলফনামায় বিদেশের সম্পদ উল্লেখ করার জন্য কোনো কলাম (ছক) নেই

0 157

 

বিদেশে নিজের বড় অঙ্কের সম্পদ আছে বলে স্বীকার করেছেন চট্টগ্রাম-১৪ আসনে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য এবং সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। তবে তিনি দাবি করেছেন, ওই সম্পদ বাংলাদেশ থেকে নেওয়া নয়, কোনো দুর্নীতির টাকাও নয়; বরং বিদেশে পড়াশোনা করার সময় থেকে বহু বছর নিজে ব্যবসা করে এবং তাঁর বাবার বিদেশের ব্যবসা থেকে অর্জিত সম্পদ উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছেন। করোনার সময় ব্যাংক ঋণ নিয়ে ইংল্যান্ডে বাড়ি কিনেছেন। এ কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নেওয়ার কোনো দরকারই ছিল না।

গতকাল শনিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি করেছেন সাইফুজ্জামান চৌধুরী। নিজেকে অত্যন্ত ‘ক্লিন’ (স্বচ্ছ) দাবি করে তিনি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেছেন, সরকার চাইলে সুশীল সমাজ, সাংবাদিক এবং সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সমন্বয়ে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি করে তদন্ত করে দেখতে পারে মন্ত্রিত্বকালীন কোনো দুর্নীতি করেছি কিনা। কেউ যদি প্রমাণ করতে পারেন এক টাকার দুর্নীতি করেছি, তাহলে এমপি পদ ছেড়ে দেব। আমি বিব্রত, দল ও সরকারকে বিব্রত করতে চাই না।

তবে বিদেশে সম্পদ থাকার তথ্য প্রকাশ না করা নিয়ে তাঁর বক্তব্য নাকচ করে দিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এবং সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

গত সংসদ নির্বাচনের কিছুদিন আগে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ করে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা টিআইবি নাম প্রকাশ না করে জানিয়েছিল, সরকারের তৎকালীন এক মন্ত্রীর বিদেশে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা মূল্যের বিনিয়োগ আছে, যা তিনি হলফনামায় উল্লেখ করেননি। এরপর তথ্য অনুসন্ধান করে সমকাল খবর প্রকাশ করে। যার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করা হয়েছে, তিনি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। শুধু যুক্তরাজ্যে প্রায় ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে তাঁর। সম্প্রতি মার্কিন গণমাধ্যম ব্লুমবার্গও তাঁর সম্পদ নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে যুক্তরাষ্ট্রেও তাঁর কোটি কোটি টাকার সম্পদ থাকার তথ্য দেওয়া হয়। এমন প্রেক্ষাপটে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করে সংবাদ সম্মেলন করলেন সাইফুজ্জামান।

তিনি বলেন, প্রশ্ন উঠেছে– বিদেশের সম্পদ কেন? আমি কেন হলফনামায় তা গোপন করেছি। এটা বহুবার পরিষ্কার করেছি, তথ্য গোপন আমি করিনি। বাংলাদেশের নির্বাচনে আয়কর নথির সঙ্গে মিল রেখে হলফনামা করতে হয়। ২০১২ সালে বাবার মৃত্যুর পর তাঁরই ধারাবাহিকতায় নির্বাচন করি। এবারেরটি নিয়ে এটি আমার চতুর্থ নির্বাচন। হলফনামা তৈরি করলে আমি শুধু স্বাক্ষর করে দিই।

তিনি বলেন, নির্বাচনী হলফনামায় বিদেশের সম্পদ উল্লেখ করার জন্য কোনো কলাম (ছক) নেই। যেহেতু কলাম নেই এবং আগে এমন তথ্য দিইনি, তা ছাড়া দেশ ও বিদেশের ব্যবসাকে কখনও এক করিনি। যেহেতু কলামই নেই, আমি কেন বাড়তি তথ্য দিতে যাব? এ কারণে সরল বিশ্বাসে করেছি, খারাপ উদ্দেশ্যে নয়।

সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আখতারুজ্জামান চৌধুরী আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও ব্যবসায়ী ছিলেন। সেদিকে ইঙ্গিত করে সাইফুজ্জামান বলেন, আমার ব্যবসা ও রাজনীতিকে এক করবেন না। আমি ব্যবসায়ী কাম রাজনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ কাম ব্যবসায়ী না। পারিবারিক সূত্রেই ব্যবসায়ী, একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীর সন্তান। আমার ব্যবসার বয়স অনেক দিনের। যখন যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করতাম, তখন থেকে। ছোটবেলা থেকেই লন্ডন, আমেরিকায় আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ছিল। ১৯৬৭ সাল থেকে বিদেশে ব্যবসা পরিচালনা করেছি। ট্রেডিং ব্যবসার পাশাপাশি আমাদের রেস্টুরেন্ট ব্যবসা, সুপারমার্কেট, রিয়েল এস্টেটসহ অনেক ভেঞ্চার ছিল। অনেক কারণে হয়তো আমরা ‘লো-প্রোফাইল’ ছিলাম। তবে অনেকে ‘আনঅফিসিয়ালি’ জানত।

বিদেশে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি কেন নেননি– সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, যে টাকা বাংলাদেশ থেকে নিইনি, তার জন্য কেন অনুমতি নেব। বাংলাদেশ থেকে অনুমতি ছাড়া টাকা নিলে বিশাল অপরাধ করতাম।

তিনি বলেন, আপনাদের উচিত আমাদের প্রশংসা করা। এই কারণে যে, আমরাও বিদেশে কিছু করতে পারি। বাংলাদেশ থেকে টাকা না নিয়েও ব্যবসা করা যায়। খবরে যা এসেছে, মর্টগেজ… অর্থাৎ লোন। ওখানে আমার বিশাল অংশ লোন আছে এবং উত্তরাধিকার সূত্রে আমার অংশে কিছু এসেছে।

বড় অঙ্কের বিনিয়োগ বিষয়েও ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি। বলেন, আমার বাবার বিদেশের ব্যবসা প্রায় ৫০ বছরের। ব্লুমবার্গের খবরের সঙ্গে আমি পুরোপুরি একমত না।

নিজেকে অত্যন্ত ‘ক্লিন’ মানুষ দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আল্লাহ তায়ালা আমাকে পাঠিয়েছেন, জাতিকে কিছু দেওয়ার জন্য, নেওয়ার জন্য নয়। আমার বাবা বাংলাদেশের প্রথম উদ্যোক্তাদের একজন। তিনি ব্যাংক করেছেন, বীমা কোম্পানি করেছেন। আমাদের শিল্পপ্রতিষ্ঠান ছিল। বাবা আমাদের প্রশিক্ষিত করে দিয়ে গেছেন, আমরা ব্যবসা এগিয়ে নিয়ে গেছি। ব্যবসা দেশেও করতে হবে, বিদেশেও… আমরা সেভাবেই প্রশিক্ষণ পেয়েছি। মন্ত্রী হয়েছিলাম বলে কি সব ব্যবসা ছেড়ে দেব। এটা তো সম্ভব না।

এ সময় ভূমি মন্ত্রণালয়ে বড় পরিবর্তনের দাবি করেন তিনি বলেন, ভূমি মন্ত্রণালয় একটা স্ট্যাগন্যান্ট (স্থবির) মন্ত্রণালয় ছিল। আমি যে কাজ করি, তার গভীরে যাই এবং অ্যাগ্রিসিভলি করি। আমি পারফর্ম করি, সময় নষ্ট করি না। গত সরকারের আমলে এই মন্ত্রণালয়টি ছিল বেস্ট পারফরমার মিনিস্ট্রি, যার কারণে আন্তর্জাতিক পুরস্কারও পেয়েছে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে কখনও হয়নি। অনেক আইন সংস্কার করেছি, ডিজিটালাইজেশন করেছি। মানুষকে হয়রানিমুক্ত সেবা দিতে কাজ করেছি। অনেকে দুর্নীতির কথা বলেন। স্বচ্ছতা নিশ্চিত করেই এসব কাজ করেছি, খারাপ উদ্দেশ্য থাকলে কখনোই এগুলো করতাম না।

Leave A Reply

Your email address will not be published.