পেলোসির সফর, তাইওয়ানের উপর চিনের অর্থনৈতিক অবরোধ
ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অস্থিরতা ,সরব রাশিয়া
আমেরিকার হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস-এর স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফর আন্তর্জাতিক মহলে নতুন উত্তেজনার সৃষ্টি করল। এত দিন পর্যন্ত তাইওয়ানকে মাঝখানে রেখে স্নায়ুযুদ্ধ চলছিল আমেরিকা ও চিনের মধ্যে। এ বার এই বিষয়ে মুখ খুলল রাশিয়াও।
রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী বুধবার জানান, পেলোসির তাইওয়ান সফরকে মস্কো চিনকে প্ররোচিত করার ধারাবাহিক পদক্ষেপ হিসাবেই দেখছে। রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষিতে আমেরিকা-সহ পশ্চিমী বিশ্ব যখন রাশিয়াকে অর্থনৈতিক অবরোধের পথে হেঁটেছে, তখন পুতিন প্রশাসনের এই অবস্থান যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। তাইওয়ানকে শাসন করার বৈধ অধিকার যে একমাত্র চিন সরকারের রয়েছে, তা-ও জানানো হয়েছে রুশ বিদেশমন্ত্রীর তরফে জারি করা বিবৃতিতে।
এই আবহেই, তাইওয়ানের উপর অর্থনৈতিক অবরোধ জারি করেছে চিন। পেলোসির সফর নিয়ে তাইওয়ানকে সমঝে চলার হুঁশিয়ারি দিয়ে চিন সে দেশের ৩৫টি রফতানিকারক সংস্থার থেকে কেক, পেস্ট্রি ও অন্যান্য সামগ্রী আমদানি করা বন্ধ করেছে।তাই আবাসন শিল্পের জন্য প্রচুর বালির প্রয়োজন হয়। তাইওয়ান এই বালি মূলত চিন থেকে আমদানি করে থাকে। কিন্তু চিনের বাণিজ্যমন্ত্রক জানিয়ে দিয়েছে, বুধবার থেকে তাইওয়ানকে বালি রফতানি করা বন্ধ করছে তারা। তাইওয়ানের স্বাধীনতাকামী বিচ্ছিন্নতাবাদী অংশকে সমর্থন করার অভিযোগে সে দেশের দু’টি সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চলেছে জিনপিং প্রশাসন।
তাইওয়ানকে চিন তাদের নিজেদের ‘অবিচ্ছেদ্য অংশ’ বলে মনে করে। অন্য দিকে আমেরিকা আনুষ্ঠানিক ভাবে তাইওয়ান সরকারকে স্বীকৃতি না দিলেও তাদের ‘বিশেষ সহায়ক দেশ’ হিসাবে থেকেছে বরাবর। আমেরিকা অবশ্য তাদের আগের অবস্থানের কথাই বলেছে আরও এক বার। ১৯৭০ সালে চিনের অখণ্ডতাকে সম্মান ও স্বীকৃতি দেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি তারা দিয়েছিল, তা তারা রক্ষা করে চলবে বলে জানিয়েছে আমেরিকা। কিন্তু চিনের বারণ সত্ত্বেও যে ভাবে আমেরিকা তাইওয়ান প্রশ্নে ‘অতিসক্রিয়তা’ দেখাচ্ছে, তাতে ক্ষুব্ধ মাওয়ের দেশ। বাইডেনের সঙ্গে কিছু দিন আগে এক টেলি-কথোপকথনের পর চিন প্রেসিডেন্ট জিনপিং জানিয়েছিলেন, আগুন নিয়ে খেললে আমেরিকাকে তার মূল্য চোকাতে হবে। পেলোসির সফরের আগেও, চিন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলে রেখেছিল, ‘এর অভিঘাত হবে সুদূরপ্রসারী’।
চিনের হুমকিকে কার্যত উপেক্ষা করেই যে ভাবে পেলোসি তাইওয়ানের মাটি থেকে সে দেশের গণতন্ত্রের গুণগান গেয়েছেন, তার পুরস্কারস্বরূপ তাইওয়ানও তাদের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান পেলোসির হাতে তুলে দিয়েছে, তাতে তাইওয়ানের ‘অবাধ্যতা’ আর আমেরিকার ‘আগ্রাসন’ই দেখছে বেজিং। প্রত্যুত্তরে পেলোসির সফরের দিনই তাইওয়ানের আকাশে সামরিক মহড়া চালিয়েছে চিন। তাইওয়ানের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, সে দেশের প্রতিরক্ষা দফতর সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়েছে, চিন তাদের জলসীমা লঙ্ঘন করে সামরিক মহড়া চালাচ্ছে। জাপান চিনের সামরিক মহড়াকে ‘উদ্বেগজনক’ আখ্যা দিয়েছে। অবশ্য পেলোসির তাইওয়ান সফর নিয়ে মন্তব্য করা থেকে বিরত থেকেছে জাপান।
পেলোসি তাঁর এশিয়া সফরে বেরোনোর আগে বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিলেন, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় শান্তি ও সুস্থিতি বজায় রাখতেই তাঁর এই সফর। কিন্তু, আন্তর্জাতিক রাজনীতির পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, পেলোসির তাইওয়ান সফরে এই অঞ্চলে গোলযোগের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেল।