The news is by your side.

নিউক্লিয়ার ক্লাবের ৩৩তম সদস্য বাংলাদেশ

ইউরেনিয়াম জ্বালানির যুগে বাংলাদেশ, নতুন ইতিহাস

0 130

 

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের জন্য রাশিয়া থেকে ‘ফ্রেশ নিউক্লিয়ার ফুয়েল’ বা ইউরেনিয়াম আনা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় আনুষ্ঠানিকভাবে এই ইউরেনিয়াম হস্তান্তর করা হবে। অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকবেন আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি।

ইউরেনিয়াম হস্তান্তর প্রক্রিয়ার যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে কর্তৃপক্ষ। ঐতিহাসিক এই কমিশনিংয়ের মধ্য দিয়ে ইউরেনিয়াম জ্বালানির যুগে প্রবেশ করবে বাংলাদেশ, গড়বে নতুন ইতিহাস। ইউরেনিয়াম হস্তান্তর অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে এরইমধ্যে রূপপুরে এসেছে উচ্চপর্যায়ের রুশ প্রতিনিধি দল। প্রকল্প এলাকায় অবস্থান করছেন মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমানসহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের শীর্ষ কর্মকর্তারা।

প্রকল্প কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের কাছে এই ইউরেনিয়াম আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করবেন রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক সংস্থা রোসাটমের মহাপরিচালক আলেস্কি লিখাচেভ। রাশিয়া থেকে আসা ইউরেনিয়াম শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে পৌঁছেছে।

বুধবার (৪ অক্টোবর) প্রকল্প পরিদর্শনে এসে প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের সামগ্রিক কাজের প্রায় ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। দ্বিতীয় ইউনিটের কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৭০ শতাংশ। তবে প্রকল্পের কাজ যেভাবে এগিয়েছে, সেভাবে এগোয়নি সঞ্চালন লাইনের কাজ। গ্রিড লাইন নির্মাণে সকল মন্ত্রণালয় কাজ করছে, বিষয়টি কো-অর্ডিনেট করছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।

তিনি জানান, নিউক্লিয়ার জ্বালানি আসার পরই রূপপুর পারমাণবিক স্থাপনা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। বাংলাদেশ এখন নিউক্লিয়ার ক্লাবের ৩৩তম সদস্য হতে যাচ্ছে। আগামী বছরের সেপ্টেম্বরে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হবে। এর প্রায় ১০ মাস পর বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যাবে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বলেন, ২০২৫ সালের শুরুতে রূপপুর থেকে বিদ্যুৎ পাবে দেশের জনগণ। সঞ্চালন লাইনসহ অন্যান্য অবকাঠামো তৈরি হওয়ার পরই পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হবে। উত্তরবঙ্গের পিছিয়ে পড়া জনগণ এই প্রকল্প থেকে উপকৃত হবে। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি জিডিপিতে ২ শতাংশ অবদান রাখবে।

বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে রাশিয়া থেকে ইউরেনিয়াম আসার মধ্য দিয়ে পারমাণবিক স্থাপনার স্বীকৃতি পেয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল এটোমিক এনার্জি কমিশনের (আইএইএ) গর্ভনিং বডির সদস্য নির্বাচিত হয়েছে।

একটি নিউক্লিয়ার প্লান্ট নির্মাণে সাধারণত ১২-১৫ বছর সময় লাগে উল্লেখ করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বলেন, সেই বিবেচনায় মাত্র ৭-৮ বছরের মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ একটা মাইলফলক। এটি সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাধ্যমে।

পুরো প্রকল্প ও গ্রিনসিটি আবাসিক এলাকায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। ইউরেনিয়াম হস্তান্তর অনুষ্ঠানকে ঘিরে উৎসবের সাজে সেজেছে ঈশ্বরদীর রূপপুর এলাকা। পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিভিন্ন রঙের পতাকা শোভা পাচ্ছে। গ্রিনসিটি আবাসিকের সামনের প্রাচীরে রঙিন চিত্রকর্ম নজর কাড়ছে সবার।

একদিকে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা, অন্যদিকে সাজসাজ রব। সব মিলিয়ে রূপপুর যেন স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে ভিন্ন এক জায়গা। তবে ঐতিহাসিক এই মুহূর্তের সাক্ষী হতে এখানকার মানুষ উন্মুখ হয়ে আছেন।

প্রকল্প সূত্র জানায়, প্রকল্পে কর্মরত রাশিয়ানসহ বিদেশি নাগরিকরা গ্রিনসিটি আবাসনে থাকেন। গ্রিনসিটির ভেতরে তাদের জন্য নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এই আয়োজন চলবে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত।

১৯৬১ সালে রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও গতি পায় ২০০৮ সালের পরে। তখন নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে আওয়ামী লীগ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করে। ২০০৯ সালে দলটি ক্ষমতায় আসলে দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। তিনি প্রকল্পটি বাস্তবায়নে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করেন।

২০১৩ সালের অক্টোবরে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয় নিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে প্রকল্পটির নির্মাণকাজ এগিয়ে নেয়। ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর ১ হাজার ৬২ একর জমির ওপর প্রকল্পের পূর্ণোদ্দমে কাজ শুরু হয়। ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে দুটি ইউনিট রয়েছে। প্রকল্পের আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতা করছে রাশিয়া। প্রকল্পটির নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে, নির্ধারিত সময়ে চালু করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

২০২৪ সালের মার্চে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করার কথা রয়েছে। আর দ্বিতীয় ইউনিটেও ২০২৫ সালের মাঝামাঝি সমপরিমাণ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু আশা করা হচ্ছে। প্রকল্পটির উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত হবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.