প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগের আগামী কাউন্সিলে যদি একজন কাউন্সিলরও তাকে নেতৃত্বে না চায় তাহলে তিনি থাকবেন না। তিনি বিদায় নেয়ার জন্য প্রস্তুত আছেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে ১৮ দিনের সফর নিয়ে আজকের এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
আগামী কাউন্সিলে নেতৃত্বে নতুন কোনো চমক থাকছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের একজন কাউন্সিলরও যদি আমাকে না চায়, তাহলে আমি কোনোদিনই নেতৃত্বে থাকব না।
তিনি বলেন, যেদিন থেকে আওয়ামী লীগে আমার অবর্তমানে আমাকে প্রেসিডেন্ট করা হয়েছে তখন থেকেই আমি এই শর্ত মেনে যাচ্ছি। এটা ঠিক যে দীর্ঘদিন হয়ে যাচ্ছে। অবশ্যই আমি চাই নতুন নেতৃত্ব আসুক।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী, এই সুবর্ণজয়ন্তীতে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় পরিণত হয়েছি। এখন বিদায় নেওয়ার জন্য আমি প্রস্তুত।
র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমেরিকাই র্যাব সৃষ্টি করতে পরামর্শ দিয়েছে। আমেরিকা তাদের ট্রেনিং দেয়, তাদের অস্ত্রশস্ত্র এবং তাদের হেলিকপ্টার এমনকি, তাদের ভিজ্যুয়াল সিস্টাম, আইসিটি সিস্টেম, সবই আমেরিকার দেওয়া।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমেরিকা যখন স্যাংশন দেয় এবং কোনো কথা বলে বা অভিযোগ আনে, তাদেরকে আমার একটাই কথা, যেমন আপনারা ট্রেনিং দিয়েছেন, তেমনই তারা কার্যক্রম করেছে। এখানে আমাদের করার কী আছে?’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা কথায় কথায় গুলি করে মেরে ফেলে দেয়। ছোট্ট বাচ্চাদের গুলি করে মেরে ফেলে দেয়। খেলনা পিস্তল দিয়ে তাদের মেরে ফেলে দিল, আমাদের কতজন বাঙ্গালি মারা গিয়েছে সেখানে, কিন্তু তারা কিছু বলেনি। সে কথাগুলো আমি স্পষ্টভাবে বলেছি। আমি কিন্তু বসে থাকিনি।’
তিনি বলেন, আগামী বছর বিশ্বে দুর্যোগ ও দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে। তার মধ্যে আমাদের দেশ দুর্যোগপূর্ণ। সেজন্য কোনো জায়গা ও জলাশয় যেন খালি না থাকে। আমরা খাদ্য সংকট মেটাতে কৃষিখাতে বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। এ জন্য সকল প্রস্তুতি নিচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘ অধিবেশনে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ সব সভায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে। সামগ্রিক বিবেচনায় এবারের অধিবেশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ অত্যন্ত সফল।
তিনি বলেন, বিশ্ব শান্তি অর্জনে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ, সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ, প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিশ্ব নেতাদেরকে আহ্বান জানিয়েছি।
এ ছাড়া প্রযুক্তির ব্যবহারে সবার ন্যায্য ও সমান সুযোগ সৃষ্টি এবং ক্রমবর্ধমান প্রযুক্তিগত বিভাজন দূর করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে বলেও জানান শেখ হাসিনা।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রীয় সফরে লন্ডনে যান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে তিনি রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় এবং রাজা তৃতীয় চার্লস আয়োজিত সিংহাসনে আরোহণ অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এরপর নিউ ইয়র্কের উদ্দেশে ১৯ সেপ্টেম্বর লন্ডন ত্যাগ করেন।
যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে শেখ হাসিনা গত ২৩ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৭তম অধিবেশনে ভাষণ দেন এবং এর ফাঁকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। স্থানীয় সময় ২৪ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় সড়কপথে নিউ ইয়র্ক থেকে ওয়াশিংটন ডিসিতে যান প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীরা।
প্রধানমন্ত্রী গত রবিবার দেশের উদ্দেশে যাত্রা করেন। এরপর লন্ডনে দুই ঘণ্টার যাত্রাবিরতি দিয়ে সোমবার দিবাগত রাত ১টায় দেশে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। এই দীর্ঘ সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন প্রধানমন্ত্রী।