চলতি অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়াবে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে। এছাড়া চলতি বছর মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে।
মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট বা বাংলাদেশ উন্নয়ন হালনাগাদ শীর্ষক প্রতিবেদনে এই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। ওই প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে বিশ্বব্যাংক। এতে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেক।
বিশ্বব্যাংক বলছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি কভিড-১৯ মহামারি থেকে একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেছে। কিন্তু মহামারি পরবর্তী অর্থনীতি পুনরুদ্ধার উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ক্রমাগত ব্যালেন্স অব পেমেন্টের ঘাটতি, আর্থিক খাতের দুর্বলতা এবং বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে ব্যাহত হচ্ছে।
বিশ্বব্যাংক দুই বছরের আপডেটে বলেছে, আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছর থেকে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি আবার বেড়ে ৫ দশমিক ৭ হবে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি আরও মন্থর হয়েছে বলে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, বিনিয়োগে মন্দাবস্থা তৈরি হয়েছে। ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের উচ্চ হারসহ দুর্বল নিয়ন্ত্রণের কারণে এই খাত চাপের মুখে আছে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
বিশ্বব্যাংক বলছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে অর্থনীতির সংস্কার খুব জরুরি। পাশাপাশি বিদেশি মুদ্রার একক বিনিময় হার চালু হলে দেশে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ আরও শক্তিশালী হবে। একক বিনিময় হারে মুদ্রাস্ফীতিও আরও কমবে।
বিশ্বব্যাংক আরও বলেছে, বাংলাদেশে ব্যাংক একীভূতকরণের ক্ষেত্রে আরও সতর্ক থাকা দরকার। সম্পদের মান ও সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে ব্যাংক একীভূত করা উচিত বলে মনে করে প্রতিষ্ঠানটি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতির রাশ আরও টেনে ধরা দরকার বলেও তারা অভিমত দিয়েছে।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এ উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাটি বলছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে বাংলাদেশের সাধারণ ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। যার ফলে বিনিয়োগে তারল্য সংকুচিত হয়েছে। ক্রমবর্ধমান সুদের হার, আমদানি বিধিনিষেধ এবং জ্বালানির দামের ঊর্ধ্বমুখী সংশোধনের ফলে খরচ বৃদ্ধির কারণে হ্রাস মানুষের ক্রয়ক্ষমতা আরও হ্রাস পেয়েছে।
বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের সংস্কারের পরামর্শ দিয়ে বিশ্বব্যাংক বলছে, বাংলাদেশে ব্যাংক খাতে সংস্কার জরুরী। তবে ব্যাংক মার্জারের ক্ষেত্রে খুবই সতর্ক থাকতে হবে।
এছাড়া চলতি অর্থবছর দেশে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে গেছে, ফলে বিনিয়োগের দরজা কিছুটা সংকুচিত হয়েছে। খেলাপি ঋণ এখনও অনেক বেশি। রিপোর্টিং মান, সহনশীলতা ব্যবস্থা এবং দুর্বল নিয়ন্ত্রক প্রয়োগের কারণে ব্যাংকিং সেক্টরের পরিস্থিতি আরও চাপে রয়েছে।
সংস্থাটি বলছে, বিনিময় হারের নমনীয়তা তৈরি হলে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে। কাঠামোগত সংস্কারগুলি অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যময় করতে এবং মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে স্থিতিস্থাপকতা তৈরি করতে চাবিকাঠি হবে।