সালমান খান ও অক্ষয় কুমারকে নিয়ে বলিউডে কানাঘুষো শোনা যায়, তাঁদের বয়স বাড়লেও এখনও তাঁরা বড়পর্দায় নবীন নায়কদের চরিত্রই পেয়ে থাকেন। কিন্তু তাঁরা যে সহ-অভিনেত্রীদের সঙ্গে কাজ করেন, তাঁরা অনেক কম বয়সি। বলিউডের ‘খিলাড়ি’ই হোক বা ‘ভাইজান’— এই অভিনেতাদের সমবয়সি অভিনেত্রীদের এখন বড়পর্দায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে এমন চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায়, যাতে বয়সের ছাপ স্পষ্ট ফুটে ওঠে।
এই ধারার সূত্রপাত বহু আগে থেকেই। নার্গিস থেকে শ্রীদেবী, শর্মিলা ঠাকুর-সহ অনেক অভিনেত্রীর এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। অন-স্ক্রিনে যে অভিনেতার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের রসায়ন গড়ে উঠেছে, সেই অভিনেতার মায়ের ভূমিকাতেও অভিনয় করেছেন তাঁরা।
বলিউডের ‘বিগ বি’-এর সঙ্গে শর্মিলা ঠাকুরের জুটি আশির দশকে বড়পর্দায় সকলের নজর কেড়েছিল। এক সঙ্গে বহু সিনেমায় দম্পতির ভূমিকায় অভিনয় করেছেন তাঁরা। ১৯৮২ সালে মুক্তি পাওয়া ‘দেশ প্রেমী’ ছবিতে অমিতাভ বচ্চন, শর্মিলা ঠাকুর, হেমা মালিনী, প্রেম চোপড়া, উত্তম কুমারের মতো বড় মাপের অভিনেতা কাজ করেছিলেন। ‘রাজু’র চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন অমিতাভ। তাঁর মায়ের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল শর্মিলা ঠাকুরকে।
এই সিনেমা মুক্তি পাওয়ার বহু বছর পর ২০০৫ সালে ‘বিরুদ্ধ’ ছবিটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। অমিতাভ ও শর্মিলা দু’জনেই তখন ৬০ বছর পার করেছেন। তখন থেকেই অমিতাভ সিনেমাতে বাবার চরিত্রে অভিনয় করা শুরু করেছেন। যেখানে শর্মিলা ১৯৮২ সালেই মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করার প্রস্তাব পেয়েছিলেন, সেখানে অমিতাভকে আরও ২৩ বছর পর অভিভাবকের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল।
১৯৭৬ সালে অমিতাভ অভিনীত ‘কভি কভি’ ছবিটি মুক্তি পায়। বলিউডের ‘ডান্সিং ডিভা’ ওয়াহিদা রহমান অমিতাভের স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। কিন্তু, অভিনেত্রী ৪০ বছরের দোরগোড়ায় পৌঁছনোর পর তাঁর কাছে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করার প্রস্তাব আসা বন্ধ হয়ে যায়।
কিন্তু ‘কভি কভি’ মুক্তি পাওয়ার দু’বছর পর থেকে অমিতাভের সঙ্গে ‘ত্রিশূল’, ‘নমক হালাল’, ‘কুলি’ সিনেমাতে কাজ করেছেন ওয়াহিদা। তিনটি ছবিতেই অমিতাভের মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি।
‘কভি কভি’ ছবিতে রাখী গুলজারকেও অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল। অমিতাভের স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি। অমিতাভ ও রাখী জুটি হিসাবে বড়পর্দায় বহু বার এসেছেন।
কিন্তু ‘শক্তি’ সিনেমায় এর ব্যতিক্রম লক্ষ করা যায়। অমিতাভের তখন ৪০ বছর বয়স। অভিনেতার থেকে বয়সে পাঁচ বছরের ছোট হয়েও অমিতাভের মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন রাখী।
রাজ কুমার, সুনীল দত্ত ও নার্গিস অভিনীত ‘মাদার ইন্ডিয়া’ ছবিটি বক্স অফিসে বিপুল সাড়া ফেলেছিল। এই ছবিতে অভিনেত্রী সুনীল দত্তের মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন।
সুনীল দত্ত পরিচালিত ও প্রযোজিত ‘ইয়াদে’ ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৬৪ সালে। অভিনেতা হিসাবে সুনীল দত্ত এই ছবিতে তাঁর অসাধারণ অভিনয় দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন। এই সিনেমার অন্তিম দৃশ্যে নার্গিসকে দেখা গিয়েছিল। অবশ্য এই ছবিতে আর মায়ের ভূমিকায় নয়, অভিনেতার স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন নার্গিস।
দক্ষিণী সিনেমাতে অভিনয় করার ক্ষেত্রেও অভিনেত্রীদের একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। বলিউডে আশি ও নব্বইয়ের দশকে সাফল্যের চূড়ায় থাকা শ্রীদেবী হিন্দি সিনেমা ছাড়াও তামিল, তেলুগু, মালয়লম, কন্নড় ছবিতে অভিনয় করেছিলেন।
১৯৭৬ সালে ‘মুন্দ্রু মুরিচু’ নামে একটি তামিল ছবি মুক্তি পায়। দক্ষিণী সিনেমাজগতের ‘থালাইভা’ রজনীকান্তও এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। ১৩ বছর বয়সি শ্রীদেবীকে রজনীকান্তের সৎ মায়ের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল। জানা যায়, এই সিনেমার শ্যুটিং চলাকালীন রজনীকান্তের বয়স ছিল ২৬ বছর।তবে, রজনীকান্ত ও শ্রীদেবীর জুটি আবার বড়পর্দায় ফিরে আসে। ১৯৮৯ সালে মুক্তি পাওয়া ‘চালবাজ’ ছবিতে অভিনেতার সঙ্গে প্রেমের মিষ্টিমধুর সম্পর্কের রসায়ন গড়ে উঠেছিল। এই ছবিতে শ্রীদেবী দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। শ্রীদেবী ও রজনীকান্ত ছাড়াও এই ছবিতে সানি দেওল, অনুপম খের, শক্তি কপূরকেও অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল।