নারীরা পেলব ফুলের মতো, তাঁরা পরিচারিকা নন। এমনই মন্তব্য করলেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মগুরু আলি খামেনেই! খামেনেইয়ের মন্তব্যের জেরে শুরু হয়েছে সমালোচনা। কারণ, মুখে মহিলাদের মর্যাদার কথা বললেও বাস্তবে তাঁরই দেশে বিধিনিষেধের বেড়াজাল ভাঙার নিত্য চেষ্টা করে যেতে হচ্ছে মেয়েদের।
বুধবার খামেনেই বলেন, ‘‘মেয়েরা নরম ফুলের মতো। তাঁরা পরিচারিকা নন। ফুলের যেমন যত্ন নেওয়া উচিত, যাতে সে সতেজতা ও সুগন্ধ ছড়াতে পারে, তেমনই ঘরে মহিলাদেরও যত্ন করা উচিত।’’ এখানেই শেষ নয়, বৃহস্পতিবার সমাজে নারী-পুরুষের লিঙ্গভিত্তিক ভূমিকা নিয়েও অবস্থান স্পষ্ট করেন ধর্মগুরু। তিনি বলেন, ‘‘পরিবারে নারী ও পুরুষের আলাদা আলাদা ভূমিকা রয়েছে। পুরুষেরা সংসারের খরচ সামলান, নারী সামলান ঘর। তাঁরা সন্তানের জন্ম দেন। দু’জন দুই পৃথক পরিসরে অবদান রাখেন। এই দুইয়ের তুলনা চলে না।’’ এই দুই মন্তব্যের পরেই বিতর্কে জড়িয়েছেন খামেনেই। প্রশ্ন উঠেছে নারীর লিঙ্গভিত্তিক ভূমিকা নির্দিষ্ট করে দেওয়া নিয়েও।
ইরানে মেয়েদের জন্য কড়া হিজাববিধি চালু রয়েছে। সে দেশের প্রাক্তন ধর্মগুরু আয়াতোল্লা খোমেইনি এই নিয়ম চালু করেন। বর্তমান ধর্মগুরু আলি খামেনেইয়ের আমলেও এই পোশাক-ফতোয়ার অন্যথা হয়নি। ইরানে মেয়েদের আবশ্যিক ভাবে মাথা ঢেকে রাখতে হয় হিজাবে। নিয়ম না-মানলে কড়া শাস্তির বিধান রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ হয়েছে এই ফতোয়ার বিরুদ্ধে। কিন্তু লাভ হয়নি। প্রতি বারই কড়া হাতে বিক্ষোভ দমন করেছে ইরানের প্রশাসন। ২০২২ সালে হিজাব না-পরার ‘অপরাধে’ ২২ বছর বয়সি মাহ্সা আমিনিকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল ইরানের নীতি পুলিশ। হেফাজতে মৃত্যু হয় তাঁর। সেই ঘটনাকে ঘিরে তোলপা়ড় শুরু হয়ে যায় বিশ্ব জুড়ে। তাতেও বিধিনিষেধ তো কমেইনি, বরং আরও কড়া হয়েছে হিজাব আইন। মাসখানেক আগে এই হিজাববিধির প্রতিবাদে তেহরানের এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী প্রকাশ্যে অন্তর্বাস পরে হেঁটেছিলেন। তাঁকেও আটক করে নিয়ে যায় নীতি পুলিশ। চলতি সপ্তাহেই কাঁধ-অনাবৃত পোশাক পরে মঞ্চে ওঠার জন্য গ্রেফতার হয়েছেন ইরানের এক গায়িকা। তার মাঝে খামেনেইয়ের মন্তব্যে নতুন করে শুরু হয়েছে সমালোচনা।