নক্ষত্র পতন। না ফেরার গন্তব্যে পাড়ি জমিয়েছেন শ্রদ্ধেয় কামাল লোহানী।
স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসতেন। স্বপ্ন দেখেছিলেন বাঙালির স্বতন্ত্র জাতিসত্ত্বার। বাংলাদেশের স্বাধীনতার।
স্বপ্ন বাস্তবায়নে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে সামনের সারিতে ছিলেন কামাল লোহানী। বাঙালি রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান ও একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ। জীবনকে মৃত্যুর কাছে জিম্মি রেখে লড়েছেন কখনো সামনে থেকে, কখনওবা নেপথ্যে থেকে। নেতৃত্ব দিয়েছেন প্রগতির মিছিলে।
একটি বৈষম্যহীন জাতিরাষ্ট্র বিনির্মাণ ছিল কামাল লোহানীর আজন্ম লালিত স্বপ্ন। যে স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে তিনি পথ হেঁটেছেন দৃপ্ত পদক্ষেপে।
তার আজন্ম লালিত স্বপ্ন বেঁচে রইল; শুধু তিনি চলে গেলেন এমন এক গন্তব্যে যেখান থেকে কেউ কোনদিন আর ফিরে আসে না।
শনিবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে রাজধানীর মহাখালীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুস ও কিডনির জটিলতা ছাড়াও হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন ৮৬ বছর বয়সী প্রবীণ এ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব।
১৮ মে ফুসফুস ও কিডনির জটিলতা নিয়ে কামাল লোহানীকে রাজধানীর পান্থপথের হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ১৭ জুন সকালে তাকে একই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
দৈনিক মিল্লাত পত্রিকা দিয়ে সাংবাদিকতার হাতেখড়ি কামাল লোহানীর। এর পর আজাদ, সংবাদ, পূর্বদেশ, দৈনিক বার্তায় গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেছেন। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি পদে ছিলেন তিনি।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে দুবার মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন এই বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব।
উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি হিসেবে এবং ছায়ানটের সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। কামাল লোহানী উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটেরও উপদেষ্টা।
একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক, বরেণ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল লোহানী- এর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দু:খ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, কামাল লোহানী বাঙালির ভাষা আন্দোলন, স্বাধিকার ও স্বাধীনতা সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। একজন আদর্শবান ও গুণী মানুষ হিসেবে মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা প্রতিষ্ঠা এবং দেশের সংস্কৃতি বিকাশের আন্দোলনে পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা একজন প্রগতিশীল ব্যক্তিত্ব এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনার অসাধারণ যোদ্ধাকে হারালাম।
প্রধানমন্ত্রী মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।