তসলিমা নাসরিন
আমার একটা ছেলেমানুষী ব্যাপার আছে। এটিকে আমি দূর হ দূর হ করে তাড়ালেও নিঃশব্দে উড়ে এসে ঠিকই বসে কোথাও। এটির কোনও যুক্তি নেই, তারপরও লুকিয়ে চুরিয়ে আনাচে কানাচে রয়ে যায়। ব্যাপারটি এরকমঃ মুসলিম মৌলবাদি চরমপন্থী জিহাদিদের বিরুদ্ধে সিনেমা বানানো, বই লেখা, ভাষণ দেওয়া, রাস্তায় নামা, আন্দোলন করা — এই কাজগুলো কোনও মুসলমান নামের লোক করলে আমি কী রকম যেন স্বস্তি পাই।
ঠিক একইভাবে, ইহুদি/খ্রিস্টান/হিন্দু/বৌদ্ধ উগ্র মৌলবাদী কট্টরপন্থীদের বিরুদ্ধে সিনেমা বানানো, বই লেখা, ভাষণ দেওয়া, রাস্তায় নামা, আন্দোলন করা—এই কাজগুলো কোনও ইহুদি/খ্রিস্টান/হিন্দু/বৌদ্ধ নামের লোক করলে আমি কী রকম যেন স্বস্তি পাই।
এই আবেগের কোনও অর্থ নেই। যে কোনও সম্প্রদায় থেকে আসা যে কোনও মানুষই মানববাদি হতে পারে। তবুও।
সত্যি কথা বলতে, নাস্তিক না হলে সব রকম ধর্মীয় অনাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করা যায় না। আস্তিকদের মধ্যে নিজের ধর্মকে ভালো বলা, অন্য ধর্মকে মন্দ বলার প্রবণতা বেশি। তাদের পক্ষে ধর্ম নিরপেক্ষ হওয়া বা সব ধর্মের বর্বরতাগুলোর বিরুদ্ধে সমান ভাবে প্রতিবাদ করা সম্ভব হয় না।
একমাত্র খাঁটি নাস্তিকদের পক্ষেই তা সম্ভব। ইহুদি/খ্রিস্টান/হিন্দু/বৌদ্ধ পরিবারে জন্ম নিয়ে যে মানুষ আপাদমস্তক নাস্তিক হয়েছে, সে করুক ইহুদি/খ্রিস্টান/হিন্দু/বৌদ্ধ ধর্মের পাশাপাশি ইসলামের সমালোচনা। মুসলিম পরিবারে জন্ম নিয়ে যে মানুষ আপাদমস্তক নাস্তিক হয়েছে সে করুক ইসলামের পাশাপাশি অন্য ধর্মের সমালোচনা। এতে আমার অস্বস্তি হয় না।