তোশাখানা মামলায় পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং তেহরিক-ই-ইনসাফের চেয়ারম্যান ইমরান খানকে তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন ইসলামাবাদের দায়রা আদালত। এ কারণে ইমরান খান আর পিটিআইয়ের চেয়ারম্যান পদে বহাল থাকতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন সুপ্রিমকোর্টের প্রখ্যাত আইনজীবী জুলফিকার আহমদ ভুট্টো।
বর্তমানে ইমরান খানকে পাঞ্জাবের অ্যাটক কারাগারে রাখা হয়েছে। ইমরান পাকিস্তানের প্রথম সাবেক কোনো প্রধানমন্ত্রী, যাকে এই ‘কুখ্যাত’ কারাগারে রাখা হলো। তাকে তোশাখানা মামলায় তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ‘দুর্নীতিচর্চার’ অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে আদালত রায়ে উল্লেখ করেছেন। আদালত একই সঙ্গে ইমরান খানকে এক লাখ রুপি জরিমানা করেছেন। বিচারক বলেছেন, ইমরান খান নির্বাচন কমিশনে ইচ্ছাকৃতভাবে ভুয়া কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। দুর্নীতিচর্চায় তিনি দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।
পাকিস্তান নির্বাচন কমিশনের করা এ মামলায় ইমরানের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে পাওয়া উপহার রাষ্ট্রীয় তোশাখানায় জমা না দিয়ে বিক্রির অভিযোগ আনা হয়েছে।
এছাড়া পাকিস্তানের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে সক্রিয় রাজনীতিতে ৫ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যা নিয়ে জনমনে শঙ্কা দেখা দিয়েছে আগামী নির্বাচনে কি ঘটতে যাচ্ছে ইমরানের ভাগ্যে? নির্বাচনের আগে এমন প্রেক্ষাপট জন্ম দিচ্ছে নানা প্রশ্নের।
এ প্রশ্নের জবাবে দেশটির জ্যেষ্ঠ রাজনৈতিক বিশ্লেষক রাসুল বখশ রাইস বলেন, আজকের গ্রেফতারে ইমরান খানের জনপ্রিয়তা আরও বাড়বে। পিটিআই আরও শক্তিশালী হবে এবং ভোটাররা তাদের সঙ্গে আরও সম্পৃক্ত হবেন।
তবে এ ক্ষেত্রে ভিন্নমত সিনিয়র সাংবাদিক ও বিশ্লেষক সালমান ঘানির। তিনি বলছেন, মাত্র দুদিন আগে ইমরান খান এক সাক্ষাৎকারে তার বিরোধী রাজনীতিকদের ‘চোর-ডাকাত’ বলে বর্ণনা করেছিলেন। এখন আদালতের রায়ের পর তিনি নিজে একই কাতারে এসে দাঁড়িয়েছেন। বিচারিকভাবে তাকে ‘অযোগ্য’ ঘোষণা করা হয়েছে।
তিনি বলছেন, এখন আর ইমরান খান দলের নেতৃত্ব দিতে পারবেন না।
যদিও পাকিস্তানে এর আগেও প্রধানমন্ত্রীদের গ্রেফতার করা হয়েছে, কিন্তু তা সত্ত্বেও আগামীতে এর ফলে ইমরান খানের রাজনীতির পরিধি আরও সঙ্কুচিত হবে বলে মনে করেন জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক জাইঘাম খান।
তিনি বলেছেন, ইমরান খান এবং পিটিআই অতীতে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মতো একই আইনি জটিলতায় পড়েছে।
ইমরান খান নিজেও এর আগে অন্য রাজনৈতিক দলকে আইনের ফাঁদে ফেলেছেন। এখন সেই একই বিষয় ঘুরে ফিরে আবার তাদের কাছে ফিরে এসেছে।
তিনি মনে করেন, দেশটিতে যখন নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে, তখন রাজনীতিতে পিটিআইয়ের জন্য পরিস্থিতি ক্রমেই সংকুচিত হয়ে পড়ছে।
ইমরান খান ও তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) বিরুদ্ধে দেশজুড়ে ধরপাকড় ও সাঁড়াশি অভিযান চলছে। এতে পুরো পাকিস্তানই স্থবির হওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হয়েছে।
এদিকে সরকার বিবিসিকে জানিয়েছে, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের হেনস্তা করবে না তারা। কিন্তু গত শনিবার লাহোরে ইমরান খানের বাড়ির সামনে জড়ো হওয়া সমর্থকদের তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। মামলা দেওয়া হয়েছে কিনা তা স্পষ্ট নয়। জানা গেছে, সেদিন অন্তত ১০০ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়।