তসলিমা নাসরিন
গত পরশু কতটা ওজন ছিল আমার, কতটা কমিয়েছি কদিনে তা লিখে একটি ছবি পোস্ট করেছি সেদিনের, একটি রেস্টুরেন্টে ডিনার শেষে ছবিটি তোলা, সঙ্গে এক বন্ধু ছিল। এর মধ্যে বেশ কয়েকদিন আমি কমেন্ট বক্স পাবলিক করেছি। তো সেই পোস্টে কমেন্ট খোলা পেয়ে জি হা দিরা ঝাঁপিয়ে পড়লো অন্য দিনের মতোই। মূলত মাদ্রাসার ছাত্র আর শিক্ষকরাই কমেন্ট করেছে। কমেন্টগুলো সবই সেক্স বিষয়ক, কজনের সঙ্গে সেক্স হচ্ছে, কতবার হচ্ছে, কার বীর্য কেমন, আমাকে পেলে কেউ বলছে খুন করবে, কেউ বলছে সেক্স করবে। বন্ধুটিকে ইঙ্গিত করে অজস্র নোংরা শব্দ আর হায়েনার হাসি।
সেই সব কমেন্ট পড়লেই সম্যক ধারণা হয় বাংলাদেশের মাদ্রাসাগুলো ছাত্রদের মাথায় কী ঢালছে, আর শিক্ষকদের মানসিকতাই বা কী, বা জি হা দিদের ওয়াজ শুনে শুনে ধার্মিক জনগণই বা কতটুকু কী হয়েছে।
এরা বেড়ে উঠেছে প্রচণ্ড নারীবিদ্বেষ নিয়ে, এরা অবাধে খুন ধর্ষণ জালিয়াতি বদমাইশি অনায় অত্যাচার করে যাচ্ছে মাথায় টুপি পরে আর মুখ ভর্তি দাড়ি রেখে আর নামতার মতো আল্লাহ রসুল মুখস্ত করে। এই লিঙ্গপালগুলোর মস্তিস্কে ধর্ষণ কিলবিল করে, এদের মুখে কৎসিত গালি ছাড়া কিছু নেই, এরা মেয়েদের যৌনবস্তু ছাড়া আর কিছু মনে করে না, এরা আল্লাহ রসুলের প্রেমে উন্মাদের মতো লাফায় আর মুক্তচিন্তকদের টুকরো টুকরো করে কোপানোর, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নির্যাতন করার, আর মেয়েদের ধর্ষণ করার লাইসেন্স আদায় করে সমাজের কাজ থেকে। এরা নামাজ রোজা করে শুধুই বেহেস্তে যাওয়ার জন্য, বেহেস্তে ৭২ হুরীর সঙ্গে অনন্তকাল সঙ্গম করবে বলে। এদের জীবনে আর কোনও উদ্দেশ্য নেই। এরা মানবতা, উদারতা, সমতা, সমানাধিকার, সভ্যতা, সৌন্দর্য, শিল্প সংস্কৃতি, বিজ্ঞান দর্শন সম্পর্কে কিছু জানে না।
এই অশিক্ষিত অসভ্য ধর্ষক খুনীদের সংখ্যা এত দ্রুত বাড়ছে যে আমার আশংকা বাংলাদেশ ক্রমে ক্রমে এদেরই দেশ হয়ে উঠবে। যারা মুক্তচিন্তায় বিশ্বাস করে, গণতন্ত্রে, এবং বাক স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে, তারা যেন তেন প্রকারে ইউরোপ আমেরিকায় পাকাপাকিভাবে বাস করার জন্য দেশ ছাড়ছে, আর যারা দেশ ছাড়তে পারছে না, তারা ভয়ে মুখ বন্ধ করে বসে আছে। বাংলাদেশের নাম পাল্টে রসুলের সৈনিকেরা একদিন জি হা দিস্থান রাখলে অবাক হবো না। সুরা আল বাকারা যদি এদের জাতীয় সঙ্গীত হয় অবাক হবো না।