প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগদান শেষে সরকারি সফরে এখন লন্ডনে অবস্থান করছেন। তিনি দেশে ফিরবেন ৪ অক্টোবর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর প্রশাসনে সচিবের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদে রদবদল হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও স্বাস্থ্যসচিবের অবসরজনিত কারণে এ রদবদলের প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে। তবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ না হলে নতুন নিয়োগকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকটি পদে নড়াচড়া হবে। এছাড়া জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগে এপিডির মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে কিছুটা বিলম্বে হলেও নতুন মুখ দেখা যাবে।
সূত্রমতে, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনের চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে ১৩ অক্টোবর। তার জন্মদিন ১৪ অক্টোবর। শুভদিনে তিনি অবসরোত্তর ছুটিতে যাবেন। এ হিসাবে শেষ কর্মদিবস হবে ছুটিতে যাওয়ার আগের দিন। তবে এখন পর্যন্ত একাধিক সূত্র জানিয়েছে, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনকে এক বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত। তবে কোনো কারণে যদি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া না হয়, সেক্ষেত্রে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী হবেন পরবর্তী নতুন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। একজন সজ্জন ও মৃদুভাষী পেশাদার আমলা হিসাবে তার যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। অবশ্য তিনি অবসরে যাবেন আরও দেড় বছর পর। বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিবও একজন শতভাগ পেশাদার আমলা হিসাবে সুপরিচিত। প্রশাসনের শীর্ষ পদে নিয়োগ পাওয়ার আগে তিনি জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ছিলেন। ২৪তম মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসাবে প্রশাসন ক্যাডারের ৮৬ ব্যাচের এ কর্মকর্তা ৩ জানুয়ারি দায়িত্ব নেন।
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদারের চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৯ অক্টোবর। বর্ণাঢ্য চাকরিজীবনের কারণে কেউ কেউ মনে করেন, শেষ মুহূর্তে তিনি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। তবে এখন পর্যন্ত শোনা যাচ্ছে কর্মরত সচিবদের মধ্য থেকে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগে সচিব নিয়োগ দেওয়া হবে। এজন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম অথবা খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ইসমাইল হোসেনকে এ মন্ত্রণালয়ে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। অবশ্য এখন পর্যন্ত সমাজকল্যাণ সচিবের নাম জোরেশোরে উচ্চারিত হচ্ছে। প্রশাসন ক্যাডারের ১১তম ব্যাচের এ কর্মকর্তা সচিব পদে পদোন্নতি পান গত বছর ১৮ মে। প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন ছাড়াও তিনি ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস)-১ হিসাবে কর্মরত ছিলেন। অপরদিকে খাদ্যসচিব ইসমাইল হোসেনও একজন চৌকশ কর্মকর্তা হিসাবে সুপরিচিত। অবশ্য তার চাকরির মেয়াদ শেষ হতে এখনো প্রায় চার বছর বাকি।
এদিকে সম্প্রতি সচিব পদে পদোন্নতি পাওয়া ১৩তম ব্যাচের মো. আব্দুর সবুর মন্ডলকে একই সময়ে নিয়োগ দেওয়া হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যিনি নিয়োগ পাবেন, তার খালি হওয়া মন্ত্রণালয়ে সবুর মন্ডলের নিয়োগ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি এখন পর্যন্ত তার পূর্বের পদে সংযুক্তি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। যদিও নিম্নপদে তার এই দায়িত্ব পালনকে প্রশাসনের বেশির ভাগ কর্মকর্তা মেনে নিতে পারেননি।
অক্টোবরের শেষদিকে অবসরে যাবেন আরও একজন সচিব। নভেম্বরে শূন্য হবে তিনজন সচিবের পদ। সব মিলিয়ে নভেম্বরের মধ্যে আরও অন্তত দু-তিন দফায় সচিব পদে রদবদল হবে।
কে হচ্ছেন এপিডি : এখন পর্যন্ত ১৫তম ব্যাচের কয়েকজন অতিরিক্ত সচিবের নাম আলোচনায় রয়েছে। তারা হলেন রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার মো. হাবিবুর রহমান; স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিকল্পনা, পরিবীক্ষণ, মূল্যায়ন ও পরিদর্শন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ডা. মো. সারোয়ার বারী; মালয়েশিয়ায় বিদেশস্থ মিশনে কর্মরত নাজমুস সা’দত সেলিম; সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন) মাহবুব আলম তালুকদার; অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (ব্যয় ব্যবস্থাপনা) মো. মফিদুর রহমান; জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মহিদুল ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক সারোয়ার আলম। যদিও সবার আগে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মো. সাবিরুল ইসলাম এবং বিমানের এমডি শফিউল আজিম ছিলেন পছন্দের শীর্ষে। কিন্তু অতীতে সব সময় ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার থেকে সচিব পদে পদোন্নতি হওয়ার নজির রয়েছে। এপিডি পদে টপডাউন পদায়ন করা হয়নি। অপরদিকে বিমানের এমডি শফিউল আজিম খুবই পেশাদার আমলা। ইতোমধ্যে তিনি বিমানের হাল শক্ত করে ধরার কারণে সেখান থেকে তাকে আনার পক্ষে নন অনেকে।
এপিডি নিয়োগের ক্ষেত্রে অতীতে কখনো এক ব্যাচ ডিঙ্গিয়ে পদায়ন করা হয়নি। এ ধারাবাহিকতায় বর্তমানে এপিডি হিসাবে রয়েছেন ১৩তম ব্যাচের কর্মকর্তা। ফলে ধারাবাহিকতা রক্ষায় এক ব্যাচ জুনিয়র ১৫তম ব্যাচ থেকেই নতুন এপিডি নিয়োগ দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। যদিও কেউ কেউ প্রত্যাশা করছিলেন ব্যাচ ভেঙে নিয়োগ দেওয়ার নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপিত হলে এপিডি উইংয়ে কর্মরত অতিরিক্ত সচিব সায়লা ফারজানার নাম থাকবে সবার শীর্ষে। তিনি বরাবরই প্রশাসনে একজন প্রভাবশালী কর্মকর্তা হিসাবে সুপরিচিত।