নিজ দেশে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচনে ডানপন্থীদের কাছে ধরাশায়ী হয়ে আগাম জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ। বুথফেরত জরিপে মাখোঁ সমর্থিত দল বড় ব্যবধানে পিছিয়ে থাকায় দেশটির পার্লামেন্ট বিলুপ্ত ঘোষণা করেন তিনি।
মাখোঁর ঘোষণা অনুযায়ী ৩০ জুন পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। দ্বিতীয় ধাপের ভোটের জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে আগামী ৭ জুলাই।
রোববার ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য ২১টি দেশে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এ ভোটগ্রহণ শুরু হয় গত বৃহস্পতিবার। কারণ ৬-৯ জুনের মধ্যে যে কোনো দিন ভোটগ্রহণের সুযোগ ছিল সদস্য দেশগুলোর। কোনো কোনো দেশে দুদিনও ভোট নেওয়া হয়েছে।
রোববার বুথফেরত জরিপের ফল আসতে শুরু করলে দেখা যায়, সার্বিকভাবে এ নির্বাচনে ভালো করেছে ডানপন্থি দলগুলো। যদিও মধ্যপন্থি, উদার ও গ্রিন পার্টিগুলো সবাই মিলে ৭২০ আসনের এই পার্লামেন্টে ভারসাম্যপূর্ণ একটি ফল পেতে যাচ্ছে, কিন্তু ফ্রান্সে বড় ধাক্কা খায় ম্যাক্রোর দল।
বুথফেরত জরিপের বরাত দিয়ে আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্বাচনে ডানপন্থি মেরিন লে পেন প্রতিষ্ঠিত ন্যাশনাল র্যালি পেতে যাচ্ছে ৩২ শতাংশ ভোট। বর্তমানে দলটির নেতৃত্বে আছেন ২৮ বছর বয়সি জর্দান বারদেলা।
এ নির্বাচনে ম্যাক্রোর রেনেসাঁ পার্টি পেতে যাচ্ছে ১৫ শতাংশ ভোট, যা ন্যাশনাল র্যালির চেয়ে অর্ধেকেরও কম। অন্যদিকে সোশ্যালিস্টরা পেতে যাচ্ছে ১৪ শতাংশ ভোট।
বুথফেরত জরিপ প্রকাশের পর এক ভাষণে উগ্র ডানপন্থী নেতা জর্ডান বারডেলা ম্যাক্রোঁকে ফরাসি পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার আহ্বান জানান। দুই দলের ভোটের ব্যবধানকে তিনি ‘প্রেসিডেন্টের জন্য হতাশাজনক’ বলে অভিহিত করেন।
আরএন সদর দপ্তরে দেওয়া ভাষণে জর্ডান বারডেলা বলেন, বর্তমান সরকারের এই অভূতপূর্ব পরাজয় একটি চক্রের সমাপ্তি। এটি ম্যাক্রোঁ-পরবর্তী যুগের প্রথম দিন।
এমন ভাষণের এক ঘণ্টার মধ্যে ম্যাক্রোঁ জাতির উদ্দেশে ঘোষণা দেন, তিনি ফ্রান্সের নিম্নকক্ষ ভেঙে দেবেন এবং পার্লামেন্ট নির্বাচন দেবেন।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে ম্যাক্রোঁর মেয়াদ আরও তিন বছর বাকি। তিনি বলেন, আমার সিদ্ধান্তটি গুরুতর। কিন্তু এর মাধ্যমে আমাদের গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা, সার্বভৌম জনগণের মতামত প্রকাশের বিষয়টির প্রতিফলন ঘটলো। এটিকে আমি জাতির জন্য সঠিক দিকনির্দেশনা বলে মনে করি।
ম্যাক্রোঁ বলেন, আমি আপনাদের ভোটাধিকারের মাধ্যমে আপনাদের সংসদীয় ভবিষ্যতের সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাই আমি আজ সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদ ভেঙে দিচ্ছি। আমার প্রিয় দেশবাসী, আপনাদের নিজেদের ওপর আস্থা রাখুন। ফরাসি জনগণ সবচেয়ে ন্যায়সঙ্গত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রাখে।
ফরাসি ব্যবস্থার অধীনে, নিম্নকক্ষে জাতীয় পরিষদের ৫৭৭ জন সদস্য নির্বাচিত হন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য পৃথক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ সংসদীয় নির্বাচনে ম্যাক্রোঁর রেনেসাঁ পার্টিসহ এনসেম্বল জোট একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা থেকে পিছিয়ে পড়ে এবং অন্য কোথাও থেকে সহায়তা চাইতে বাধ্য হয়।
এদিকে, ম্যাক্রোঁর ঘোষণার পর ২০১৭ এবং ২০২২ সালে ফরাসি রাষ্ট্রপতি পদে ম্যাক্রোঁর বিরুদ্ধে হেরে যাওয়া মেরিন লে পেন আগাম নির্বাচনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। এই নেত্রী বর্তমানে উগ্র ডানপন্থী আরএনের পার্লামেন্টারি নেতা।