পশ্চিমা গণমাধ্যমকে আবারও একহাত নিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান।
শুক্রবার এক নির্বাচনি সভায় ভাষণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, তুরস্কের ভাগ্য নির্ধারণ করবেন তুর্কি জনগণ, পশ্চিমারা আমাদের ভাগ্য বদলাতে পারবে না। খবর আনাদোালুর।
১৪ মে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনের আগে পশ্চিমা গণমাধ্যম এরদোগানবিরোধী প্রচারণায় সরব হয়ে ওঠে।
এরদোগান জনসভায় প্রশ্ন রাখেন— কীভাবে পশ্চিমা তাদের পত্রিকার বা ম্যাগাজিনের কভার পেজ হেডিং করে ‘এরদোগান মাস্ট গো’? এটা তুরস্কের নাগরিকদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ। জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রের পত্রিকাগুলো যেন আদাজল খেয়ে আমার পিছু লেগেছে।
ইস্তানবুলে শুক্রবার এক জনসভায় এসব কথা বলেন এরদোগান। ব্রিটিশ সাপ্তাহিক ইকোনোমিস্ট কভার পেজে হেডিং করে— ‘সেভ ডেমোক্রেসি’, ‘এরদোগান মাস্ট গো’ ও ‘ভোট’।
ফরাসি পত্রিকা লা পয়েন্ট এবং লা এক্সপ্রেস ম্যাগাজিনেও একই ধরনের এরদোগানবিরোধী খবর ও মতামত ছাপা হয়।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এরদোগানের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী কামাল কিলিচদারোগ্লু। তিনি ন্যাটো সদস্যভুক্ত তুরস্ককে আরও পশ্চিমাপন্থি আর গণতান্ত্রিক অবস্থানের দিকে ফিরিয়ে আনতে চান।
দেশে সংসদীয় ও প্রধানমন্ত্রী ব্যবস্থায় ফিরিয়ে আনা আর স্বাধীন আদালত ও একটি উন্মুক্ত গণমাধ্যম ব্যবস্থা গঠনের প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
কামালের অভিযোগ, এরদোগানকে নির্বাচনে জয়ী করতে কাজ করছে রাশিয়া। তুরস্কের নির্বাচনকে প্রভাবিত করছেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন।
মতাদর্শের দিক থেকে দুই প্রেসিডেন্টে প্রার্থীর অবস্থানও পুরোপুরি উল্টো। ২০ বছরেরও বেশি সময় ক্ষমতায় থাকার পর প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগানের এবারের নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি একটি শক্তিশালী, বহুপাক্ষিক তুরস্ক গঠন ও ৬০ লাখ কর্মসংস্থান তৈরি করা। এরদোগানের অভিযোগ, তাকে ক্ষমতা থেকে নামানোর চেষ্টা করছেন পশ্চিমারা।
তুরস্কের তেপাভ থিংক ট্যাংকের সদস্য সেলিম কোরু বলেন, নির্বাচনে এরদোগান জয়ী হলে খুব বেশি পরিবর্তন আসবে না তুরস্কে। কারণ তার ক্ষমতা ইতোমধ্যে এত বিস্তৃত যে তিনি সেগুলোকে আরও বাড়ানোর চেষ্টা করবেন। তিনি বিশ্বাস করেন, ক্ষমতায় থাকলে এরদোগান ন্যাটো ত্যাগ করবেন না। তবে তিনি তুরস্ককে পশ্চিম থেকে দূরে সরিয়ে রাখবেন। কিন্তু কিলিচদারোগ্লু প্রেসিডেন্ট ব্যবস্থাকে বাতিল করতে চান। আর রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক ছাড়াই একজন ‘নিরপেক্ষ’ নেতা হতে চান।
কিলিচদারোগ্লু ও তার জোট নেতারা আশ্বাস দিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট পদ ও সংসদে জয়ী হলে তুরস্কের অর্থনীতিকে তিনি অর্থোডক্স অর্থনৈতিক নীতিতে প্রত্যাবর্তন করবেন। একটি স্বাধীন কেন্দ্রীয় ব্যাংকেরও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। আরও বলেছেন, তিনি ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ মূল্যস্ফীতি ৩০ শতাংশে নামিয়ে আনবেন, যা পরে আরও কমতে থাকবে।
তুরস্ক পশ্চিমের ন্যাটো প্রতিরক্ষামূলক জোটের অংশ। তবে এরদোগান প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করতে চেয়েছেন। রুশ এস-৪০০ বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থাও কিনেছেন। আর রাশিয়ার-নির্মিত একটি পারমাণবিক কেন্দ্র উদ্বোধন করেছেন।
ইতোমধ্যে তার প্রতিপক্ষ ও তার মিত্ররা ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদানের প্রক্রিয়ায় ফিরে আসতে চায়। আর রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তুরস্কের সামরিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে চায়।