২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরু হয়। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে রুশ নাগরিকদের মনোভাব বদলাচ্ছে।
শুরুর দিকের তুলনায় এখন বেশিসংখ্যক রুশ নাগরিক দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে সমর্থন দিচ্ছেন। জরিপের পাশাপাশি সাক্ষাৎকারে এ চিত্র উঠে এসেছে।
জনমত জরিপ ও সাক্ষাৎকারে দেখা গেছে, অনেক রুশ নাগরিক, যাঁরা আগে যুদ্ধের বিরোধী ছিলেন, তাঁরাও এখন ইউক্রেন প্রশ্নে পুতিনের অবস্থানকে সমর্থন করছেন। তাঁরা এখন বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন, রাশিয়াকে অবরুদ্ধ করছে পশ্চিমারা। এ অবস্থায় ইউক্রেনে হামলা করা ছাড়া রাশিয়ার অন্য কোনো উপায় ছিল না।
সম্প্রতি রাশিয়ার জরিপ প্রতিষ্ঠান লেভাদা একটি জনমত জরিপ প্রকাশ করেছে। জরিপে দেখা গেছে, এখন পুতিনের প্রতি ৮৩ শতাংশ রুশ নাগরিকের সমর্থন রয়েছে। অথচ গত জানুয়ারি মাসে তা ছিল ৬৯ শতাংশ। অর্থাৎ পুতিনের জনপ্রিয়তা অনেক বেড়েছে।
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৮১ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা ইউক্রেন যুদ্ধকে সমর্থন করেন। তাঁরা মনে করেন, ইউক্রেনের রুশভাষীদের রক্ষার প্রয়োজন রয়েছে।
ইউক্রেন সীমান্তবর্তী রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রোস্তভ-অন-দনের অধিকারকর্মী সের্গেই শালিগিন বলেন, তাঁর দুই বন্ধু শুরুতে তাঁর সঙ্গে গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন তাঁরা যুদ্ধের সমর্থক শিবিরে ভিড়েছেন। তাঁরা তাঁকে মেসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামে রুশ প্রোপাগান্ডা পোস্ট পাঠাচ্ছেন। এসব পোস্টে বলা হচ্ছে, ইউক্রেনীয় ফ্যাসিবাদীরা নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে।
শালিগিন বলেন, গৃহযুদ্ধের মতো করে এখন বিভেদরেখা টানা হচ্ছে। তিনিসহ রাশিয়ার অন্য পর্যবেক্ষকেরা সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেছেন, চলমান যুদ্ধের বেশির ভাগ সমর্থককে বিশেষভাবে উত্সাহী বলে তাঁদের মনে হয়নি।
টেলিফোনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাইবেরিয়ার একটি শহরের ব্যবসায়ী স্তানিসলাভ ব্রিকভ বলেন, যুদ্ধ খারাপ কাজ। কিন্তু রাশিয়াকে এ খারাপ কাজ করতে বাধ্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তাই রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি ঐক্য প্রকাশ করা ছাড়া রুশ নাগরিকদের কিছু করার ছিল না। যে সেনাসদস্যরা তাঁদের জীবনবাজি রেখে রাশিয়ার স্বার্থ সুরক্ষায় কাজ করছেন, তাঁদের পাশে না দাঁড়ানোটা লজ্জার বিষয় হতো।
মিখাইল নামের ৩৫ বছর বয়সী এক বন্ধুর কথা উল্লেখ করেন ব্রিকভ। তিনি বলেন, মিখাইল একসময় সরকারের সমালোচনা করতেন। কিন্তু তিনি এখন মনে করেন, সব মতবিরোধ এখন দূরে সরিয়ে রাখার সময় এটা।
মিখাইল বলেন, ‘আমাদের সীমানার বাইরে সব জায়গায় যখন আমাদের বিরুদ্ধে লোকজন সরব, তখন অন্তত এ সময়ের জন্য হলেও আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
রাশিয়ায় যাঁরা এখনো যুদ্ধের বিরোধিতা করছেন, তাঁদের ব্যাপক অপবাদ-হয়রানি-হেনস্তার মুখে পড়তে হচ্ছে। তাঁদের শত্রুপক্ষের দোসর বলে আখ্যা দেওয়া হচ্ছে।
ইউক্রেনে রুশ অভিযান শুরুর পরের সপ্তাহগুলোতে রাশিয়ায় ব্যাপক যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ হয়। এ বিক্ষোভকে কেন্দ্র দেশজুড়ে ১৫ হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখন রাশিয়ায় যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ কমে এসেছে।
সবচেয়ে বেশি বিক্ষোভ হওয়া স্থানগুলোর মধ্যে সেন্ট পিটার্সবার্গ অন্যতম। স্থানীয় বিরোধী আইনপ্রণেতা বরিস ভিশনেভস্কি বলেন, প্রথম দুই সপ্তাহে যুদ্ধ বন্ধের জন্য সম্ভাব্য সবকিছু করার অনুরোধসংবলিত প্রায় ১০০টি চিঠি পান তিনি। এ সময়ে পাওয়া মাত্র একটি চিঠিতে যুদ্ধের প্রতি সমর্থন জানানো হয়েছিল। তবে যুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আইনে পুতিন স্বাক্ষর করার পর চিঠি আসার পরিমাণ কমে গেছে।