পেঁয়াজের বাজারে কারসাজির মাধ্যমে প্রতিদিন ৫০ কোটি টাকা করে গত চার মাসে ভোক্তাদের ৩ হাজার ১৭৯ কোটি ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা লোপাট করা হয়েছে বলে দাবি করেছে কনসাস কনজুমার্স সোসাইটি (সিসিএস) নামের একটি সংগঠন।
রবিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘পেঁয়াজ সিন্ডিকেটের মূল্য নৈরাজ্য’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির পক্ষ থেকে এ অভিযোগ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, চার মাসে পেঁয়াজের সিন্ডিকেট যে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে তা দিয়ে দ্বিতীয় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা সম্ভব।
ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ও গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে প্রকাশিত মূল্য তালিকা এবং নিজস্ব উৎস থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পেঁয়াজের মূল্য ধরে সংগঠনটি কারসাজি চক্রের হাতিয়ে নেয়া অর্থ বের করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক পলাশ মাহমুদ বলেন, কারসাজির মাধ্যমে দাম বাড়িয়ে জুলাইয়ে ৩৯৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকা, আগস্টে ৪৯১ কোটি ৪৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা, সেপ্টেম্বরে ৮২৫ কোটি ২৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং অক্টোবরে ১ হাজার ৪৬৪ কোটি ৯৯ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা ভোক্তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে কারসাজি চক্র।
তিনি বলেন, ‘গত দুই সপ্তাহে অকল্পনীয়হারে পেঁয়াজের মূল্য বাড়লেও মূলত চার মাস আগে পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। ঈদুল আজহার এক মাস আগে জুলাই মাসের ২ তারিখ থেকে হঠাৎ করেই পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হয়। সেই থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে ২৪ বার পেঁয়াজের মূল্য ওঠা-নামা করেছে। পেঁয়াজের মূল্যের এই ওঠা-নামার পেছনে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট কাজ করেছে।’
সরবরাহ কম ও আমদানি খরচ বৃদ্ধির অজুহাতে ভোক্তার সঙ্গে প্রতারণা করে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে এমন অভিযোগ করে পলাশ মাহমুদ বলেন, পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধির পেছনে ব্যবসায়ীরা সরবরাহ কম ও আমদানি খরচ বৃদ্ধি এই দুটি যুক্তি উপস্থান করেছেন। কিন্তু পণ্যটির মূল্যবৃদ্ধির সময়কাল লক্ষ্য করলে দেখা যায় তাদের দুটি যুক্তিই শুধুমাত্র অজুহাত ও ভোক্তার সঙ্গে প্রতারণার কৌশল। কারণ, ঈদুল আজহার এক মাস আগে কোথাও সরবরাহ ঘাটতি ছিল না এবং আমদানি খরচ বেশি ছিল না। শুধুমাত্র ঈদকে সামনে রেখে সিন্ডিকেট করে পেঁয়াজের দাম বড়ানো হয়। পরবর্তীতে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় তারা অব্যাহতভাবে দাম বাড়াতে থাকে।
তিনি বলেন, ভারত যেদিন দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দেয় তারপর দিনই পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। যদিও এক দিনের মধ্যেই বর্ধিত দামের পেঁয়াজ বাংলাদেশে আসা সম্ভব না। এমনকি বর্ধিত দামে কোন এলসিও খোলা হয়নি। ভারতের পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ এক মাস অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু দেশের বাজারে সর্বত্রই এখনও ভারতীয় পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। অর্থাৎ ব্যবসায়ীদের এই পেঁয়াজ কম দামে আগেই কেনা ছিল এবং যথেষ্ট সরবরাহ ছিল।
সংবাদ সম্মেলনে সিন্ডিকেটের হাত থেকে ভোক্তাকে মুক্ত করতে সিসিএস’র পক্ষ থেকে চারটি দাবি জানানো হয়। এগুলো হল- ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের মতো মূল্য সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো বা দ্রুত ও কার্যকর আইনি ব্যবস্থা নেয়া, দ্রুত একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত পেঁয়াজের সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারণ করে দেয়া, পেঁয়াজ ছাড়াও যে কোনো পণ্যে অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি হলে সরকার থেকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সর্বোচ্চ মূল্য ঘোষণা করা, যাতে সিন্ডিকেট করে দাম বৃদ্ধি করতে না পারে এবং পণ্য বা সেবার ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে অংশীজনদের নিয়ে ভোক্তা অধিকার অধিদফতরে একটি সেল গঠন ও সার্বক্ষণিক তদারকি করা।