হৃদরোগের জরুরি চিকিৎসায় ব্যবহৃত রিংয়ের দাম নিয়ে সৃষ্ট চলমান বিশৃঙ্খলা সহসাই কাটছে না। দীর্ঘ দুই ঘণ্টা বৈঠকের পরও দাম নিয়ে সৃষ্ট সংকটের সমাধান দিতে পারেনি জাতীয় কমিটি।
রিংয়ের দাম সমন্বয়ে রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় দাম সমন্বয়ের জাতীয় কমিটি নিয়ে জরুরি বৈঠক করে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। বৈঠকে জাতীয় কমিটি ১৩ সদস্যের বাইরে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। তবে হার্টের রিং সরবরাহ প্রতিষ্ঠানগুলোকে ডাকা হয়নি।
১২ ডিসেম্বর ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর হার্টের স্টেন্টের (রিং) সর্বোচ্চ খুচরা দাম নির্ধারণ করে, যা আগের চেয়ে কম। সংশ্লিষ্ট হাসপাতালগুলোকে চিঠি দিয়ে বলা হয়, ১৬ ডিসেম্বর থেকে নির্ধারিত দামে স্টেন্ট বিক্রি করতে হবে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের তিন কোম্পানির ক্ষেত্রে ‘মার্কআপ ফর্মুলা’ অনুসরণ করা হলেও রিং সরবরাহকারী ইউরোপের ২৪টি কোম্পানিকে এ তালিকায় রাখা হয়নি।
সেদিন থেকেই হার্টের রিং সরবরাহ ও ব্যবহার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ইউরোপের ২৪টি রিং সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানপন্থি বাংলাদেশ মেডিকেল ডিভাইস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনভুক্ত ব্যবসায়ীরা। দাম নির্ধারণে বৈষম্যের অভিযোগ এনে সরবরাহকারী ব্যবসায়ীরা ধর্মঘট ডাক দেয়। এটি এখনও চলমান।
এতে সঠিক আকৃতির রিং না পাওয়ায় বিভিন্ন হাসপাতালের অস্ত্রোপচার কক্ষ থেকে রোগীকে ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটছে। রোগীদের যেমন দুর্ভোগ বেড়েছে, তেমনি দ্বিগুণ দাম দিয়ে রিং কিনতে হচ্ছে। সংকট নিরসনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) হৃদরোগ বিভাগ থেকে উপাচার্যের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
বৈঠকের পর ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. নুরুল আলম বলেন, ‘ওনারা তো হাইকোর্টে গেছেন। ২ তারিখে কোর্ট খুলবে। তখন আদালত যে ধরনের নির্দেশনা দেবে তার আলোকে প্রয়োজনীয় কমিটি বসে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।’
তিনি বলেন, ‘প্রথমত, যে প্রাইস ফিক্সড করা হয়েছে, সেটা জনস্বার্থে জাতীয়ভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল। দ্বিতীয়ত, তারা যেহেতু বলছে প্রাইস সঠিক নয়, সে হিসেবে অভিযোগ করা হয়েছে এবং কোর্ট খোলার পর নির্দেশনা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
নতুন করে জাতীয় কমিটি কি আর কোনো নির্দেশনা দেবে- এই প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আদালতের নির্দেশনার পর আর কোনো সিদ্ধান্তের দরকার নেই। কারণ, সরকার যেটা করেছে জনস্বার্থেই করেছে।’
বৈঠকের পর নতুন কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় সরবরাহকারী ব্যবসায়ীরা ধর্মঘট অব্যাহত রাখছে। একটি ইউরোপীয় রিং সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের মালিক জিল্লুর রহমান বলেন, ‘তারা যে জনস্বার্থের কথা বলছে, আসলে জনস্বার্থে কিছুই হয়নি। বাংলাদেশে যে এত রোগী- যেখানে রিং এর দাম এখনো ৯০ হাজার টাকা, ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা এখনো আছে, সেখানে জনস্বার্থে কি করা হলো? আমাদের যে রিকোয়ারমেন্ট তার এক তৃতীয়াংশও পূরণ হচ্ছে না। খোঁজ নিয়ে দেখেন, অন্যভাবে প্রোডাক্ট চলে আসছে। ওনারা যে মূল্য নির্ধারণ করেছেন, সেটা সবার জন্য সমান করেননি। তাই সর্বোচ্চ আদালত যে সিদ্ধান্ত দেবে সেটাই আমরা মেনে নিবো।’
জাতীয় হৃদরোগ পরিচালক অধ্যাপক মীর জামাল উদ্দিন বলেন, ‘পুরো বিষয়টি যেহেতু আদালতের কাছে তদন্তাধীন, এ ব্যাপারে আমার কোনো মন্তব্য নেই। এটি ডিজিটিআই দেখবে।’