গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান তাঁর নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। এতে তিনি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সিটিজেন চার্টার বা নাগরিক সনদ ব্যবস্থা প্রবর্তনের প্রতিশ্রুতি দেন। এছাড়া সিটি করপোরেশনের প্রতিটি বিভাগকে দুর্নীতিমুক্ত রেখে সার্বিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার কথা বলেছেন। ‘জনতার মুখোমুখি’ অনুষ্ঠান আয়োজন করে মহানগর ও ওয়ার্ডভিত্তিক সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেবেন বলে জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, নগরের উন্নয়নে পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে পরামর্শক কমিটি বা নগর উন্নয়ন সমন্বয় কমিটি গঠন, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে তাদের পরামর্শ ও সুপারিশের ভিত্তিতে সিটি করপোরেশনের উন্নয়নমূলক বিভিন্ন প্রকল্প প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় গাজীপুরে প্রকৌশলী ভবনে তিনি ইশতেহার ঘোষণা করেন। তিনি জানান, সিটি করপোরেশনের অনিয়ম ও দুর্নীতি দূর করে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে চান। সিটি করপোরেশনকে উন্নয়নের মডেল বানাতে চান তিনি। ইশতেহারে তিনি উল্লেখ করেছেন, সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে রাস্তা, ড্রেন, কালভার্ট, ব্রিজসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি সেবামূলক খাতগুলোকে আরও শক্তিশালী করে সেবার মান নিশ্চিত করতে এক বছর, দুই বছর ও পাঁচ বছর মেয়াদে পরিকল্পনা গ্রহণ করবেন।
প্রশাসনের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, সিটি মাস্টারপ্ল্যান এবং জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করে গাজীপুর সিটি করপোরেশনকে সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত একটি সমৃদ্ধ নগরী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার ঘোষণা দেন ইশতেহারে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার যে যাত্রা শুরু করেছেন তার সঙ্গে সংগতি রেখে আধুনিক মহানগর ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনি কাজ করবেন বলে জানান।
সেবার মান বাড়াতে অভিজ্ঞ নগরবিদ ও প্রকৌশলীদের সমন্বয়ে বিশ্বমানের একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করে জনগণের সেবা নিশ্চিত করা হবে বলে জানান। হোল্ডিং ট্যাক্স, ট্রেড লাইসেন্স, নাগরিক সনদসহ বিভিন্ন সনদের ফি, ইউটিলিটি বিল ইত্যাদি অনলাইনের মাধ্যমে পরিশোধের ব্যবস্থা, ওয়ার্ডগুলোকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা ও ফ্রি ওয়াই-ফাই জোন করার উদ্যোগ গ্রহণের কথা উল্লেখ করেছেন ইশতেহারে।
নগরের পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়নে সরকারি ও বেসরকারি সেবাদানকারী স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহায়তা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় করে সব নাগরিকদের সুপেয় পানি প্রাপ্যতা নিশ্চিত, নগরীর জলাবদ্ধতা দূর করতে বৃষ্টির পানি দ্রুত নেমে যাওয়ার জন্য ‘জিআইএস’ পদ্ধতি অবলম্বন করে সার্ভের মাধ্যমে ড্রেন ও খালগুলো অবৈধ দখলমুক্ত করে প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে উপযোগী করে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান।
প্রতিবন্ধী নাগরিক এবং নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের জন্য পর্যাপ্ত আধুনিক পাবলিক টয়লেট নির্মাণের আশ্বাস দেন। গুরুত্ব বিবেচনায় সড়ক উন্নয়ন এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিশিষ্টজনদের নামে রাস্তার নামকরণ ও নির্মাণকাজের গুণগতমান নিরীক্ষার জন্য শক্তিশালী মনিটরিং টিম গঠনের কথা বলেন ইশতেহারে।
তিনি জানান, শিক্ষার মান উন্নয়নে প্রয়োজনে জিসিসি’র অধীনে কারিগরি ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হবে। নগরীতে অবস্থিত স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও এতিমখানায় সাহায্য দেওয়া হবে। এছাড়া অনাথ, গরিব, যোগ্যতাসম্পন্ন মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাবৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থার কথা বলেন। সিটি করপোরেশনের নিজস্ব পাঠাগার আধুনিকীকরণ, নতুন পাঠাগার প্রতিষ্ঠা এবং ব্যক্তি ও বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত পাঠাগারগুলোকে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেন।
ও সাংস্কৃতিক উৎসবের আয়োজন করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ইশতেহারে।
ফুটবল ও ক্রিকেট খেলার জন্য উপযুক্ত মাঠ তৈরি, মেয়র গোল্ডকাপ ফুটবল ও ক্রিকেট প্রতিযোগিতার উদ্যোগ গ্রহণ এবং কারাতে, সাঁতারসহ বিভিন্ন খেলার উন্নয়নে পদক্ষেপ গ্রহণ, গাজীপুরে অবস্থিত প্রেসক্লাবের উন্নয়ন ও সংবাদকর্মীদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও পেশাগত দায়িত্ব পালনে যেন হয়রানির শিকার না হন, সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন ইশতেহারে।
প্রতিটি ওয়ার্ডে ঈদগাহ ও কবরস্থান নির্মাণ, শ্মশানগুলোর উন্নয়ন ও নির্মাণ, নগরীর উপযুক্ত স্থানে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের জন্য সমাধিক্ষেত্র তৈরি করার উদ্যোগ গ্রহণ, আলেম-মাশায়েখসহ সব ধর্মীয় নেতাদের সহযোগিতা ও পরামর্শ নিয়ে মসজিদ, মাদরাসা, মন্দির, গির্জায় সহায়তা প্রদান করা হবে বলে জানান ইশতেহারে।