দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের সন্তান ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমদ সোহেল তাজ। ২০১২ সালে রাজনীতিতে থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন। বর্তমানে রাজনীনিতে সক্রিয় না থেকেও নিজেকে প্রাসঙ্গিক রেখেছেন নানা অনিয়মের প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন সোহেল তাজ।
তাজ বলেন যোগ্যরা তার যোগ্যতা অনুযায়ী সঠিক জায়গায় বসতে পারছে না। এ কারণে সমাজে যুব সমাজের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে।
তার কাছে জানতে চাওয়া হয় বিদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা কেন আমাদের দেশের তুলনায় বেশি উন্নত? জবাবে সোহেল তাজ বলেন, একটা মানুষের জীবনে শিক্ষা কতটুকু কার্যকর হবে আমরা সেটা মিলিয়ে দেখি না। এটার প্রয়োজনও মনে করি না। বর্তমান শিক্ষানীতিতে প্র্যাকটিক্যাল এপ্লিকেশনের অনেক অভাব আছে।
আমরা মুখস্ত শিক্ষার উপর নির্ভর করি। জ্ঞানটাকে মুখস্ত করে নেই, বিধায় প্রয়োগের জায়গায় মুখ থুবড়ে পড়ি।
ফলে এর প্রভাবটা সর্বক্ষেত্রে ছড়িয়ে গেছে। এটা আমাদের সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন হোক, প্রাইভেট সেক্টর হোক। সর্বক্ষেত্রে যোগ্য ব্যক্তির অভাব দেখা যাচ্ছে।
অথচ বিদেশে প্র্যাকটিক্যাল এপ্লিকেশনটাকে প্রাধান্য দেয়। কেবলমাত্র থিউরিটিক্যাল নয়, তারা অ্যানালাইটিক্যাল ক্যাপাবিলিটাকে এগিয়ে নেয়। যাতে যেকোনো বিষয়কে চিন্তা করতে পারি এবং বিশ্লেষণ করতে পারি। বিশ্লেষণ করতে না পারলে প্রয়োগের সময় আসলে সেটা কাজে দিবে না। কারণ বুঝতে হবে বিষয়বস্তুটা।
আমার মনে হয়, এটার সব থেকে বড় ঘাটতি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায়। আমি মনে করি এ বিষয়টায় আমাদের মনোযোগ দেওয়া অতীব জরুরী।
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় কি কি পরিবর্তন আনা দরকার? এমন প্রশ্নোত্তরে সোহেল তাজ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের কী চাওয়া ছিল? কিসের জন্য এবং কেন যুদ্ধ করেছিলাম? এগুলো আমাদের প্রথমে জানতে হবে। আমরা মূলত, ন্যায়বিচারের জন্য যুদ্ধ করেছিলাম। সবার সমান অধিকার ও ধর্মনিরপেক্ষতা নিশ্চিতের জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম। গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য যুদ্ধ করেছিলাম।
এগুলোর সবকিছুর মূলে আছে মেরিট বেজ সমাজ (মেধাভিত্তিক সমাজ)। যে সমাজে আমার আপনার সন্তান যোগ্যতা দিয়ে এগিয়ে যাবে, আমাদের শিক্ষা পদ্ধতি হবে এমন। অ্যানাইলাটিক্যাল ক্যাপাসিটি তৈরি হবে শিক্ষার্থীদের। ডিগ্রি নিয়ে যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি করবে। কিন্তু দেখা যায় উল্টো চিত্র। একজন যোগ্য, কিন্তু আরেকজন যোগ্যতা না থাকা সত্বেও টাকা বা প্রভাব খাটিয়ে চাকরি নিয়েছে। এভাবে সমাজের অবক্ষয় ঘটছে। এভাবেই আমরা আমাদের সমাজ ব্যবস্থার উপর আস্থা হারিয়ে ফেলছি।
এটা যখন ছড়িয়ে পড়ে তখন যুব সমাজ টিকিট কেটে বিদেশে চলে যাচ্ছে। যেটার প্রবণতা বাংলাদেশে দেখা যাচ্ছে। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও যখন সে যোগ্য জায়গায় বসতে পারছে না। তখন তারমধ্যে স্বাভাবিকভাবে হতাশা তৈরি হবে। বিদেশে কিন্তু এমনটি ঘটে না। যোগ্যতার ভিত্তি কর্মক্ষেত্রে নিয়োজিত হচ্ছে।
সোহেল তাজ আরও বলেন, আমরা যদি নতুন প্রজন্মকে এ আস্থাটা দিতে পারি যে, চেষ্টা করলে বা যোগ্যতা অর্জন করলে এর একটা ফল আসবে। এতে মুক্তিযুদ্ধের মূল চাওয়া পূরণ হবে। সেটা আমরা এখনো পূরণ করতে পারিনি।