‘লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক। লাব্বাইক, লা শারিকা লাকা লাব্বাইক। ইন্নাল হামদা, ওয়াননি’মাতা, লাকা ওয়ালমুলক, লা শারিকা লাক…।’ এমন মধুর ধ্বনি-প্রতিধ্বনিতে পবিত্র আরাফাতের পাহাড়ঘেরা ময়দান ছাপিয়ে আকাশ-বাতাস মুখর ও প্রকম্পিত আজ। করোনা মহামারির মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো আজ সীমিত পরিসরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে পবিত্র হজ। গত বছরও হজ পালনের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা ছিল। এবারও লোকজনকে পরিপূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক পরে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই হজ পালন করতে হচ্ছে।
শনিবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে পাঁচ দিনব্যাপী হজ। গতকাল রোববার মিনায় তাঁবুতে অবস্থান করেন হাজিরা। সৃষ্টিকর্তার আনুগত্য ও পাপমুক্তির আশায় তাঁবুর নগরী মিনায় অবস্থান করে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় ও ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল ছিলেন আল্লাহর মেহমানরা।
মিনা থেকে আজ ভোরে হাজিরা পৌঁছবেন হজের মূল অনুষ্ঠানস্থল আরাফাতের ময়দানে। সেলাইবিহীন শুভ্র কাপড়ে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত এখানে সমবেত মুসলমানরা হাজিরা দেবেন।
আরাফাতের ময়দানে হজের মুল খুতবা এবং জোহর ও আসর নামাজ একসঙ্গে আদায় করবেন হাজিরা। এ ময়দানেই হয় হজের মূল কার্যক্রম। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বিদায় হজের সময় আরাফাতের ময়দানে ভাষণ দিয়েছিলেন। সেই রীতি অনুযায়ী আরাফাতের ময়দানে হজের খুতবা দেওয়া হয়।
আজ সন্ধ্যায় মুজদালিফায় গিয়ে হাজিরা আবারও মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করবেন এবং পাথর সংগ্রহ করবেন। রাতে মুজদালিফায় খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করবেন হাজিরা। আগামীকাল মঙ্গলবার ফজরের নামাজ শেষে বড় জামারায় (প্রতীকী বড় শয়তান) পাথর নিক্ষেপ করতে আবার মিনায় যাবেন তারা। শয়তানকে প্রতীকী পাথর নিক্ষেপকালে ভিড় এড়াতে নির্ধারিত দূরত্বে জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে দাঁড়িয়ে হাজিরা পাথর নিক্ষেপ করবেন।
পাথর নিক্ষেপ শেষে পশু কোরবানি দিয়ে মাথার চুল ছেঁটে (ন্যাড়া করে) গোসল করবেন। সেলাইবিহীন দুই টুকরো কাপড় বদল করবেন। এরপর স্বাভাবিক পোশাক পরে মিনা থেকে মক্কায় গিয়ে পবিত্র কাবা শরিফ সাতবার তাওয়াফ করবেন।
কাবার সামনের দুই পাহাড় সাফা ও মারওয়ায় ‘সাঈ’ (সাতবার দৌড়াবেন) করবেন। সেখান থেকে তারা আবার মিনায় যাবেন। মিনায় যতদিন থাকবেন, ততদিন তিনটি (বড়, মধ্যম, ছোট ) শয়তানকে ২১টি পাথর নিক্ষেপ করবেন। গত বছরের মতো এ বছরও সীমিত পরিসরে ও কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে সৌদি আরবে শনিবার থেকে শুরু হয়েছে পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা। এ বছরও অন্য দেশ থেকে কেউ অনুমতি পাননি হজ করার জন্য। ফলে সৌদি আরবে থাকা ১৫০টি দেশের ৬০ হাজার মানুষ এবারের হজে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। হজে অংশগ্রহণকারীদের জন্য ব্যাপক নিরাপত্তা ও সুযোগ-সুবিধা দেবে হজ ও ওমরাহ কর্তৃপক্ষ। হজে অংশগ্রহণকারীরা সহজ ও স্বাভাবিকভাবে হজ সম্পাদনে অত্যাধুনিক স্মার্টকার্ডেও বিশেষ সুযোগ-সুবিধা পাবেন।
মক্কা, আরাফা, মিনা ও মুজদালিফায় আসা-যাওয়ার সুবিধার্থে পরিবহন সেবায় প্রস্তুত রয়েছে তিন হাজার বাস। করোনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিটি বাসে ২০ জন হজযাত্রী চলাচল করবেন। লাল, সবুজ, হলুদ ও নীল রঙের চারটি বিশেষ ট্র্যাকে চলাচল করবে বাসগুলো। এ বাসগুলো হজযাত্রীদের আবাসন ও হজের রোকনগুলো আদায়ে আসা-যাওয়ায় ব্যবহূত হবে। দুই ডোজ টিকা নেওয়া প্রাপ্তবয়স্কদের এবার হজের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
যুদ্ধ ও মহামারির কারণে এর আগেও হজ সীমিত বা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি কলেরা ও প্লেগের কারণে কয়েক বছর হজে যাননি মানুষ। তবে এরপর থেকে হজে আর কখনও বড় কোনো বাধা আসেনি। বিশেষ করে প্রায় ৯০ বছর আগে সৌদি রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর প্রতিবছরই অনেকটা নির্বিঘ্নেই হজ পালিত হয়েছে।