বরিশালে বাড়ছে অবৈধ ইটভাটা, উজার হচ্ছে বনাঞ্চল
কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরির কারণে বন উজার হচ্ছে, হুমকির মুখে পড়ছে পরিবেশ
শাহ রিয়াজুল কবির, বরিশাল
পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই বাড়ছে বরিশালে ইটভাটার সংখ্যা। এসব ইটভাটায় কাঠ দিয়ে পোড়ানো হচ্ছে ইট। উজার হচ্ছে বনাঞ্চল। বিরুপ প্রভাব পড়ছে পরিবেশের উপড়।
কয়লা ব্যবহার করে ইট পোড়ানোর কথা থাকলেও নামে মাত্র কয়লা রেখে কাঠ দিয়েই ইট পোড়ানো হচ্ছে ভাটা গুলোতে। পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে এসব ইটভাটা চলে বলে অভিযোগ রয়েছে ।
বরিশাল বিভাগে বৈধ ইটভাটার সংখ্যা রয়েছে ৪৯২টি। অনিবন্ধিত ইটভাটা ২২৫টি। যারা আবেদন করেনি তারা অবৈধভাবে ইটভাটা চালালেও অবৈধ তালিকায় তাদের নাম নেই।
বরিশাল জেলার হিজলা উপজেলায় মোট ২০টি ইটভাটারয়েছে। এর মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়েছে ১৪টি। ছাড়পত্র নেয়নি ৭টি। মোট ইটভাটার মধ্যে ১৫টি জিগজ্যাগ।
অঞ্চলভিত্তিক প্রভাবশালীদের সরাসরি হস্তক্ষেপ বা স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই এসব ইটভাটা পরিবেশ ধ্বংস করে চলছে। এদের বিরুদ্ধে রহস্যজনক কারণে ব্যবস্থা গ্রহণ করে না পরিবেশ অধিদপ্তর।
বরিশালের বাকেরগঞ্জের একটি ইটভাটার মালিক হাবিবুর রহমান বলেন, কয়লায় ইট পোড়ালে ইটের দাম বেড়ে যায়। বাধ্য হয়ে কাঠ পোড়াতে হচ্ছে। ইটভাটায় পরিবেশের ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেছি। কিন্তু এক বছরেও পাইনি। এতে নানা জটিলতা রয়েছে।
বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমতপুর ইউনিয়নে আগে ১২টি ভাটা থাকলেও ২০২৩ সালে তা দাঁড়িয়েছে ২৫টি। বাকেরগঞ্জ উপজেলার কলসকাঠি ইউনিয়নে পূর্বে ২২টি ভাটা থাকলেও বর্তমানে ৩৩টি ইটভাটা হয়েছে। সেখানে প্রকাশ্যেই পোড়ানো হয় কাঠ। বরিশালের হিজলা উপজেলার একটি ইটভাটার মালিক ইয়াছিন মুন্সি বলেন, ডলার সংকটের কারণে কয়লার দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। গত বছরের শুরুতে এক মেট্রিক টন কয়লা ছিল ২২ হাজার টাকা। বর্তমানে তা প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। পরিবহন খরচসহ মূল্য দাঁড়াচ্ছে ৩২ হাজার টাকারও বেশি। কিন্তু টাকা থাকলেও কয়লা পাওয়া যাচ্ছে না।
ঝালকাঠি নলছিটি উপজেলার একটি ইটভাটার মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেই জিগজ্যাগ ইটভাটা চালাচ্ছি সব সময়। ছাড়পত্রের আবেদন আগামী মাসে জমা দেব। তিন বছর ধরে ইটভাটাটি চলছে। ঝালকাঠি রাজাপুর উপজেলার আরেক ইটভাটা মালিক অভিযোগ করেন, টাকা দিলে বৈধ এবং অবৈধর পার্থক্য থাকে না। যারা ঠিকভাবে টাকা দেয় না, তাদেরকে ইটভাটা বন্ধের জন্য নোটিশ দেওয়া হয়। কিন্তু পরে যোগাযোগ করলেই আবার সবঠিক হয়ে যায়।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) বরিশাল জেলার সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট লিংকন বাইন বলেন, কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরির কারণে বন উজার হচ্ছে। ফসলি জমি, গাছপালা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পরিবেশ মারাত্মভাবে হুমকির মুখে পড়ছে। কিন্তু ছাড়াপত্র দেওয়ার পরে তদারকির যে দায়িত্ব রয়েছে সেটা সঠিকভাবে পালন করছে না পরিবেশ দপ্তর। তিনি বলেন, ইটভাটা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। অথচ প্রতি বছরই ইটভাটার সংখ্যা বাড়ছে। তার মধ্যে জিগজ্যাগ দেখিয়ে ইটভাটার অনুমোদন নিয়ে ড্রাম-চিমনিতে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক এ, এইচ, এম, রাসেদ বলেন, আমাদের জনবল সংকট। তার মধ্যেও আমরা চেষ্টা করছি অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার। ইটভাটার সঙ্গে ক্ষমতাসীনরা জড়িত থাকতে পারে। কিন্তু কে কোন ইটভাটার সঙ্গে যুক্ত সেটা মুখ্য বিষয় নয়। ছাড়পত্র ছাড়া অবৈধভাবে ইটভাটা চালানোর সুযোগ নেই।
পরিবেশবিদদের অভিমত,এভাবে চলতে থাকলে একদিকে দেশের বনাঞ্চল গুলো উজার হবে, অপরদিকে, গ্রীন হাউজ প্রতিক্রীয়ার পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হবে, যা পরবর্তীতে প্রকৃতির মহাবির্যয়েরে কারন হিসেবে কাজ করবে।