দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেট আসছে। থাকছে নানা চ্যালেঞ্জ। যার মধ্যে অন্যতম মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। আগামী অর্থবছরে সম্ভাব্য বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৭ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা। নতুন করে আরও ১১ লাখ মানুষকে সামাজিক সুরক্ষায় আওতায় আনার পরিকল্পনা করছে সরকার। তবে আয় ব্যয়ের হিসেবে ঘাটতি থাকবে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা।
আগামী অর্থবছর সামনে রেখে রাজধানীর হাতিরঝিলে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের কাছে প্রশ্ন ছিল, বাজেট বলতে তারা কী বোঝেন? বাজেটে তাদের প্রত্যাশাই বা কী? এমন প্রশ্নে বেশিরভাগের উত্তর, জিনিসপত্রের দাম কম থাকলে সংসারের বাজেটে আয় ব্যয়ে ঘাটতি থাকবে না তাদের।
একজন রিকশা চালক বলেন, রিক্সা চালিয়ে আমি আমার ঘরের বাজেটের যোগান দেই। খাওয়া-দাওয়া, কাপড়-চোপড় কিনে সব সমান সমান। ছোট্ট শিশু কোলে এক নারী বলেন, মাসে ১০ হাজার টাকা বাজেট। সংসারে বেশ টানাটানি। এদিকে একজন তরুণ বলেন, সব শ্রেণিপেশার মানুষ যদি এ থেকে সুবিধা নিতে পারে, তাহলে সবাই উপকৃত হবে।
আগামী অর্থবছরের সম্ভাব্য বাজেট তথ্য বলছে, আয় ব্যয়ের হিসাবে ৬ লাখ ৭৭ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকার বাজেটে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা ঘাটতি থেকে যাবে। উন্নয়ন বাজেটে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা ব্যয় হবে। ভর্তুকী ও প্রণোদনাতে সরকার ৭২ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা খরচ করতে চায়। ব্যয় মেটাতে রাজস্ব থেকে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা আয়ের। সাড়ে সাত শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরেই পরিকল্পনা করছে সরকার। বাজার দামের ঊর্ধ্বগতির মধ্যেও মূল্যস্ফীতি ধরে রাখতে চায় সাড়ে ৫ শতাংশের মধ্যে।
এদিকে অর্থনীতি সচল রাখতে ব্যবসাবান্ধব বাজেটের দাবি করেন ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতির (এফবিসিসিআই) পরিচালক মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, যেহেতু আমি করোনা থেকে মাত্র উঠে আসলাম, এখন পর্যন্ত আমি সেখানেই দাঁড়াতে পারছি না। এরপর যদি আরেকটি বড় ধরনের চাপ আসে, তাহলে সকল বিষয়েই একটি বড় ধরনের প্রভাব পড়বে।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) পরিচালক মো. খসরু চৌধুরী বলেন, বিশ্বে একধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে এটি মাথায় রাখতে হবে। সেই সঙ্গে আমাদের ব্যবসা যাতে ধসে না পড়ে, আমাদের ব্যবসা যাতে বন্ধ হয়ে না যায়, সেদিকে মাথায় রেখে বাজেট করলে আমাদের সবার জন্য ভালো হবে।
অপরদিকে করোনার ধাক্কা কাটিয়ে বৈশ্বিক অর্থনীতির টানাপোড়েনের মধ্যে সতর্ক নীতির পরামর্শ বিশ্লেষকদের। তাদের মতে, এই মুহূর্তে অপ্রয়োজনীয় কোনো ব্যয় করা যাবে না। সবই করতে হবে জনকল্যাণে। অর্থনীতিবিদ ড. এম আবু ইউসুফ বলেন, সাধারণ মানুষ যেহেতু চাপের মধ্যে আছে, সেহেতু কীভাবে তাদের একটু সহায়তা দেয়ার যায়, সেবিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। অন্যদিকে ব্যয়টা কীভাবে সাশ্রয়ী করা যায় সেটি ভাবতে হবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এ বাজেট বাস্তবায়ন যেন গুণগত মান সম্পন্ন হয়। অপচয় যেন রোধ করা হয়।