যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ঘোষণা দিয়েছেন, ইসরায়েলের নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চাওয়া ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টের প্রসিকিউটরদের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞা জারির বিষয়ে যে আলোচনা শুরু হয়েছে, সেই বিষয়ে তিনি মার্কিন আইনপ্রণেতাদের সাথে একত্রে কাজ করবেন।
বুধবার ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে এই ইঙ্গিত দেন তিনি।
কংগ্রেসের এক শুনানিতে ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘সম্পূর্ণ ভুল এই সিদ্ধান্তের’ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তিনি ‘প্রতিজ্ঞাবদ্ধ’।
তার এই ঘোষণা এলো এমন সময় যখন আইসিসি কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির জন্য রিপাবলিকানদের চাপ বাড়ছে। খুব তাড়াতাড়ি, হয়তো এই সপ্তাহে এ বিষয়ে ভোট হতে পারে।
গাজায় গণহত্যা ইস্যুতে গত এপ্রিলে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুসহ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পরিকল্পনা জানায় আইসিসি। সে সময়ই এর বিরোধিতা করে সরব হয় ইসরাইল। একই সঙ্গে ইসরাইলের হয়ে প্রতিক্রিয়া জানায় মিত্র দেশ যুক্তরাষ্ট্রও।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রধান আইনজীবী করিম খানকে হুঁশিয়ার করে চিঠিও দেন ১২ মার্কিন রিপাবলিকান সিনেটর। তবে এসবের তোয়াক্কা না করে সোমবার যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির জন্য আইসিসিতে আবেদন করেন প্রধান আইনজীবী করিম খান।
হামাসের তিন কর্মকর্তা গাজার নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার, হামাসের কাশেম ব্রিগেড মিলিটারি উইংয়ের কমান্ডার মোহাম্মদ দাইফ এবং হামাসের পলিটিকেল ব্যুরোর প্রধান ইসমাইল হানিয়াহর বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চেয়েছেন করিম খান।
সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আবেদন করাটা ‘আপত্তিকর’। তিনি আরও বলেন, ‘ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে কোনও সমতা নেই’।
ইসরায়েলের গাজা যুদ্ধ পরিচালনার বিষয়ে এই আদালতের তদন্তের পরিধি বাড়ায় কংগ্রেসে আইসিসির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের অন্তত দুইটা কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। এই মাসের শুরুতে টেক্সাসের রিপাবলিকান চিপ রায়ের উত্থাপন করা একটি বিলের সমর্থনে ক্যাপিটাল হিলে এর সমর্থন বাড়তে শুরু করে।
সেই বিলে বলা হয়েছে, আইসিসির যেসব কর্মকর্তা এই মামলার সাথে জড়িত, তাদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে বাধা দেওয়া হবে। যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে তাদের যে কোনো ভিসা প্রত্যাহার এবং দেশের ভেতরে তাদের যে কোন সম্পত্তি লেনদেনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে। এটা অব্যাহত থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সুরক্ষিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার না করে।
রিপাবলিকান হাউসের অন্তত ৩৭ জন আইন প্রণেতা এই প্রস্তাব সমর্থন করেছেন। এদের মধ্যে রিপাবলিকান চেম্বারের তৃতীয় সর্বোচ্চ র্যাঙ্কিংয়ের এলিস স্টেফানিকও রয়েছেন। স্টেফানিক নতুন করে ইসরায়েল সফর করেছেন। সেখানে নেতানিয়াহুর সাথে সাক্ষাৎ করেছেন, নেসেটে বক্তব্য দিয়েছেন এবং গাজায় বন্দিদের পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেছেন।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে তিনি বলেছেন, ‘গণহত্যাকারী সন্ত্রাসী গোষ্ঠির বিরুদ্ধে নিজের অস্তিত্ব রক্ষায় এই আদালত একটি শান্তিপূর্ণ জাতিকে তিরষ্কার করেছে।’
এই বিলটি সমর্থনকারী আরেকজন রিপাবলিকান কেন্টাকির অ্যান্ডি বার বলেছেন, ‘ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আইসিসির এই মামলাটি আরও বেশি লক্ষ্য রাখতে হবে, এটাকে নিষেধাজ্ঞা দিতে পরিপূর্ণভাবে কাজ করতে হবে।’
যদিও ডেমোক্রেটিক আইন প্রণেতারা এই প্রচেষ্টার পেছনে থাকবেন কিনা তা স্পষ্ট নয়।