সুস্থ হয়ে যাবেন নেইমার। গোড়ালির লিগামেন্টে চোট পাওয়া নেইমার ঠিক কবে নাগাদ ফিট হয়ে মাঠে নামতে পারবেন- তার উত্তর দেননি কিংবা দিতে চাননি লাসমার। বলেছেন, সোমবার সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে হয়তো নেইমার খেলতে পারবেন না। নেইমার ছাড়াও সেদিন রাইটব্যাক দানিলোরও বাঁ পায়ের গোড়ালিতে চোট লেগেছে।
২ ডিসেম্বর পর্যন্ত গ্রুপ পর্বের বাকি দুটি ম্যাচ সুইজারল্যান্ড আর ক্যামেরুনের বিপক্ষে নেইমার আর দানিলোর শূন্যস্থানে কোন দুটি নাম বসাবেন কোচ তিতে? হাতে থাকা ভিনিসিয়ুস জুনিয়রই হতে পারেন তিতের সেরা অপশন।
রিয়াল মাদ্রিদের এই উইঙ্গার ড্রিবলিং আর বল কেরিয়ারে নেইমারের কাছাকাছি। তবে তিনি ক্লাব ফুটবলে লেফট উইংয়েই বেশি খেলে থাকেন। দ্বিতীয় অপশন অবশ্যই রদ্রিগো। রিয়াল মাদ্রিদের এই ফরোয়ার্ড যে কোনো পজিশন থেকে খুব সহজেই অ্যাটাকে যেতে পারেন। তৃতীয় অপশন গ্যাব্রিয়েল মার্তিনেল। আর্সেনালের এই ফরোয়ার্ডের মধ্যে নেইমারের অনেক ছাপ রয়েছে। এ ছাড়া রাফিনহা, অ্যান্থনি, জেসুস, ফ্রেড রয়েছেন তিতের হাতে।
বিশ্বকাপ যে নেইমারের জন্য কাঁটা ঝোপ, সেটি তো তাঁর ভাগ্যলিপিতেই লেখা। প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডাররা তাঁকে ঘিরে ধরবেন, তিনি বল মাথার ওপর দিয়ে ট্রিক করে নিতে চাইবেন এবং তারপর বিশ্রী ট্যাকলে পড়ে গিয়ে যা তা অবস্থা! গেল দুই বিশ্বকাপ থেকেই তো একই চিত্রনাট্য, তাই এবার এসব ভেবেই স্কোয়াড তৈরি করে নিয়ে এসেছেন তিতে। তার পরও সেলেকাওদের মধ্যে নেইমার হলেন অক্সিজেনের মতো। ড্রেসিংরুমে তাঁর হাসিঠাট্টা, অনুশীলনে তাঁর খুনসুটি, মাঠে গোল করার পর তাঁর ড্যান্স- এসবই প্রেরণা দেয় গোটা দলকে। সেই হাসিমুখটাই যখন হাসপাতালের রুমে, তখন কাল বিকেলে অনুশীলন পর্বই বাদ দিয়েছে ব্রাজিল।
২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপেও নেইমারের পড়ে যাওয়ার ছবিটিই সবার সামনে ভেসে আসে আগে। ডান পায়ের গোড়ালির চোট পরের বছর কোপা থেকেও নেইমারকে দূরে রেখেছে। ব্রাজিলিয়ান সাংবাদিকরাই বলাবলি করছিলেন, গত বছর বাঁ পায়ের গোড়ালির চোট সারতে নেইমারের সময় লেগেছিল ১০ সপ্তাহ। পিএসজির হয়ে খেলতে পারেননি তিনি তিন মাস। তাহলে এবারও কি তেমনই চোটে পড়েছেন নেইমার? তাহলে তো গ্রুপ পর্বই শুধু নয়, বিশ্বকাপের বাকিটাও আর খেলা হবে না তাঁর।
নেইমারের ছিটকে যাওয়ার খবর মানেই প্রতিপক্ষকে মানসিকভাবে এগিয়ে রাখা এবং ব্রাজিল দলেরও মানসিকভাবে ভেঙে পড়া। হয়তো সেই কৌশলগত কারণেই নেইমারের চোটের আসল অবস্থা লুকিয়ে রাখতে চাইছেন তিতে। গোড়ালির ছোটখাটো চোট থাকলে ১০ দিনের মধ্যে ফিট হয়ে মাঠে নামা যায়, এর বেশি হলে অন্তত তিন মাস।
আগের দিন নেইমার তাঁর ইনস্টাগ্রামে যে আবেগঘন বার্তা লিখেছেন, সেখানেও কিন্তু মানসিকভাবে প্রচণ্ড ভেঙে পড়ার সুর। ‘কখনও কারও খারাপ চাইনি, প্রয়োজনে কাউকে সাহায্য করেছি। কিন্তু আজ আমার এই অবস্থা। আমি চোটে পড়েছি, ভীষণ কষ্ট পাচ্ছি। তবে আমার বিশ্বাস রয়েছে যে আবার আমি মাঠে ফিরব। এই জার্সিটা আমার গর্ব, আমি ভালোবাসি এই জার্সি পরতে। ঈশ্বর যদি আমাকে কখনও বলে আমি কোথায় জন্মগ্রহণ করতে চাই, আমি বলব অবশ্যই ব্রাজিল।’ নেইমারের এই পোস্ট নিয়ে নাকি ব্রাজিলের ফেসবুক দেয়ালে কেউ কেউ ট্রল করছে। সেখানকার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেইমার এখন বাংলাদেশ ক্রিকেটের বিশ্বকাপ খেলা ‘নাজমুল হোসেন শান্ত’!
কাতারে আসা সাও পাওলোর এক টেলিভিশন সাংবাদিক তাঁর ফেসবুক থেকে নেইমারকে নিয়ে কিছু মিম এবং তাঁর সঙ্গে ব্যাঙ্গাত্মক কিছু পোস্ট দেখাচ্ছিলেন, যা চোখ এড়ায়নি ব্রাজিলের ড্রেসিংরুমেরও। নিজ দেশের সমর্থকদের উদ্দেশেই তাই পাল্টা একটি পোস্ট দিয়েছেন রাফিনহা। তিনি লিখেছেন, ‘আর্জেন্টিনার সমর্থকরা মেসিকে ঈশ্বরের মতো মনে করে। পর্তুগালের ভক্তরা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে রাজা মনে করে। আর ব্রাজিলের সমর্থকরা প্রত্যাশা করে যেন নেইমারের পা ভেঙে যায়। নেইমারের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় ভুল, সে ব্রাজিলে জন্মেছে। এই দেশ তাঁর প্রতিভার মূল্য দিতে পারেনি।’