ছিলেন কোটিপতির স্ত্রী। ভাগ্যের বিপর্যয়ে এখন উব্রচালক। বাধ্য হয়ে এই পেশায় এসেছেন মেরেকেট এক মাস আগে। ইতিমধ্যে যাত্রীদের থেকে পেয়েছেন এক তকমা।
যাত্রীরা বলেন, তিনি নাকি ‘দুনিয়ার সব থেকে হট উব্রচালক’। তাঁর অ্যাপ ক্যাবে বসে হতবাক হয়ে যান যাত্রীরা। নতুন এই পেশাকেও তাই ভালবেসে ফেলেছেন ন্যানেট হ্যামন্ড লসচিয়াভো।
ন্যানেট আদতে আমেরিকার কেন্টাকির বাসিন্দা। এখন থাকেন আমেরিকার ওহায়োতে। সেখানে গত কয়েক দিন ধরে উব্র চালাচ্ছেন।
অতীতে প্লেবয় ক্লাবের বানি অর্থাৎ ওয়েট্রেস ছিলেন ন্যানেট। ছ’বার ‘প্লেবয়’ পত্রিকার প্রচ্ছদে তাঁর ছবি ছাপানো হয়েছিল।
দারুণ মডেলিংয়ের কেরিয়ার ছিল। সে সব ছেড়ে দেন ন্যানেট। বিয়ে হয় এক বিশাল বিত্তশালীর সঙ্গে। সে সময় আর পাঁচ জন ধনীর মতো প্রায়ই কসমেটিক সার্জারি করাতেন ন্যানেট।
ন্যানেট চাইতেন, তাঁকে পুতুলের মতো দেখতে লাগুক। সে কারণে তিন লক্ষ ৫০ হাজার পাউন্ড খরচ করে বহু বার শরীরের অস্ত্রোপচার করেন। ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা।
ন্যানেট আর তাঁর স্বামীর ছয় সন্তান। তাঁরা থাকতেন বিশাল এক প্রাসাদোপম বাড়িতে। প্রায় ১৭ বছর যা কিছু কিনেছেন, পার্লারে গিয়েছেন, কিছুরই বিল মেটাতে হয়নি নিজেকে। বাজারদরই ভুলে গিয়েছিলেন। সবের খরচ দিতেন ন্যানেটের প্রাক্তন স্বামী।
সেই স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর জীবনটাই বদলে যায় ন্যানেটের। বিচ্ছেদের পর স্বামীর থেকে একটা টাকাও পাননি। উল্টে আইনজীবীর ফি মেটাতে বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ হয়ে যায় ন্যানেটের। সব হারিয়ে পথে বসার অবস্থা হয়। তখনই বাঁচায় উব্র সংস্থা।
এক সময় ন্যানেটের নিজেরই ছিল চারটি বিলাসবহুল গাড়ি। গাড়ি চালাতেন চালক। বহু বছর গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে হাতই দেননি। বিচ্ছেদের পর সেই সব গাড়ি কেড়ে নেন প্রাক্তন স্বামী। একটি এক কামরার ঘরে দিন কাটাতেন তিনি। হেঁটে যাতায়াত করতেন। খুঁজতেন কাজ।
কোনও কাজই পাচ্ছিলেন না ন্যানেট। তখনই মাথায় আসে বিষয়টি। এককালে গাড়ি চালাতে খুব ভালবাসতেন তিনি। ভাবেন, সেটাই পেশা করবেন। একটি টেসলা গাড়ি ভাড়া নেন। শুরু করেন ক্যাব চালানো।
ন্যানেট একটি সাক্ষাৎকারে জানান, যবে থেকে গাড়ি চালানো শুরু করেছেন, প্রায় প্রত্যেক দিনই যাত্রীদের থেকে একটা কথা তাঁকে শুনতেই হয়। তাঁরা বলেন, ‘‘আপনি যে এত হট, ভাবতেই পারিনি।’’
বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে আসা যাত্রীদের সঙ্গে আলাপ-পরিচয় করতে বেশ লাগে ন্যানেটের। সে কথা নিজেই জানিয়েছেন। তাঁদের জীবনের গল্প শোনেন। নিজের গল্প বলেন।
ন্যানেট নিজের এক অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়েছেন। এক দিন তাঁর ক্যাবে উঠেছিলেন এক যুবক। স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন। সেই সঙ্গে বিপুল পরিমাণ খোরপোশও দিতে হয়েছে। এমনকি বসতবাড়িও হারিয়েছেন সেই যুবক।
সেই যুবকের কথা শুনে খুব কষ্ট হয়েছিল ন্যানেটের। রাত কাটানোর জায়গাও ছিল না তাঁর। ন্যানেটই তাঁকে একটি গুদামঘরে নিয়ে যান। ওই রাতে গুদামঘরেই ঘুমিয়ে পড়েন যুবক। ন্যানেটের কথায়, ‘‘একটা সময় গিয়েছে, যখন আমিও এখানেই রাত কাটাতাম।’’
সেই মহিলারা এখন খুব ভাল বন্ধু হয়ে গিয়েছেন ন্যানেটের। প্রায়ই দেখা-সাক্ষাৎ করেন তাঁরা। আড্ডা দেন। ন্যানেটের কথায়, ক্যাব চালিয়ে রোজ অনেক নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করছেন তিনি। পরবর্তী কালে পথ চলায় সাহায্য করবে তাঁকে।
সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ২০১৫ থেকে ২০১৭ সালে আমেরিকায় ক্যাব চালাতেন ২৭ শতাংশ। ক্রমে সেই সংখ্যাটা বেড়েছে। কিন্তু তা-ও যথেষ্ট নয়। ন্যানেট চান, আরও মহিলা এই পেশায় আসুন। স্বাবলম্বী হন।