স্বচ্ছ ভারত অভিযান- লোগোয় মহাত্মা গান্ধীর চশমাকে কাজে লাগিয়ে বা সাবরমতী আশ্রমে চরকায় সুতো কেটে এত দিন নরেন্দ্র মোদী বারবারই দাবি করেছেন, তিনি জাতির জনকের দেখানো পথেই চলছেন। কংগ্রেস নেতৃত্ব নয়, তিনিই মহাত্মা গান্ধীর প্রকৃত উত্তরসূরি।
সেই মোদী দাবি করলেন, গত আট বছরে তাঁর সরকার যে সমস্ত কাজ করেছে, যে সব সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে নেতাজির আদর্শ, স্বপ্নের ছাপ রয়েছে। জওহরলাল নেহরু তথা কংগ্রেসের দিকে ইঙ্গিত করে তাঁর অভিযোগ, স্বাধীনতার পরে নেতাজিকে ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। নেতাজির পথে চললে ভারত অনেক উঁচুতে পৌঁছতে পারত। তিনি এখন সেই পথেই চলছেন বলে বার্তা দিয়েছেন মোদী।
ইন্ডিয়া গেট থেকে রাইসিনা হিল পর্যন্ত রাজপথ ও তার দু’পাশের এলাকা— সেন্ট্রাল ভিস্টা ঢেলে সাজানোর পরে আজ প্রধানমন্ত্রী তার উদ্বোধন করেছেন। রাজপথের নাম বদলে করেছেন ‘কর্তব্য পথ’।
সেই সঙ্গে ইন্ডিয়া গেটের সামনে ছত্রিতে নেতাজির ২৮ ফুট উঁচু মূর্তির আবরণ উন্মোচন করে মোদী বলেছেন, ‘‘নেতাজি সুভাষবাবু ভারতের ঐতিহ্য নিয়ে গর্ব করতেন। আধুনিক ভারত নির্মাণের চেষ্টা করতেন। স্বাধীনতার পরে সুভাষবাবুর পথে চলার চেষ্টা করলে অনেকখানি উচ্চতায় পৌঁছতে পারত। দুর্ভাগ্য হল, এই মহান নায়ককে ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে।’’ নেতাজিকে ‘অখণ্ড ভারতের প্রথম প্রধান’ বলেও উল্লেখ করেছেন মোদী।
ব্রিটিশদের তৈরি কিংসওয়ে-র নামই স্বাধীনতার পরে রাজপথ হয়। দিল্লির সংসদ ভবন থেকে নর্থ ব্লক, সাউথ ব্লক বা কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রকে পৌঁছতে হলে রাজপথ ছুঁয়েই যেতে হয়। আজ প্রধানমন্ত্রী যুক্তি দিয়েছেন, কর্তব্য পথ ধরে সাংসদরা সংসদে গেলে বা সরকারি দফতরে গেলে কর্তব্যবোধ থেকে কাজ করতে অনুপ্রাণিত হবেন। প্রধানমন্ত্রীর দাবি, গোলামির প্রতীক রাজপথ ইতিহাস থেকে মুছে গেল। শুধু তার উপরের সাজসজ্জা নয়, আত্মাও বদলে গেল।
আন্দামানের দ্বীপের নাম বদলে, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের ঠিকানা রেস কোর্স রোড থেকে বদলে লোক কল্যাণ মার্গ করে, ‘বিটিং দ্য রিট্রিট’ অনুষ্ঠানে ভারতীয় বাদ্যযন্ত্র ও দেশভক্তি গানের সুর বাজিয়ে, নৌসেনার পতাকার নকশা বদলে তিনি গোলামির চিহ্ন মুছে ফেলারই কাজ করেছেন বলে প্রধানমন্ত্রী মনে করিয়ে দিয়েছেন। বিরোধী নেতাদের কটাক্ষ, মোদীকে দেখে মনে হচ্ছে, তিনিই সবেমাত্র দেশ স্বাধীন করে গোলামির চিহ্ন মোছার কাজ শুরু করেছেন!
২৩ জানুয়ারির বদলে কেন ৮ সেপ্টেম্বর ইন্ডিয়া গেটের সামনে নেতাজির মূর্তি উদ্বোধন হল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। কংগ্রেসের দাবি, রাহুল গান্ধীর ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ থেকে নজর ঘোরাতেই এই দিনটি বেছে নেওয়া। ‘কর্তব্য পথ’ নামকরণ অনুষ্ঠানে বলা হয়েছে, ভাদ্র মাসের শুক্লা ত্রয়োদশীর দিন বলে এটি অনুষ্ঠানের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। নেতাজির মূর্তিকে ঘিরে তিন দিন ধরে তাঁর জীবনযাত্রার প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।