আবারও শুরু হয়েছে পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণের কাজ। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে নেওয়া প্রকল্পের বর্তমান কাজ চলছে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে। ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) প্রত্যাহারের পর প্রকল্পের বাকি কাজ পরিচালনার জন্য সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৫৮৪ কোটি ৪৬ লাখ ১৮ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রথম সংশোধনীসহ প্রকল্পটি সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি-একনেকের অনুমোদন পেয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণে প্রকল্পটিতে সংশোধনী আনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে— প্রকল্পে ভারতীয় ক্রেডিট লাইন (এলওসি) প্রত্যাহার, জমির মূল্য বৃদ্ধি, দরপত্রে রেট শিডিউল পরিবর্তনের কারণে নির্মাণ ও পূর্ত কাজ, আসবাবপত্রের ব্যয় বৃদ্ধি, বাজার দর অনুযায়ী চিকিৎসা যন্ত্রপাতির মূল্য অন্তর্ভুক্তি এবং প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্পের আওতায় ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল ভবন, ছাত্র-ছাত্রী হোস্টেল, ইন্টারনি ডাক্তার ডরমিটরি, ডাক্তার ডরমিটরি ইত্যাদি নির্মিত হয়েছে এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের কিছু স্থাপনা ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে ভারতীয় এলওসি’র আওতাধীন যন্ত্রপাতি বা আসবাবপত্র সংগ্রহ ও বৈদ্যুতিক কাজ না হওয়ায় সৃষ্ট সুবিধাগুলো সম্পূর্ণভাবে ব্যবহার করা যাচ্ছে না। তাই জরুরিভিত্তিতে প্রকল্পটি সংশোধন প্রয়োজন।
কমিশন আরও জানিয়েছে, প্রকল্পের ভৌত বা নির্মাণ কাজসহ সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে প্রায় ৭৭ ভাগ। বাকি কাজ শেষ করতেই প্রকল্পে সংশোধনী প্রয়োজন। ১ম সংশোধিত প্রস্তাবে প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর বাড়িয়ে জুন ২০২৩ পর্যন্ত নির্ধারণের প্রস্তাব করা হলেও প্রকল্পের অবশিষ্ট কাজ ওই সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না বলে প্রকল্পের মেয়াদ জুন ২০২৪ পর্যন্ত বাড়ানোর জন্য স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ প্রস্তাব করেছে।
জানা গেছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে স্বাস্থ্য অধিদফতর। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পটির অনুকূলে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৮৪ কোটি ৪৬ লাখ ১৮ হাজার টাকা। পটুয়াখালী জেলার সদর উপজেলায় স্থাপিতব্য মেডিক্যাল কলেজটিতে মানসম্পন্ন চিকিৎসক তৈরি করে দেশের স্বাস্থ্য খাতে জনবলের চাহিদা পূরণ করবে। একই সঙ্গে পটুয়াখালী ও পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোর জনসাধারণকে উন্নতমানের সাধারণ ও বিশেষায়িত চিকিৎসা সেবা প্রদানের মাধ্যমে মানব স্বাস্থ্যের উন্নতি সাধনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
প্রকল্পের আওতায় ৪ দশমিক ৮৭ একর ভূমি অধিগ্রহণ করে ১৪টি হাসপাতাল ও আবাসিক ভবন, ১৫টি (একাডেমিক ভবনসহ) অনাবাসিক ভবন বা স্থাপনা ও অন্যান্য পূর্তকাজ করা হবে। প্রকল্পের আওতায় কলেজের জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা যন্ত্রপাতি, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি, আসবাবপত্র, চিকিৎসা ও শল্য চিকিৎসা সরঞ্জামাদি ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি কেনা হবে।
কমিশন জানিয়েছে, প্রকল্পটি চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (আরএডিপি)-তে ৫১ কোটি (রাজস্ব ১ কোটি ২ ও মূলধন ৫০ কোটি) টাকা বরাদ্দসহ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
একনেকের অনুমোদন পাওয়ার যৌক্তিকতা তুলে ধরে পরিকল্পনা কমিশনের মতামতে বলা হয়েছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে চিকিৎসক ও অন্যান্য পেশার লোকদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র প্রসারিত হবে। প্রকল্পের ভৌত-নির্মাণ কাজসহ সার্বিক অগ্রগতি প্রায় ৭৭ ভাগ।
পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন, ভারতীয় এলওসি (লাইন অব ক্রেডিট) প্রত্যাহারের বিষয়টি প্রকল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। এটি দুদেশের সরকারের মধ্যকার বিষয়। তবে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পটির বাকি কাজ সম্পন্ন হবে। এর ফলে মেডিক্যাল কলেজটিতে মানসম্পন্ন চিকিৎসক তৈরি করে দেশের স্বাস্থ্য খাতে জনবলের চাহিদা পূরণ করবে। একই সঙ্গে পটুয়াখালী ও পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোর জনসাধারণকে উন্নতমানের সাধারণ ও বিশেষায়িত চিকিৎসা সেবা প্রদানের মাধ্যমে মানবস্বাস্থ্যের উন্নতি সাধনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।