স্রোতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অবশেষে মাওয়া প্রান্তের ৪ ও ৫ নম্বর খুঁটির ওপর বসল পদ্মা সেতুর ৩২তম স্প্যান। রোববার সকাল ১০টার দিকে ক্রেনবাহী ভাসমান জাহাজ ‘তিয়ান-ই’ ক্রেনের সাহায্যে স্প্যানটি খুঁটির ওপর বসিয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামোর ৪ হাজার ৮০০ মিটার দৃশ্যমান হয়ে ওঠে।
পদ্মা সেতুর (মূল সেতু) নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মো. আবদুল কাদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
শনিবার দিনভর দফায় দফায় চেষ্টার পর প্রচণ্ড স্রোতের কারণে স্প্যান বসানোর কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছিল। গত ১০ জুন জাজিরা প্রান্তের ২৫ ও ২৬ নম্বর খুঁটির ওপর বসানো হয়েছিল ৩১তম স্প্যান।
আগস্ট-সেপ্টেম্বরে ৫টি স্প্যান খুঁটির ওপর বসানোর লক্ষ্য থাকলেও মাওয়া প্রান্তের মূল পদ্মায় প্রচণ্ড স্রোত থাকায় ৯ অক্টোবর পর্যন্ত একটি স্প্যানও বসানো সম্ভব হয়নি। তবে বন্যার পানি কমে যাওয়ার সঙ্গে স্রোতের তীব্রতা স্বাভাবিক গতিতে ফিরে আসায় পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজের গতি ফিরেছে। এরই অংশ হিসেবে শনিবার মাওয়া প্রান্তের ৪ ও ৫ নম্বর খুঁটির ওপর পদ্মা সেতুর ৩২তম স্প্যান বসানোর কাজ শুরু হয়। তবে স্রোতের কারণে শনিবার কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব না হলেও রোববার সকালে স্প্যানটি সফলভাবে খুঁটির ওপর বসানো হয়।
মূল সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মো. আবদুল কাদের জানান, কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে ৫টি স্প্যান শতভাগ প্রস্তুুত রয়েছে। এর মধ্যে ৩টি স্প্যান স্টক ইয়ার্ডে রাখা হয়েছে। দীর্ঘ অপেক্ষার পর রোববার মাওয়া প্রান্তের ৪ ও ৫ নম্বর খুঁটির ওপর ৩২তম স্প্যান বসানো হয়েছে।
পদ্মা সেতুর দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা জানান, বর্তমান সময় পর্যন্ত মূল সেতুতে ৪২টি খুঁটির ওপর ৪১টি স্প্যান বসানোর কথা ছিল। তবে করোনাভাইরাসের পর পদ্মার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় এবং নদীতে প্রচণ্ড স্রোত থাকায় পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজের গতিতে ভাটা পড়ে। রোববার ৩২টি স্প্যান বসানো হয়ে গেছে। বাকি ৯টি স্প্যান মাওয়া প্রান্তের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে রয়েছে। প্রস্তুুত রয়েছে আরও ৪টি স্প্যান। সেতুর ১ ও ২ নম্বর খুঁটির ওপর ‘ওয়ান-এ’ স্প্যান, ২ ও ৩ নম্বর খুঁটির ওপর ‘ওয়ান-বি’ স্প্যান, ৩ ও ৪ নম্বর খুঁটির ওপর ‘ওয়ান-সি’ স্প্যান বসানো হবে, যা পুরোপুরি প্রস্তুুত রয়েছে। আগামী ২০ অক্টোবর ৩ ও ৪ নম্বর খুঁটির ওপর বসানো হবে ৩৩তম স্প্যান।
করোনাভাইরাসের পর পদ্মার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ও প্রচণ্ড স্রোতের কারণে থেমে ছিল পদ্মা সেতুর কাজের গতি। ফলে কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে ৫টি স্প্যান শতভাগ প্রস্তুুত রেখে অপেক্ষার প্রহর গুনছিল প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের দ্বিতল পদ্মা সেতুতে সব মিলিয়ে ৪২টি খুঁটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে মাওয়া প্রান্তে ২১টি ও জাজিরা প্রান্তে ২১টি। আর ৪২টি খুঁটির ওপর বসবে ৪১টি স্প্যান। এর মধ্যে ৪০টি খুঁটি থাকবে পানিতে আর ২টি ডাঙায়। ডাঙায় থাকা দু’টি খুঁটি সংযোগ সড়কের সঙ্গে মূল সেতুকে যুক্ত করবে। ৬টি মডিউলে বিভক্ত থাকবে পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে এক হাজার ৪৭৮ মিটার ভায়াডাক্ট বা ঝুলন্ত পথ ও জাজিরা প্রান্তে থাকবে এক হাজার ৬৭০ মিটার।
বর্তমান সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, নিজস্ব অর্থায়নে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পদ্মা সেতুর পুরোটাই নির্মিত হবে স্টিল ও কংক্রিট স্ট্রাকচারে। সেতুর ওপরে থাকবে কংক্রিটের ঢালাইয়ের চাল লেনের মহাসড়ক, আর তার নিচ দিয়ে যাবে রেললাইন।